সময়মতো পহেলগাঁও পৌঁছোলে তাঁরাও হয়তো জঙ্গিদের হামলার মুখে পড়তেন। ভাগ্যিস ভুল করেছিলেন রেস্তরাঁর রাঁধুনি! ফ্রায়েড রাইসে নুন বেশি থাকায় মধ্যাহ্নভোজ সেরে বৈসরন উপত্যকার উদ্দেশে রওনা দিতে প্রায় ঘণ্টাখানেক দেরি হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। আর তাতেই হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পেলেন কেরলের দম্পতি।
গত ১৮ এপ্রিল স্বামীর সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন কেরলের কন্নুরের বাসিন্দা লাবণ্য। ১৯ তারিখ তাঁরা শ্রীনগর পৌঁছেছিলেন। দিন দুয়েক গুলমার্গ-সোনমার্গে ঘুরে মঙ্গলবার শ্রীনগর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পহেলগাঁওয়ে যান তাঁরা। সমাজমাধ্যমের পোস্টে লাবণ্য জানান, আগের দু’দিন ভাল করে খাওয়াদাওয়া হয়নি বলে তাঁর স্বামী চেয়েছিলেন, বৈসরন উপত্যকায় যাওয়ার আগে দুপুরে পেট ভরে খেয়ে নিতে। সেইমতো তাঁরা পথে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটি রেস্তরাঁয় খেতে যান। জায়গাটি বৈসরন থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরে। সেই রেস্তরাঁই এ যাত্রায় তাঁদের বাঁচিয়ে দিল!
লাবণ্য জানান, তাঁরা রেস্তরাঁয় ফ্রায়েড রাইস অর্ডার করেছিলেন। খানিক ক্ষণ পরে যখন খাবার আসে, তাঁরা দেখেন, ফ্রায়েড রাইসে নুন বেশি। রেস্তরাঁর মালিককে তাঁরা বিষয়টি জানান। মালিক ভুল বুঝতে পেরে তাঁদের নতুন করে খাবার বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তাতেই আরও কিছু ক্ষণ বসতে হয় দম্পতিকে। অতঃপর দুপুরের খাওয়া শেষ করে বৈসরনের উদ্দেশে রওনা দিতেই তাঁদের ঘণ্টাখানেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। এর পর তাঁরা বৈসরনের কাছাকাছি পৌঁছোতেই দেখেন, চারিদিকে লোকজন দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন। সহিসেরাও এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন। লাবণ্যেরা প্রথমে বুঝতে পারেননি। তবে এটুকু বুঝতেই পেরেছিলেন যে, কিছু একটা ঘটেছে! এর পর একটি গাড়ি থামিয়ে তাঁরা জানতে চান। ওই গাড়ির চালক তাঁদের জানান, বৈসরনের কাছে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে পর্যটকের ঝামেলা হয়েছে। তা শুনে লাবণ্যেরাও সেখান থেকেই ফিরে যান। এর কিছু পরেই দম্পতি দেখেন, রাস্তাঘাটে যত দোকানপাট ছিল, সব ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দোকানের লোকেরা তাঁদের ওই এলাকা ছেড়ে হোটেলে ফিরে যেতে বলেন। বড় কিছু ঘটেছে বুঝতে পেরে তাঁরা ফিরে গিয়েছিলেন নিজেদের হোটেলে।
লাবণ্য লিখেছেন, ‘‘হোটেলে পৌঁছোনোর পর থেকে বাড়ি থেকে ফোন আসা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখনই জানতে পারলাম, বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলা হয়েছে। পর্যটকদের গুলি করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনাটা কোনও দিন ভুলব না।’’