প্রতীকী ছবি।
এফ-১ এবং এম-১ ভিসা নিয়ে পড়তে গিয়ে এই মুহূর্তে যাঁরা শুধু অনলাইন ক্লাস করছেন, তাঁদের আমেরিকায় থাকার ভিসা প্রত্যাহার করা হবে। নিজের দেশে ফিরে গিয়ে অনলাইনে ক্লাস করতে হবে ওই সমস্ত পড়ুয়াকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের এমন ঘোষণায় যেমন দুশ্চিন্তায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় পড়তে যাওয়া পড়ুয়ারা, তেমনই বিদেশে-বিভুঁইয়ে ভারতীয়রা এ ভাবে দুশ্চিন্তায় পড়ার জন্য মোদী সরকারকে দুষছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদী হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’, আমদাবাদে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ করেন। তার পরেও আমেরিকায় ভারতীয়দের এই হাল!’’
সোমবার ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণার পরে মঙ্গলবারই অবশ্য মার্কিন বিদেশ দফতরের ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘‘বিদেশি পড়ুয়ারা আমেরিকায় স্বাগত। আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের কাছে আমেরিকা বরাবরই খুব পছন্দের গন্তব্য। আগামী ‘ফল সিমেস্টারে’ও বিদেশি পড়ুয়াদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’’ তবে একই সঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সম্প্রতি হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটি দফতর এফ-১ ও এম-১ নন ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় কিছু সাময়িক রদবদল করেছে। পড়ুয়ারা যাতে একই সঙ্গে অনলাইন ক্লাস ও ক্যাম্পাসে এসে ক্লাস করতে পারেন, তাই এই নির্দেশিকা।’’ বিদেশ দফতরের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ‘‘কোভিড-১৯-এর ফলে ভিসা ও যাতায়াতে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতে এ দেশে আসার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা যেন সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা কনসুলেটে যোগাযোগ করেন।’’
আমেরিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে রয়েছেন প্রচুর বাঙালি। বর্ধমানের ছেলে মিরাজুল হক এখন কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করছেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ডালাস-এ। ২০১৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে মিরাজুল গিয়েছিলেন। এর পরে পিএইচডি শুরু করেছেন। সঙ্গে ইন্টার্নশিপও করছেন একটি সংস্থায়। মিরাজুল জানালেন, সোমবার এই খবর জানার পর থেকেই চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। আশা করেছিলেন পরের সিমেস্টার সবটাই অনলাইন ক্লাস করবেন। এ নিয়ে কোনও সমস্যা হতে পারে, তা ভাবেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে সবাই যাতে ডিগ্রি পান, তার জন্য যা যা সম্ভব তা তারা করবে। তবে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু এখনও জানানো হয়নি। মিরাজুল বলেন, ‘‘এখানে আসার আগে ইচ্ছে ছিল গবেষণার জগতে থাকব। কোনও ভাল ল্যাবরেটরিতে যোগ দেব। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলছে। তবে এখনও আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’’
ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফর্নিয়ায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মাস্টার্স করছেন শালিনী হালদার। তিনি এ দিন জানালেন, সামনের ‘ফল সিমেস্টার’ পুরোটাই অনলাইন হবে নাকি ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্লাস করতে হবে কিছুই এখনও তাঁরা জানেন না। তিনি বলেন, ‘‘যদি সত্যিই আমাদের দেশে ফিরে যেতে হয়, তা হলে অসম্ভব মানসিক চাপ তৈরি হবে। আশা করছি পরিস্থিতি তেমন দিকে যাবে না।’’
সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় একটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজির পিএইচ ডি ছাত্র। জানালেন এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনও কিছু সরকারি ভাবে তাঁদের জানানো হয়নি। তবে ইন্টারন্যাশনাল স্কলার অফিস থেকে ই-মেলে বলা হয়েছে, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে।
অ্যারিজ়োনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মাস্টার্স করছেন সৌপ্তিক চক্রবর্তী। গত বছর অগস্ট মাসে ক্লাসে যোগ দিয়েছিলেন। তখন কোনও ধারণাই ছিল না যে বছর ঘুরতে না-ঘুরতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে। তবে ট্রাম্প সরকারের এই ঘোষণার পরেই আধ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে ই-মেল আসে। সেখানে তাঁদের আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে চিন্তার কোনও কারণ নেই। হাইব্রিড ক্লাস নেওয়া হবে। অর্থাৎ অনলাইন এবং ক্যাম্পাসে গিয়ে, দু’ভাবেই ক্লাস হবে। ছাত্রছাত্রীদের বলা হয়েছে, তাঁরা অনলাইন বা ক্যাম্পাসে গিয়ে, কী ভাবে ক্লাস করবেন, নিজেরাই সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy