Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Fact Check

চিনের টাকায় করোনা ষড়ষন্ত্র? আমেরিকায় গ্রেফতার অধ্যাপক?

বস্টনে বসেই চিনের আর্থিক সাহায্যে কি চলছিল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা? ভাইরাল হয়েছে এমন একটি মেসেজ।

এই বার্তা ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এই বার্তা ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ঋত্বিক দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০ ১৯:০২
Share: Save:

কী ছড়িয়েছে?

একটি বার্তা, যেখানে বলা হচ্ছে—‘‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে গ্রেফতার করেছে। চিনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উহানের একটি গবেষণাগারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। চিন তাঁকে মোটা টাকা দিত...এর থেকে প্রায় বোঝাই যাচ্ছে যে, করোনাভাইরাস চিনের পরিকল্পিত এবং পরিচালিত বায়ো-অ্যাটাক।’’

লেখাটির পরবর্তী অংশে বলা হচ্ছে— ‘‘...একজন চিনা বিশেষজ্ঞ সকলকে আশ্বস্ত করছেন যে গরম জলের ভাপ নিলে করোনা জীবাণু ১০০ শতাংশ মরে যায়। যদি সেই ভাইরাস নাক, গলা অথবা ফুসফুসে প্রবেশ করে থাকে, তা হলেও। করোনাভাইরাস গরম জলের বাষ্পে বেঁচে থাকতে পারে না...।’’

এরপর লেখাটি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে শেয়ার করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই উপসর্গহীন, দুশ্চিন্তায় আইসিএমআর​

কোথায় ছড়িয়েছে?

ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অসংখ্য বার শেয়ার হয়েছে এই মেসেজ এবং পোস্ট। কোনও কোনও ক্ষেত্রেএই পোস্টের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আমেরিকার বস্টনের একটি নিউজ চ্যানেলের ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি প্রতিবেদন।

ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অসংখ্য বার শেয়ার হয়েছে এই পোস্ট।

এই তথ্য কি সঠিক?

চিনের সঙ্গে সরাসরি যোগসাজশের অভিযোগে এফবিআই বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মহিলা গবেষককে গত জানুয়ারি মাসে গ্রেফতার করে। ভাইরাল হওয়া ওই মেসেজে চিনা একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উহানের গবেষণাগারের সঙ্গে যুক্ত যে ব্যক্তির কথা বলা তিনি মোটেও বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের নন। বরং তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর সঙ্গে এদের কারও কোনও যোগসূত্র নেই। ভাইরাল হওয়া মেসেজটির সঙ্গে ওই মার্কিন নিউজ চ্যানেলের যে ভিডিয়োটি শেয়ার করা হচ্ছে সেখানেও কোথাও চিনের জৈবিক যুদ্ধের কথা বলা হয়নি।

ভাইরাল হওয়া পোস্টের সঙ্গে শেয়ার হওয়া ভিডিয়োটি।

ওই মেসেজের পরের অংশে করোনাভাইরাস ‘মারা’র যে উপায়ের কথা বলা হচ্ছে, সেটিও ঠিক নয়।

সত্যি কী এবং আনন্দবাজার কী ভাবে তা যাচাই করল?

২৮ জানুয়ারি এফবিআই একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে মোট তিনটি গ্রেফতারির কথা বলা হয়। প্রথম জন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ও কেমিক্যাল বায়োলজি বিভাগের প্রধান, চার্লস লিবার। তিনি মার্কিন নাগরিক এবং ওই দিন সকালেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি হার্ভার্ডে কর্মরত অবস্থায় চিনা সরকার এবং উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গবেষণার কাজ করছিলেন।

দ্বিতীয় জন বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা গবেষক ইয়াঙ্কিং ই, যিনি আদতে চিনের পিপল্‌স লিবারেশন আর্মির লেফটেন্যান্ট।

তৃতীয় জন ঝে জাওসং। এই চিনা নাগরিক জৈব সামগ্রী ভর্তি ২১টি ভায়াল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিনে পাচার করার চেষ্টা করছিলেন।

এফবিআই-এর ২৮ জানুয়ারির সেই প্রেস বিবৃতি।

আরও পড়ুন: সঙ্গত কারণ না দেখিয়ে রাজ্যে কেন আসছে কেন্দ্রীয় দল? প্রশ্ন তুললেন মমতা​

এ সব কিছুই জানানো হয় ওই প্রেস বিবৃতিতে। আমেরিকা থেকে নানা বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম চিনে পাচার হওয়া আটকাতে অভিযান চালাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। এই গ্রেফতারির ঘটনা তারই অঙ্গ। মার্কিন অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে এবং সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তায় আঘাত হানতে চিন নানা প্রকারের গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে এবং সে জন্য নাগরিকদের সচেতন হতেও বলা হয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রেস বিবৃতিতে।

ভাইরাল হওয়া মেসেজটির দ্বিতীয় অংশে স্টিম থেরাপি দিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সারানোর কথা বলে হয়েছে। এর কি আদৌ কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে?

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান, অধ্যাপক নিমাই ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশির ধাত থাকলে বা গলায় ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণ থাকলে স্টিম থেরাপি নেওয়া উপকারি। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে গরম জলের ভাপ নিলে কোনও কাজ হবে না। বৈজ্ঞানিক ভাবে তা পরীক্ষিতও নয়।’’

হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে যা-ই দেখবেন, তা-ই বিশ্বাস করবেন না। শেয়ারও করে দেবেন না। বিশেষত এই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় তো তো নয়ই। এ ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে ভুয়ো খবর। যাচাই করুন। কোনও খবর, তথ্য, ছবি বা ভিডিয়ো নিয়ে মনে সংশয় দেখা দিলে আমাদের জানান এই ঠিকানায় feedback@abpdigital.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE