Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
China

ভারত নিয়ে অবস্থান পাল্টাচ্ছে চিন? পুলওয়ামা কাণ্ডের পর উঠছে প্রশ্ন

পুলওয়ামা কাণ্ডের পরও সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সব থেকে খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে ভারত-পাক সম্পর্ক। কিন্তু সে ভাবে দেখতে পাওয়া গেল না মার্কিন উপস্থিতি। উল্টে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে ভারতীয় বায়ুসেনার বোমাবর্ষণের পর সব থেকে বেশি তৎপরতা দেখা গেল চিনের তরফে। তাও বরাবরের একপেশে পাকপন্থী অবস্থান নয়, প্রথম বারের জন্য ভারত-পাক কোনও বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে দেখা গেল চিনা বিদেশ মন্ত্রককে।

নরেন্দ্র মোদী, শি জিনফিং এবং ইমরান খান।

নরেন্দ্র মোদী, শি জিনফিং এবং ইমরান খান।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ১৮:১৯
Share: Save:

পুলওয়ামা কাণ্ডের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে ভারতীয় বায়ুসেনা বোমাবর্ষণ করার পরও সরাসরি ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়ায়নি বেজিং। প্রশ্নটা উঠেছিল তখনই। সুখে-দুঃখে পাশে থাকা পাকিস্তানের সব সময়ের বন্ধু চিনের বক্তব্য ছিল,যুদ্ধ এড়াতে ভারত-পাকিস্তান এই দুই পক্ষেরই সংযত থাকা উচিত। চিনের এই বক্তব্যে অবাক হয়েছিল আন্তর্জাতিক দুনিয়া। কারণ পুলওয়ামা কাণ্ডের পরও ভারতএই সন্ত্রাসের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করায় চিনের বক্তব্য ছিল, কোনও একটি সন্ত্রাসের জন্য একটা গোটা দেশকে এ ভাবে দায়ী করা ঠিক নয়।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এসেছে আমেরিকা। ১৯৯৯ এর কার্গিল যুদ্ধ বা ২০০৮ এর মুম্বই হামলার সময় যখন পাকিস্তান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে ভারত, সব সময়ই দুই দেশের মধ্যে আলোচনার রাস্তায় হাজির ছিল আমেরিকা। ২০০৮ সালে ভারত-পাক সম্পর্ক যখন তলানিতে পৌঁছেছিল, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতে চলে এসেছিলেন খোদ মার্কিন বিদেশ সচিব কন্ডোলিজা রাইস। ভারত-পাক সম্পর্ক বরাবরই ছিল মার্কিন বিদেশনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অক্ষ।

পুলওয়ামা কাণ্ডের পরও সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সব থেকে খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে ভারত-পাক সম্পর্ক। কিন্তু সে ভাবে দেখতে পাওয়া গেল না মার্কিন উপস্থিতি। উল্টে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে ভারতীয় বায়ুসেনার বোমাবর্ষণের পর সব থেকে বেশি তৎপরতা দেখা গেল চিনের তরফে। তাও বরাবরের একপেশে পাকপন্থী অবস্থান নয়, প্রথম বারের জন্য ভারত-পাক কোনও বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে দেখা গেল চিনা বিদেশ মন্ত্রককে।

আরও পড়ুন: বেজিংয়ে বৈঠক সুষমার, চিনের সন্ত্রাস-বিরোধী বিবৃতি আদায় দিল্লির

কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে বিদেশনীতিতে এতটা পরিবর্তন আনতে বাধ্য হল চিন?কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্ব রাজনীতি এবং বিশ্ব বাণিজ্যের সাম্প্রতিক ট্রেন্ডই বেজিং-কে বাধ্য করল এই অবস্থান নিতে। এই মুহূর্তে আমেরিকা-চিন বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাটার টান। আমেরিকার সঙ্গে চলতে থাকা ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’-এর কারণেই বাণিজ্যের বিকল্প সংস্থানের কথা ভাবতে হচ্ছে চিনকে। সেই বিকল্প সংস্থানের জন্য চিনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া। বেজিং কোনও ভাবেই চায় না, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত জটিলতা কোনও ভাবে এই অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত করুক।

থাকোট-হাভেলিয়ান রাস্তা প্রকল্পের কাছেই বোমাবর্ষণ করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা।

এশিয়াতে প্রভাব বাড়াতে চিনের বেশ কিছু পরিকল্পনা ইতি মধ্যেই ধাক্কা খেয়েছে। মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূল জুড়ে তৈরি হতে থাকা ‘ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক’ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুয়ালালামপুর। বালাকোটে ভারতের যুদ্ধবিমান পৌঁছে যাওয়ার ঘটনাতেও শঙ্কিত চিন। কারণ খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের কাছেই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বানাচ্ছে বেজিং। এই করিডরেরই অংশ থাকোট-হাভেলিয়ান রোড প্রজেক্ট যাচ্ছে মানসেরা জেলার মধ্যে দিয়ে। আবার এই মানসেরা জেলার বালাকোটেই বোমাবর্ষণ করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এই রাস্তা প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৯,২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে চিন। তাই এই রাস্তার সুরক্ষার জন্যও ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতে চায় চিন, এমনটাও মনে করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন: ইসলামিক দেশগুলির শীর্ষ বৈঠকে আমন্ত্রিত ভারত, বেরিয়ে গেল ক্ষুব্ধ পাকিস্তান

পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরেই খারাপ হচ্ছে পাক-মার্কিন সম্পর্ক। সন্ত্রাস দমনে আমেরিকার দেওয়া আর্থিক ও সামরিক সাহায্য আসলে ব্যবহার করা হচ্ছে সন্ত্রাসের মদত দিতে, এই অভিযোগে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। উল্টো দিকে আমেরিকার সঙ্গে ক্রমশই ভাল হচ্ছে ভারতের সম্পর্ক। বেজিং কোনও ভাবেই চায় না, উপমহাদেশের বুকে প্রভাব বাড়াক আমেরিকা । সেই চাপ সামাল দিতেও পাকিস্তান এবং ভারতের সঙ্গে সমদূরত্বের নীতিনিল চিন, এমনটাও বলছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন: আত্মরক্ষার জন্য অভিযান ভারতের, চিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা সুষমার

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে চিনের সাম্প্রতিক অবস্থানও ভারতের পক্ষে গিয়েছে, এমনটাও মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সন্ত্রাস দমনের নামে চিনের উত্তর-পশ্চিমে মুসলিম জনগোষ্ঠী উইঘুরদের ওপর চিন সরকারের অভিযান বার বারই আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে এসেছে। তাই নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘণের মারাত্মক অভিযোগ আসলেও বেজিং বরাবর বলে এসেছে, সন্ত্রাস দমন করতেই এই সব অভিযান। তাই সন্ত্রাস দমনে ভারতেরবালাকোট অভিযানের বিরোধিতা করা বেজিঙের পক্ষে সম্ভব নয় নিজস্ব অবস্থানের কারণেই।

২০১৭ সালে ভারত-চিন-ভুটান সীমান্তে ডোকলাম উত্তেজনার পর থেকেই ভারত-চিন সম্পর্কে বদল আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। ২০১৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পর পর দু’বার চিন সফরের পর সেই সম্পর্কে উষ্ণতা বেড়েছিল। ভারতের তরফে দক্ষ হাতে বিষয়টি সামলাচ্ছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও। সেই বিরামহীন চেষ্টারই ফসল ভারতের সঙ্গে চিনের অবস্থানের সাম্প্রতিক পরিবর্তন, এমনটাই ধারণা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE