Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘‘কী করে হয়? ও তো খুব ভাল ছেলে’’, ৪৯ জনকে খুন করেছে বিশ্বাসই হচ্ছে না ঠাকুরমার

কড়া পাহারা ছিল কোর্টে। তার পরেও ব্রেন্টনকে কোপাতে ছুরি হাতে হাজির হয়েছিল কয়েক জন। শুরুতেই পুলিশ নিরস্ত্র করে তাদের। বিচারক পল ক্যালার জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ছাড়া সাধারণ মানুষের ঢোকার অনুমতি ছিল না আদালতে। নিউজ়িল্যান্ডে যা বিরল।

মুখে কুলুপ। কোর্টে ‘শ্বেতাঙ্গ ভঙ্গি’ ব্রেন্টন ট্যারান্টের। ছবি: এএফপি ।

মুখে কুলুপ। কোর্টে ‘শ্বেতাঙ্গ ভঙ্গি’ ব্রেন্টন ট্যারান্টের। ছবি: এএফপি ।

সংবাদ সংস্থা
ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫২
Share: Save:

গায়ে সাদা বন্দির পোশাক। খালি পায়ে হেঁটে আদালতে ঢুকল বছর আঠাশের গাঁট্টাগোট্টা যুবক। কপাল পর্যন্ত ঢাকা কাচের দেওয়ালের ওপারে দাঁড়িয়ে সরাসরি তাকাল সংবাদমাধ্যমের দিকে। মুখে হালকা হাসি। নিউজ়িল্যান্ডের দু’টি মসজিদে তাণ্ডব চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আজ কোর্টে তোলা হল প্রধান অভিযুক্ত ব্রেন্টন ট্যারান্টকে। সাকুল্যে মিনিট কয়েকের শুনানি-পর্ব। আগাগোড়া ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে আনা প্রথম দফার খুনের অভিযোগ শুনল ব্রেন্টন। হাতকড়া পরানো দু’টো হাত কখনও মুঠো করা। কখনও বুড়ো আঙুল ও তর্জনী জুড়ে বিশেষ মুদ্রা। যা ‘শ্বেতাঙ্গ-শক্তি’ প্রকাশের ভঙ্গি হিসেবে পরিচিত সারা বিশ্বে।

কড়া পাহারা ছিল কোর্টে। তার পরেও ব্রেন্টনকে কোপাতে ছুরি হাতে হাজির হয়েছিল কয়েক জন। শুরুতেই পুলিশ নিরস্ত্র করে তাদের। বিচারক পল ক্যালার জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ছাড়া সাধারণ মানুষের ঢোকার অনুমতি ছিল না আদালতে। নিউজ়িল্যান্ডে যা বিরল। গোটা শুনানি-পর্বে একবারও মুখ খোলেনি অভিযুক্ত। নিজেকে বাঁচানোর পাল্টা আবেদনও করেনি সে। জামিনের আর্জি জানাননি তার আইনজীবীও। প্রথমে মুখে হাসি থাকলেও পরের দিকে অবশ্য নির্লিপ্ত হয়ে যায় ব্রেন্টন। তবে চোখ ঘুরেফিরেই চলে যাচ্ছিল সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের দিকে। বাকি সময়টা ক্রাইস্টচার্চ ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল সে। আদালত কক্ষের ভিতরে ব্রেন্টনের এই ছবির মুখ ঝাপসা করে প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমগুলি। আদলত জানিয়েছে, ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় বার হাজিরার আগে পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতেই থাকবে এই জঙ্গি। তার বিরুদ্ধে খুনের আরও অভিযোগ আনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শুক্রবারের হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ব্রেন্টন ছাড়াও আরও দু’জন পুরুষ ও এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ড্যানিয়েল জন বুরো নামে ১৮ বছরের এক ধৃতের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত বিদ্বেষ ও কু-মতলব’ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাকে আদালতে তোলা হয়নি। ধৃত মহিলাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হলেও আর এক জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

স্থানীয় সংবাদমাধ্যগুলি জানিয়েছে, হামলার মিনিট দশেক আগে ব্রেন্টন তার ৭৩ পাতার ইস্তাহারটি প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন-এর দফতর-সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অফিসে পাঠিয়েছিল। জেসিন্ডার দফতরের তরফে স্বীকারও করা হয়েছে তা। ইস্তাহার থেকে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন এই শরীরচর্চার প্রশিক্ষক বুলগেরিয়া, উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি তুরস্ক ও পাকিস্তানের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলিতে একাধিক বার গিয়েছিল। বিশেষত তুরস্কের প্রসঙ্গ তার লেখার বার বার এসেছে। ভারতের নাম উল্লেখ করেও সে লেখে, ‘‘ইউরোপের মাটি থেকে এই দখলদারদের সরাতে হবে।’’ ব্রেন্টন কত বার তাদের দেশে গিয়েছিল তা জানতে তদন্ত শুরু করার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক। আজ দ্বিতীয় সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা জানিয়েছেন, ব্রেন্টনের গাড়িতে আরও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এবং এত ‘সহজে’ রেহাই দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না তার।

নাতির এই কার্যকলাপের কথা বিশ্বাসই করতে পারছেন না ৯৪ বছরের জয়েস ট্যারান্ট। ‘‘কী করে এটা হয়? ব্রেন্টন তো খুব ভাল ছেলে। বছরে দু’বার গ্র্যাফটনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসত ও,’’ অবিশ্বাসের সুর ঠাকুরমার গলায়। ‘‘বড়দিনের সময়েও তো দিব্যি ছিল ছেলেটা!’’ যদিও পুলিশের তথ্য তা বলছে না। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে অস্ত্র কেনার জন্য ‘এ’ ক্যাটেগরির লাইসেন্স পেয়েছিল ব্রেন্টন। শুক্রবারের হামলায় ব্যবহৃত রাইফেলগুলি তার পরেই কেনে সে। ছেলে যখন হত্যালীলা চালাচ্ছে, মা শ্যারন তখন ইংরেজি ক্লাসে। শুক্রবার সাংবাদিকদের ফোনে ছেলের কথা জানতে পারেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, গত কাল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে মেয়ে লরেনকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। বাড়িতে একা পড়ে পোষ্য কুকুরটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE