হিন্দু ধর্মের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল অম্বুবাচী। পুরাণ অনুসারে, দেবী সতীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে ভারত ও তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সকল জায়গায় গড়ে উঠেছে এক একটি সতীপীঠ। সেগুলির মধ্যে ভারতের আসামে অবস্থিত কামাখ্যাতে পড়েছিল দেবীর যোনি। তাই সেই অঞ্চল যোনিপীঠ নামেও খ্যাত।
অম্বুবাচী কথাটির অর্থ হল জলবৃদ্ধি। মৃগশিরা নক্ষত্রের চতুর্থ পদে সূর্য গমন করতে শুরু হয় অম্বুবাচী। তিন দিন ধরে চলে এই দশা। এই সময় মাতা ধরিত্রীর ঋতুমতী দশা চলে। কামাখ্যায় এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়। এই সময় পৃথিবী ‘অশুচি’ দশায় থাকে বলে মনে করা হয়। তবে এই অম্বুবাচী পালনের নিয়ম অনেক। যে কেউ চাইলে এটি পালন করতে পারেন না।
আরও পড়ুন:
কারা অম্বুবাচী পালন করতে পারেন?
সাধারণত বিধবা মহিলারা অম্বুবাচী পালন করতে পারেন। এ ছাড়া তন্ত্রসাধক, ব্রহ্মচারী, সাধু-সন্ন্যাসীরা এই পবিত্র তিথি পালন করে থাকেন। অর্থাৎ, যে কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই তিথি পালন করতে পারবেন। কিন্তু সধবাদের জন্য এই তিথি নয়। তাঁরা চাইলেও এটি পালন করতে পারেন না।
আরও পড়ুন:
অম্বুবাচী পালনের নিয়ম কী কী?
১. অম্বুবাচী যাঁরা পালন করেন, তাঁরা এই দিন আগুনে রান্না করা কোনও রকম খাবার খেতে পারবেন না। ‘অশুচি’ ধরিত্রীর উপর আগুন জ্বালিয়ে খাবার রান্না করে এই সময় তাঁরা খান না। এই সময় তাঁরা আগুন ছুঁতে পারবেন না বলে মনে করা হয়।
২. অম্বুবাচীর তিন দিন তাঁদেরকে ফলমূল, সাবু এই সকল জিনিস খেতে হবে। গ্যাসওভেনে চাপিয়ে রান্না করা কোনও খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. এই বিশেষ তিন দিন ব্যবহার করা জামাকাপড়, বিছানার চাদর প্রভৃতি জিনিস শুদ্ধ বস্ত্রের সঙ্গে ছোঁয়ানো যাবে না। তিন দিন পরে, অম্বুবাচির তিথি ছেড়ে গেলে সেগুলিকে সব সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন:
৪. অম্বুবাচী চলাকালীন তেল-সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না। তিন দিন পর সাবান-শ্যাম্পু মেখে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে ব্রত ভাঙতে হবে।
৫. এই বিশেষ তিন দিন বাড়ির সকল দেবীদের মুখ লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কোনও মতে তাঁদের মুখ দেখা যাবে না। অম্বুবাচী ছেড়ে গেলে সেই লাল কাপড় তুলে ফেলে দেবীদেরও স্নান করাতে হবে। তাঁদের পরনের বস্ত্র বদলে ফেলতে হবে। সারা ঘরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিতে হবে।
৬। মনে রাখতে হবে, নিজেকে শুদ্ধ করার আগে ঘরবাড়ি সব শুদ্ধ করে নিতে হবে। অর্থাৎ, জামাকাপড়, বিছানার চাদর এগুলি সবার আগে ধুয়ে নিতে হবে। তার পর নিজে স্নান করে নিয়ে দেবীদের শুদ্ধ করতে হবে।