বিস্ফোরণের পর নিগম্বোর একটি গির্জার ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে রক্তের দাগ, জুতো। ছবি: রয়টার্স
সকাল থেকে ঘটে যাওয়া দু’টি আত্মঘাতী-সহ আটটি বিস্ফোরণে রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কা। তাতে তিন ভারতীয়-সহ অন্তত ২০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জখম হয়েছেন প্রায় ৪৫০ জন। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও সংগঠন হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে বিস্ফোরণের পর সন্দেহভাজন সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মৈত্রীপালা সিরিসেনা। দেশের মাটিতে গড়ে ওঠা কোনও চরমপন্থী সংগঠন এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহও।
বিস্ফোরণের পর থেকেই কলম্বোয় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখেছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সন্ধ্যার দিকে তিনি টুইটারে জানান, ‘কলম্বোর ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, সেখানকার জাতীয় হাসপাতাল তিন জন ভারতীয়র মৃত্যুর খবর দিয়েছে। নিহতরা হলেন, লোকশ্বিনী, নারায়ণ চন্দ্রশেখর, এবং রমেশ।’ ভারত শ্রীলঙ্কাকে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছেন বলেও টুইটারে উল্লেখ করেছেন সুষমা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে ইস্টারের প্রার্থনা চলাকালীন প্রথমে নেগোম্বো, বাট্টিকালোয়া এবং কলম্বোর কোছিকাড়ে জেলার সেন্ট অ্যান্টনি গির্জা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় নেগোম্বো গির্জায়। ৬৭ জন প্রাণ হারান সেখানে। গির্জার ছাদটিও ভেঙে পড়ে। বাট্টিকালোয়ার গির্জায় প্রাণ হারান ২৫ জন।
গির্জায় হামলার পর একে একে কলম্বোর শাঙ্গরি-লা, কিংসবারি, সিনেমন গ্র্যান্ড এবং দেহিওয়ালা চিড়িয়াখানার সামনে আর একটি বিলাসবহুল হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে কমপক্ষে ৩৫ জন বিদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করা হলেও, নিহতরা জাপান, হল্যান্ড, ব্রিটেন, আমেরিকা,পর্তুগাল এবং তুরস্ক থেকে আসা পর্যটক বলে জানা গিয়েছে।
বিস্ফোরণে দু’টুকরো গির্জায় রাখা মাদার মেরির মূর্তি। ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন: ‘চার্চে হতে পারে আত্মঘাতী হামলা’, আগেই সতর্ক করেছিলেন শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান!
ডেমাটাগোড়ার মহাবিলা গার্ডেন্সের একটি বাড়িতে অষ্টম বিস্ফোরণটি ঘটে। বিস্ফোরণের সময় সেখানে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল স্থানীয় পুলিশ। বিস্ফোরণের তীব্রতায় বাড়িটির একটি অংশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লে তার নীচে চাপা পড়ে তিন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
গির্জা ও হোটেলের বিস্ফোরণের খবর পেয়েই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহ। বৈঠকের পর পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত, অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশ জুড়ে কার্ফু জারি হয়। ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়া রুখতে সাময়িক ভাবে ব্লক করে দেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে। নিরাপত্তা আঁটোসাটো করা হয় বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরেও। সেনা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলিকে পরিস্থিতি বুঝে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন মৈত্রীপালা সিরিসেনা। সেই সঙ্গে তদন্ত চালিয়ে হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই দুঃসময়ে দেশবাসীকে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতেও আবেদন জানান সিরিসেনা। হামলার তীব্র নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহ দেশবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানান। ভুয়ো খবর নিয়েও সতর্ক করে দেন সকলকে।
ইস্টারের প্রার্থনা চলাকালীন এই হামলার নিন্দায় সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটারে লেখেন, ‘শ্রীলঙ্কায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের উপমহাদেশীয় অঞ্চলে এই ধরনের বর্বরতার কোনও জায়গা নেই। এই দুঃসময়ে শ্রীলঙ্কাবাসীর পাশে রয়েছি আমরা। নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
Strongly condemn the horrific blasts in Sri Lanka. There is no place for such barbarism in our region. India stands in solidarity with the people of Sri Lanka. My thoughts are with the bereaved families and prayers with the injured.
— Narendra Modi (@narendramodi) April 21, 2019
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান টুইটারে লেখেন, ‘ইস্টারের সকালে হামলায় শ্রীলঙ্কায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এই হামলার তীব্র নিন্দা করছি। শ্রীলঙ্কার ভাইদের সমবেদনা জানাই। এই দুঃখের সময়ে পাকিস্তান তাঁদের পাশে আছে।’
Strongly condemn the horrific terrorist attack in Sri Lanka on Easter Sunday resulting in precious lives lost & hundreds injured. My profound condolences go to our Sri Lankan brethren. Pakistan stands in complete solidarity with Sri Lanka in their hour of grief.
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) April 21, 2019
আরও পড়ুন: বল্লভভাইয়ের মূর্তির নামেই কেবল ‘ইউনিটি’, একাত্মবোধ হারিয়ে গিয়েছে নর্মদায়
শ্রীলঙ্কায় হামলা নিয়ে টুইট করতে গিয়ে প্রথমে বিপত্তি বাধিয়ে ফেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলায় ১৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বসেন তিনি। পরে তা সংশোধন করে হামলার তীব্র নিন্দা করেন তিনি। শ্রীলঙ্কাবাসীকে সমবেদনা জানান। শ্রীলঙ্কাকে সবরকম সাহায্যেরও আশ্বাস দেন।
138 people have been killed in Sri Lanka, with more that 600 badly injured, in a terrorist attack on churches and hotels. The United States offers heartfelt condolences to the great people of Sri Lanka. We stand ready to help!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) April 21, 2019
চার্চের সামনে পুলিশি প্রহরা। ছবি: রয়টার্স।
কবর থেকে জিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান নিয়ে ইস্টার উত্সব পালন করেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন হয়। সেই উত্সবের দিন গির্জার প্রার্থনা সভায় বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা করেন পোপ ফ্রান্সিসও।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
হামলার পর শান্ত গির্জা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
কলম্বোর ভারতীয় হাই কমিশন জানায়, ‘‘কলম্বো ও বাট্টিকালোয়ায় বিস্ফোরণের খবর এসেছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’ ভারতীয় নাগরিকদের কোনওরকম সাহায্যের জন্য ৯৪৭৭৭৯০৩০৮২, ৯৪১১২৪২২৭৮৮, ৯৪১১২৪২২৭৮৯ হেল্পলাইন নম্বরের কথাও জানায় কমিশন।
Colombo - I am in constant touch with Indian High Commissioner in Colombo. We are keeping a close watch on the situation. @IndiainSL
— Sushma Swaraj (@SushmaSwaraj) April 21, 2019
(খবরটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার সময় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ভুলবশত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy