Advertisement
E-Paper

ঋতুবন্ধ নিয়ে এত চিন্তা কেন? সমস্যাটা আসলে কোথায়? শরীর ঠিক রাখার নানা উপায় বললেন চিকিৎসকেরা

ঋতুবন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়, সে কারণে শরীরে নানা বদল আসে। ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হয়, বাতের ব্যথা ভোগায়, ঘন ঘন মেজাজও বদলে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩৩
Fitness tips for women during and after menopause

ঋতুবন্ধের পরে কী কী বদল আসে শরীরে, কী ভাবে সুস্থ থাকবেন? ছবি: ফ্রিপিক।

ভারতীয় মহিলাদের ঋতুবন্ধের সময় ধরা হয় মোটামুটি ৪৪ থেকে ৫৫ বছর। এই সময়টাতেই শারীরিক ও মানসিক নানা বদল আসে মেয়েদের। অনেকেরই চিন্তা থাকে, ঋতুবন্ধ চলাকালীন অথবা এর পরে কী ভাবে শরীর সুস্থ রাখা যায়। কারণ, ঋতুবন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়, সে কারণে শরীরে নানা বদল আসে। ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হয়, বাতের ব্যথা ভোগায়, ঘন ঘন মেজাজও বদলে যায়। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঋতুবন্ধের সময়ে ও পরে যদি যাপন-পদ্ধতিতে কিছু বদল আনা যায়, তা হলেই আর তেমন কোনও সমস্যা থাকে না।

ঋতুবন্ধের পরে সমস্যাটা কী হয়?

ঋতুবন্ধের নামে এই যে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হয়, তার আসল কারণটা কী? ঋতুবন্ধের পরবর্তী সময়ে শরীর কী ভাবে ঠিক রাখা যায়, সে নিয়েই চর্চা হয় বেশি। এর কারণ আর কিছুই নয়, হরমোনের তারতম্য। মেয়েদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা, প্রজননতন্ত্রের কার্যক্ষমতা-সহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ইস্ট্রোজেন। বলা যেতে পারে, এই হরমোনটিই মহিলাদের সুরক্ষাকবচ। এর জন্যই মহিলাদের হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি পুরুষদের থেকে কম। রক্তচাপের ওঠানামাও নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু ঋতুবন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ কমে আসা। ভারতীয় মহিলাদের ৪৭ বছরের পর থেকে ঋতুবন্ধ চলাকালীন বা ঋতুবন্ধের সময় এগিয়ে এলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য শুরু হয়। তাই সেই সময় থেকেই জটিলতা বাড়ে। সে কারণেই চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের শরীরে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হয়, অস্ট্রিয়োআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে, এমনকি চেহারাও মেদবহুল হয়ে ওঠে অনেকেরই। ত্বকের টান টান ভাব নষ্ট হয়, বলিরেখাও পড়তে থাকে। চেহারায় বুড়োটে ভাব চলে আসে।

ঋতুবন্ধের আগে পরে স্ক্রিনিং জরুরি

চল্লিশ থেকেই মহিলাদের স্ক্রিনিং শুরু হলে কার কী সমস্যা রয়েছে, ঋতুবন্ধের পরে কোনটা বাড়তে পারে, তা নিয়ে আগাম সতর্ক থাকা যায়। এই বিষয়ে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ও রিজেনারেটিভ মেডিসিন নিয়ে কর্মরত মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বললেন, “চল্লিশের পর থেকেই মহিলাদের ক্যালশিয়াম খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করা জরুরি। অস্টিয়োপোরেসিসের ঝুঁকি কমাতে পারে ক্যালশিয়াম। তা ছাড়া, হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেশিয়ামও ডায়েটে থাকা খুব জরুরি। ঋতুবন্ধের পরে পেশিতে টান ধরা, ক্লান্তি, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি হয় মহিলাদের। তাই পেশি ও স্নায়ুর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি ম্যাগনেশিয়াম।”

ছেলেদের ৩০-৩৫ বছরেও ব্রেনস্ট্রোক হয়, কিন্তু মেয়েদের এই ঝুঁকি কম। এর কারণই হল ইস্ট্রোজেন, এমনটাই বলছেন মল্লিনাথ। তাঁর কথায়, হরমোনে নিঃসরণ যখনই কমতে থাকবে, তখনই হার্টের রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়বে। তাই পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি আবার পুরুষদের থেকে অনেক বেশি। সে কারণেই আগে থেকে স্ক্রিনিং করিয়ে নিলে বোঝা যাবে, ঋতুবন্ধের পরে হার্টের সমস্যা হতে পারে কি না অথবা অন্য কোনও জটিল রোগের ঝুঁকি আছে কি না। আগাম সতর্ক হলে চিকিৎসাও সঠিক ভাবে হতে পারবে।

কোন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রাখতে হবে?

