প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে পড়েছে সেতু।
বিপর্যয় কাটতেই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে ধ্বংসের ছবি। ৭.৫ কম্পাঙ্কের ভূমিকম্প ও সুনামির জোড়া ধাক্কায় ইন্দোনেশিয়ার সুলাবেসি দ্বীপে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪০০। গত কালের তীব্র কম্পনে কার্যত ধ্বংসস্তূপ ৬ লক্ষ মানুষের বাসস্থান উপকূলবর্তী দুই শহর পালু ও ডঙ্গালা। গুঁড়িয়ে গিয়েছে কয়েক হাজার বাড়ি, হাসপাতাল, হোটেল, শপিংমল, মসজিদ। যদিও উদ্ধারকারীরা জানাচ্ছেন, বহু জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিপর্যয়ের সামগ্রিক ছবি এখনও ধরা পড়েনি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ইন্দোনেশিয়ার পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর জানিয়েছে, আজ রাত পর্যন্ত ৩৮৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ৫৫০ জন। প্রত্যেকেই পালুর বাসিন্দা।
গত সন্ধ্যায় বিচ-পার্টির জন্য সেজে উঠেছিল পালু। সৈকতে ছিলেন কয়েক’শো মানুষ। সেই সময়েই আছড়ে পড়ে ৬ মিটার উঁচু ঢেউ। আশঙ্কা, সেই জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে তাঁদের অনেকেই। ওই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ২৫০ পুলিশকর্মীরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শহরের প্রধান হাসপাতালটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খোলা আকাশের তলায় চিকিৎসা চলছে অনেকের।
ঠাঁই নেই হাসপাতালে। খোলা আকাশের নীচেই চলছে চিকিৎসা।
দফতরের মুখপাত্র সুতোপো পুরবো নুগরোহো জানিয়েছেন, দুর্যোগের ফলে বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধস নেমে আটকে গিয়েছে পালুতে পৌঁছনোর মূল হাইওয়ে। ফলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
সুতোপো আরও জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি পালুর ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে ডঙ্গালায়। রে়ডক্রস একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পালু শহরে যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার খুব সামান্যই আন্দাজ করা যাচ্ছে। কিন্তু ডঙ্গালা থেকে কোনও খবরই পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।’’ প্রবল জলোচ্ছ্বাসে শহরের সবচেয়ে বড় সেতুটি ভেসে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে।
প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দলকে সাহায্যের জন্য আজ সেনা রওনা হয়ে গিয়েছে পালু ও ডঙ্গালায়। রাজধানী জাকার্তা থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পণ্যবাহী বিমান পাঠিয়েছে সেনা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ডঙ্গালা শহরের উপকূল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মৃতদেহ। আগামিকাল পালুতে যাওয়ার কথা প্রেসিডেন্টের। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আমরা শিশুদের জন্য সবচেয়ে চিন্তিত। কারণ, সুনামিতে ওদের ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
গতকালের ভূকম্প টের পাওয়া যায় কেন্দ্রস্থল থেকে কয়েক’শো কিলোমিটার দূরেও।
সুলাবেসি দ্বীপের একদম দক্ষিণপ্রান্তে মাকাসার এবং তার পাশ্ববর্তী কালিমানতান শহরেও এর প্রভাব পড়ে। ৭.৫ কম্পাঙ্কের ভূমিকম্পের পরেও অন্তত ১০০ বার কেঁপে ওঠে পালু ও সংলগ্ন এলাকা। শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা বিভিন্ন ছবিতে দেখা গিয়েছে, কিছু কিছু এলাকা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। রাস্তায় ফাটল ধরেছে। ভেঙে গিয়েছে বাড়ি, হাসপাতাল, শপিং সেন্টারের ছাদ। শুধুমাত্র ত্রাণসামগ্রী আনার জন্য এ দিন পালু বিমানবন্দর খোলা হয়েছে। ৪ অক্টোবর পর্যন্ত যাত্রিবাহী বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy