রাশিয়ার তেল রফতানি নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তা হলেই যুদ্ধে টাকা ঢালতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে এমনটাই বললেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি। সোমবার সন্ধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে সেই কথা জানিয়েছেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী মোদীও জ়েলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপের কথা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় ভারত, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারির মাঝে মোদী এবং জ়েলেনস্কির এই ফোনালাপ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ‘অপরাধে’ ভারতের রফতানি করা পণ্যের উপরে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার ফলে ‘যুদ্ধ-যন্ত্রে জ্বালানির জোগান’ হচ্ছে। ভারত যদিও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশবাসীর স্বার্থকেই তারা অগ্রাধিকার দেবে। কৃষক, মৎস্যজীবী, ডেয়ারি মালিকদের স্বার্থ আগে দেখবে ভারত। তার জন্য যা দাম দিতে হয়, দেবে। এই আবহে মোদীকে ফোন করলেন জ়েলেনস্কি। তিনি পরে সমাজমাধ্যমে লেখেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের মানুষজনকে সমর্থন করে উষ্ণ বার্তা দিয়েছেন বলে আমি কৃতজ্ঞ।’’
আরও পড়ুন:
এর পরেই জ়েলেনস্কি লিখেছেন, ইউক্রেনে হামলার বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সব জানিয়েছেন। রবিবার জ়াপোরিঝিয়াতে হামলায় কত জন আহত হয়েছেন, তা-ও তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি এ-ও লিখেছেন যে, যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে হত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করছে রাশিয়া। তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের শান্তিস্থাপনের প্রচেষ্টাকে ভারত সমর্থন করছে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের উপস্থিতিতেই নেওয়া উচিত, ভারত এমনটাই মনে করে।’’
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি রাশিয়ার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। সেই আবহে রাশিয়া থেকে কম দামে বিপুল পরিমাণে তেল কিনতে শুরু করে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, দেশবাসীর স্বার্থের কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। আমেরিকা রাশিয়া থেকে এই তেল আমদানির জন্য ভারতের উপরে শুল্কের খাঁড়া ঝুলিয়েছে । ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘‘রুশ শক্তি, বিশেষত তেল রফতানি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। যুদ্ধ চালানোর অর্থ জোগান বন্ধ করার জন্য এই পদক্ষেপ করা উচিত।’’ তিনি জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ বৈঠকের পাশাপাশি দুই রাষ্ট্রনেতার একান্তে বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন, জ়েলেনস্কির সঙ্গে কথা বলে তিনি খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘সংঘাত নিয়ে দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে ভারত কতটা দৃঢ়, তা জানিয়েছি। এই নিয়ে ভারত সব রকম চেষ্টা করতে বদ্ধপরিকর। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও আরও মজবুত করবে।’’