১) ঋতুবন্ধের পর ক্যানসার স্ক্রিনিং করানো দরকার। তাতে দ্রুত রোগ চিহ্নিত করা যায়। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ইউরোলজিস্ট কুমার গৌর বলছেন, “চল্লিশের পরে সব মহিলারই ক্যানসার স্ক্রিনিং করিয়ে রাখা ভাল। কার জন্য কোন টেস্ট জরুরি, তা চিকিৎসকই বলতে পারবেন।”

২) পেলভিক পরীক্ষা করালে ভাল। মহিলাদের যোনি, জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বাশয়ে কোনও রকম সংক্রমণ থাকলে তা বোঝা যাবে।

৩) ঋতুবন্ধের পর প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা করানো দরকার।

কী কী নিয়ম মানবেন?

খাওয়াদাওয়া

● সুষম ডায়েট খুব জরুরি। মল্লিনাথের কথায়, পঞ্চাশের পরে মহিলাদের দিনে ১২০০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালশিয়াম খেতেই হবে। কেবল সাপ্লিমেন্ট থেকে নয়, খাবার থেকেও তা শরীরে ঢোকা জরুরি। তার জন্য দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, যেমন পনির, ছানা বেশি করে খেতে হবে। দুধে অ্যালার্জি থাকলে সবুজ শাকসব্জি বেশি করে খেতে হবে। ম্যাগনেশিয়ামের জন্য বিভিন্ন রকম বাদাম, যেমন কাজু, কাঠবাদাম, পেস্তা, আখরোট খেতে হবে। ডায়েটে লিন প্রোটিন রাখা খুব জরুরি।

● সূর্যালোক গায়ে লাগানো খুব জরুরি। ভিটামিন ডি-র ঘাটতি যাতে না হয় খেয়াল রাখতে হবে।

● রোজ ৫০-৬০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারেন। মাছ, মাংস, ডিমে প্রোটিন আছে, নিরামিষের মধ্যে বিভিন্ন রকম ডাল, দানাশস্য, বাদাম খাওয়া যেতে পারে। এক কাপ ঘন সিদ্ধ ডালে প্রায় ১৬ থেকে ১৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ছোলা, রাজমা, কিনোয়া ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

ব্যায়াম

● যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্যের পরামর্শ, উষ্ণ জলে স্নান করা খুব জরুরি। এতে শরীর ভাল থাকবে। খুব বেশি ঠান্ডা জল খাবেন না বা ঠান্ডা জলে স্নান করবেন না।

● মুভমেন্ট এক্সারসাইজ়, স্ট্রেন্‌থ ট্রেনিং করতে হবে। শরীরে মেদ জমলে কপালভাতি খুবই ভাল। তা ছাড়া সিঙ্গল লেগ রাইস, পবন মুক্তাসন, মালাসনের মতো যোগাসন করলে ভাল হয়।

● খুব বেশি ভারী ব্যায়াম না করাই ভাল। ব্যায়ামের সময়ও কম হতে হবে।

● শরীরের নিম্নভাগের ব্যায়াম বেশি করতে হবে। হাঁটাহাঁটি, জগিং করা খুব ভাল। তা ছাড়া কোয়াড্রিসেপ, টুইস্ট এক্সারসাইজ়, আপার বডি টুইস্ট করা যেতে পারে।

● পঞ্চাশের পরে হঠাৎ জিমে গিয়ে ভারী ব্যায়াম করতে শুরু করলে হিতে বিপরীত হবে। আগে থেকে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যায়াম করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ঠিক আছে। না হলে নিজে থেকে কার্ডিয়ো বা ওজন তুলে ব্যায়াম করতে যাবেন না।

Menopause Menstruation Fitness Women Health Healthy Diet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy