সারা বিশ্বে টাইপ টু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চিকিৎসকদের অনুমান, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হবেন। রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতার সঙ্গে ব্যক্তির স্থূলত্বের যোগসূত্র রয়েছে। দেখা গিয়েছে, ওজন কমাতে পারলে সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করাও অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
কী দাবি
এই প্রসঙ্গে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা নতুন তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে। সেখানে দেহে ক্যালোরি বা শক্তির প্রবেশের তিনটি পদ্ধতিকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, সপ্তাহে দু’দিন কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেলে তা রক্তের শর্করা এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
কোথায় হয়েছে
চিনের ঝেনঝৌ বিশ্ববিদ্যালের অধীনস্থ একটি হাসপাতালে গবেষকেরা এই পর্যবেক্ষণ করেছেন। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি আমেরিকার সান ফ্রানসিস্কোর ‘এন্ডোক্রিন সোসাইটি’র বার্ষিক অধিবেশনে জমা দেওয়া হয়েছে। তথ্য যাচাই করার পর তা কোনও জার্নালে প্রকাশিত হবে। গবেষক হাওহাও জ়্যাং বলেন, ‘‘ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে পারলে তা টাইপ টু ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে দেহে ইনসুলিনের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।’’
পদ্ধতি
গবেষকেরা টাইপ টু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ৯০ জন মানুষকে তিনটি দলে ভাগ করেন। অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ছিল ৩৮ বছর ৮ মাস। তাঁরা যেন কমপক্ষে দেড় বছর সুগারে ভুগছেন, তা-ও নিশ্চিত করা হয়। তিনটি দলকে মূলত তিন ধরনের ডায়েটের পরামর্শ দেওয়া হয় এবং নিয়মিত তাঁদের এইবিএওয়ানসি পরীক্ষা করা হয়। শুরুতে প্রত্যেকের ন্যূনতম এইচবিএওয়ানসি-র মাত্রা ছিল ৭.৪২ শতাংশ।
· এই দলের প্রত্যেকে সপ্তাহে দু’দিন কম ক্যালোরি (৫০০ থেকে ৬০০) যুক্ত খাবার খেয়েছিলেন।
· এই দলের প্রত্যেকে দিনের মধ্যে ১০ ঘণ্টা (সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং বিকাল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা) সময়সীমার মধ্যে খাবার খেয়েছিলেন। বাকি ১৪ ঘণ্টা তাঁরা উপোস করেছিলেন।
· এই দলের প্রত্যেকেই ৭ তিন কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেয়েছিলেন। তবে খাবার খাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না।
ফলাফল
গবেষকেরা দেখেছেন, তিনটি দলের সদস্যদের ওজন কমেছে (অন্তত ৭.৫ কিলোগ্রাম)। তবে প্রথম দলটি সবচেয়ে বেশি ওজন কমাতে পেরেছে। আবার তিনটি দলেই এইচবিএওয়ানসি ১ শতাংশের বেশি কমেছে। ৫:২ অনুপাতে সাপ্তাহিক ডায়েটের ক্ষেত্রে ফাস্টিং ব্লাড সুগারের মাত্রা, ইনসুলিন সেনসিটিভিটি, ট্রাইগ্লিসারাইড প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছে।
সীমাবদ্ধতা
৯০ জনের মধ্যে ৬৩ জন শেষ পর্যন্ত এই চ্যালেঞ্জটি সম্পূর্ণ করতে পেরেছিলেন। তাই আগামী দিনে অন্যান্য দেশের মানুষের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকরী হতে পারে, তা নিয়ে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। তবে ওজন কমিয়ে যে টাইপ টু ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হয়, তা নিয়ে একমত হয়েছেন গবেষকেরা।