প্রবল গরমে ঘুমের দফারফা! ঘরে ফ্যান বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র না থাকলে ভ্যাপসা আবহাওয়ায় দমবন্ধকর হয়ে যায় পরিবেশ। হাতে-মুখে জল দিলে অথবা গা ধুয়ে নিলে খানিক আরাম মেলে বটে, কিন্তু তাতেও ঝুঁকি থেকে যায়। ঘুমোতে যাওয়ার আগে শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে নামতে থাকে। প্রায় এক থেকে দু'ঘণ্টা আগে থেকে শরীর এ ভাবে প্রস্তুতি নেয়। তাপমাত্রা কমতে থাকে বলেই ঘুমে সুবিধা হয়। কিন্তু বাইরের তাপমাত্রা খুব বেশি হলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। কারণ, পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রার কারণে শরীরের তাপমাত্রা তত পরিমাণে কমে না। ফলে ঘুম আসতে চায় না, বা রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যায়।
কিন্তু রাতে পর্যাপ্ত এবং ভাল ঘুমের প্রয়োজনকে অস্বীকার করা যায় না। তা হলে কোন কোন কৌশল প্রয়োগ করলে ভাল ভাবে ঘুমোনো সম্ভব?
শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবহার: ঘর ঠান্ডা করার বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। তা সে এয়ারকন্ডিশনার হোক বা এয়ার কুলার, অথবা ফ্যান। বিদ্যুৎ খরচের কথা মাথায় রেখে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবহার করতে হবে। ফ্যান এবং এসি একসঙ্গে চালাতে হবে। তাপমাত্রা রাখতে হবে ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রির মধ্যে। ‘টাইমার’ সেট করে ঘুমিয়ে পড়তে হবে, যাতে ঘর ঠান্ডা হয়ে আপনাআপনি সময়মতো এসি বন্ধ হয়ে যায়। ঘুমও ভাল হবে, বিদ্যুতের বিলও আকাশছোঁয়া হবে না।
অনেকেই গরমকালে রাতে ঘুমোনোর আগে ঠান্ডা জলে স্নান করেন। ছবি: সংগৃহীত।
ফ্যানের ব্যবহার: এসি বা এয়ারকুলার সাধ্যের বাইরে হলে ফ্যানের ব্যবহারেই ঘর ঠান্ডা করতে হবে। সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যান রাখলে তাপমাত্রা আরও একটু কমতে পারে। সঙ্গে যদি টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে ভেজা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে সেটি খানিক কুলারের কাজ করবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া: যদি ঘরের তাপমাত্রা কমাতে না পারেন, তা হলে জানবেন, আপনার শরীর নিজেই নিজেকে ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। আর তা হল, ঘাম। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো আর্দ্র অঞ্চলে ঘামের দাপট খুব স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক বলে সতর্ক না হলে মুশকিল। কারণ, প্রবল ঘামের কারণে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যেতে থাকে। তাই রাতে ঘুমোনোর সময়ে হাতের কাছে জলের বোতল রাখবেন। যাতে বেরিয়ে যাওয়া জলের ঘাটতি পূরণ করতে বেশি খাটতে না হয়। ঘন ঘন জল না খেলে শরীর শুষ্ক হয়ে গিয়ে অন্য সমস্যা দেখা দেয়।
পাতলা চাদর ব্যবহার: গ্রীষ্মে চাদর দেখেই গরম বেড়ে যায় যেন। কিন্তু ঘরে এসি চললে বা এয়ার কুলার চললে হালকা সুতির চাদর গায়ে দিয়ে রাখতে পারেন। শরীরের তাপমাত্রা নিয়্ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে তা সুবিধাজনক। তা ছাড়া বিদেশে গ্রীষ্মের সময়ে অনেকে ‘সামার কমফর্টার’ ব্যবহার করেন। ধরা যাক, আমেরিকার কিছু অংশে তাপমাত্রা খুবই বেশি, সেখানে এই ধরনের হালকা চাদর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আর্দ্রতা দূর করতে সাহায্য করে। এগুলি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ব্যবহারের জন্যও আদর্শ। অতিরিক্ত নয়, অল্প উষ্ণতা দিতে পারে বলে ঘুম ভাল হয়।
আরও পড়ুন:
রাতে ঠান্ডা জলে স্নান করা এড়ানো: অনেকেই গরমকালে রাতে ঘুমোনোর আগে ঠান্ডা জলে স্নান করেন। এতে আরাম হয় ঠিকই, কিন্তু এই অভ্যাসের অন্যান্য ঝুঁকি রয়েছে। স্নানের জল যদি ঈষদুষ্ণ থাকে, তা হলে কোনও সমস্যা নেই। তবে জল যদি শীতল হয়, তা হলে রাতে স্নান করা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। ভাল ঘুমের জন্য মনের প্রশান্তি, স্থিরতা দরকার। এ দিকে হঠাৎ ঠান্ডা জলে স্নান করলে স্থিরতার বদলে শরীর উদ্দীপিত হয়ে উঠতে পারে। ফলে আদপে ভাল ঘুমের থেকে বঞ্চিত হতে পারেন আপনি। অথবা স্নানের পর চট করে ঘুমও আসতে চাইবে না।