দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তকে তাঁরই বাসভবনে প্রবেশ করে মারধরের ঘটনা কি কোনও পরিকল্পিত হামলা? আপাতত সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। ধৃত রাজেশভাই খিমজীভাই সকারিয়া গত কয়েক সপ্তাহে ফোনে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন, তা-ও তদন্তের আওতায় রাখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েক সপ্তাহে যাঁদের সঙ্গে সকারিয়া কথা বলেছিলেন, সেই তালিকায় ধৃতের চার বন্ধুও রয়েছে। তাঁদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছে পুলিশ।
বুধবার সকালে দিল্লিতে নিজের সরকারি বাসভবনে আয়োজিত ‘জনশুনানি’তে দিল্লিবাসীর অভাব-অভিযোগ শুনছিলেন মুখ্যমন্ত্রী রেখা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হঠাৎই ভিড়ের মধ্যে থেকে সকারিয়া কাগজপত্র নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে এগিয়ে যান। তার পর গালিগালাজ শুরু করেন। আচমকাই মুখ্যমন্ত্রীর চুল টেনে ধরে চড় মারেন বলে অভিযোগ। তড়িঘড়ি অভিযুক্তকে ধরে ফেলে উপস্থিত জনতা। তার পর তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পরে রেখার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাঁকে ‘জ়েড ক্যাটেগরি’ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন সিআরপিএফ জওয়ানেরা।
ধৃত রাজেশভাইকে জেরা করে ঘটনা সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে পুলিশ। সূত্রের খবর, জেরায় রাজেশের দাবি, পথকুকুর সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কথায় পাত্তা দেননি। এর পরেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলা করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন অভিযুক্ত। তবে এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা। কারণ, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশটি দিয়েছিল, তা ছিল রাজধানী দিল্লিকেন্দ্রিক। কিন্তু অভিযুক্ত গুজরাতের রাজকোটের বাসিন্দা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, এই প্রথম বার অভিযুক্ত দিল্লিতে যান। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তের দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত, তা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা। এটি কোনও পূর্ব পরিকল্পিত হামলা কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন:
রাজকোটের বাসিন্দা রাজেশভাই দিল্লিতে কোথায় কোথায় ঘুরেছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন আধিকারিকেরা। নজর রয়েছে অভিযুক্তের ফোন থেকে পাওয়া তথ্যের উপরেও। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ধৃতের চার বন্ধুর ভূমিকাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৭ অগস্ট রাজকোট থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন অভিযুক্ত। রাজকোট থেকে অহমদাবাদে পৌঁছোন তিনি। সেখান মধ্যপ্রদেশের উজ্জৈন হয়ে দিল্লিতে যান রাজেশভাই। গত ১৯ অগস্ট নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে পৌঁছেছিলেন তিনি।
ধৃতের বিরুদ্ধে আগেও পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে ভয়ানক অস্ত্র দিয়ে আঘাত, শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য ইচ্ছাকৃত অপমান প্রভৃতি অভিযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছিল। বেআইনি মদ নিজের কাছে রাখার অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বুধবারের ঘটনার পর দিল্লির সিভিল লাইন্স থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।