Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
New Zealand Terror

শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, মুসলিম বিদ্বেষ আর ঘৃণার চরম মতাদর্শে বিশ্বাসী অস্ট্রেলীয় বন্দুকবাজ

এই ব্রেন্টন টারান্ট যে অস্ট্রেলীয় নাগরিক, তা জানিয়েছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও। ঘটনার কড়া নিন্দা করে এই বন্দুকবাজকে তিনি বলেছেন, ‘চরমপন্থী, দক্ষিণপন্থী, খুনি এবং এক জন হিংস্র জঙ্গি’।

ব্রেন্টন টারান্ট নামে টুইটারে অ্যাকাউন্ট আছে এই বন্দুকবাজের। ছবি: এপি।

ব্রেন্টন টারান্ট নামে টুইটারে অ্যাকাউন্ট আছে এই বন্দুকবাজের। ছবি: এপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ১৪:১৯
Share: Save:

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে যে বন্দুকবাজেরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে সাধারণ মানুষদের, তাদের মধ্যে এক জন ২৮ বছরের অস্ট্রেলীয় নাগরিক। বন্দুক নিয়ে হামলা চালানোর কিছু ক্ষণ আগে ইন্টারনেটে সে একটি ৩৭ পাতার ইস্তাহারও প্রকাশ করে। সেই ইস্তাহারের লাইনে লাইনে ছিল মুসলিম বিদ্বেষ ঘৃণা আর শেতাঙ্গ আধিপত্যের চরম মতাদর্শের কথা।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, যে বন্দুকবাজ হামলার লাইভ ভিডিয়ো সরাসরি ফেসবুকে সম্প্রচার করছিল, তার নাম ব্রেন্টন টারান্ট। এই নামে টুইটারেও একটি অ্যাকাউন্ট আছে তার। ফেসবুকেও সে নিজেই ১৭ মিনিট ধরে এই হামলা চালানোর ভিডিয়ো দেখিয়েছে। যদিও হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিও। এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকেই সে প্রকাশ করেছিল তার ৩৭ পাতার ইস্তাহার। এই ব্রেন্টন টারান্ট যে অস্ট্রেলীয় নাগরিক, তা জানিয়েছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও। ঘটনার কড়া নিন্দা করে এই বন্দুকবাজকে তিনি বলেছেন, ‘চরমপন্থী, দক্ষিণপন্থী, খুনি এবং এক জন হিংস্র জঙ্গি’।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বন্দুকবাজ যে মতাদর্শ প্রকাশ করেছে, তাতে রয়েছে মোট ৩৭টি পাতা এবং প্রায় ১৬,৫০০ শব্দ। এই ইস্তাহারটিকে সে প্রকাশ করেছে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ নাম দিয়ে। সেখানে এই মতাদর্শের মাধ্যমে ‘নতুন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ’ করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারী এবং শরণার্থীদেরকেই পৃথিবী জুড়ে সমস্ত সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউরোপের মাটি থেকে বিদেশিদের তাড়াতে এবং ইউরোপের লক্ষ লক্ষ শ্বেতাঙ্গ মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে এই ইস্তাহারে। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য নিয়ে একটি স্লোগানও দেওয়া হয়েছে এই ইস্তাহারে। বলা হয়েছে, ‘আমাদের নিজেদের মানুষদের অস্তিত্বের বিষয়টি আমাদেরকেই দেখতে হবে। কারণ, আমাদের শ্বেতাঙ্গ শিশুদের ভবিষ্যত আমাদেরই হাতে।’

আরও পড়ুন: সেনার পোশাকে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে বন্দুকবাজের হামলা, হত ৪৯, রক্ষা বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের

প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, এই অস্ট্রেলীয় নাগরিক বেশ কিছু দিন ধরেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড পুলিশের সন্দেহভাজনদের তালিকায় তিনি ছিলেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু দিন ধরে চরমপন্থী মতাদর্শের কথা প্রচার করলেও তাকে কেন নজরদারির তালিকায় রাখা হয়নি, তা নিয়ে সরব হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।

এই ভয়াবহ নাশকতার আগের মুহূর্তেও সে ছিল অস্বাভাবিক রকমের শান্ত। মসজিদের সামনে গাড়ি পার্ক করে ভিতরে ঢোকার আগে সে শুরু করে লাইভ ভিডিয়ো। আর শুরুতেই সে বলে, ‘তা হলে শুরু হয়ে যাক আজকের পার্টি।’এর পরই সে বন্দুক হাতে নিয়ে ঢুকে যায় মসজিদের ভিতরে।

উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্রে লেখা ছিল আরও বিভিন্ন বন্দুকবাজের নাম। ছবি: রয়টার্স।

সেই লাইভ ভিডিয়ো থেকে দেখা যায়, তার বন্দুকে লেখা আছে আলেসান্দ্রে বিসনেত্তা এবং লুকা ত্রাইনির নাম। ২০১৭ সালে কানাডাতে একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ছয় নিরপরাধকে হত্যা করেছিল আলেসান্দ্রে বিসনেত্তা। ২০১৮ সালে ইতালিতে আসা শরণার্থী আফ্রিকানদের উপর গুলি চালিয়েছিল লুকা ত্রাইনি।এর থেকেই স্পষ্ট, কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিম বিদ্বেষই ছিল এই শ্বেতাঙ্গ বন্দুকবাজের মতাদর্শের মূল কথা।

আরও পড়ুন: গুলিতে লুটিয়ে পড়ছে মানুষ, হামলার লাইভ স্ট্রিমিং করল বন্দুকবাজ!

কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিম বিরোধী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হলেও কোনও দলের সঙ্গে সে যুক্ত নয়, এমনটাই জানানো হয়েছে তার ইস্তাহারে। এমনকি নিজের কাজের জন্য তার কোনও অনুশোচনা থাকবে না বলেও জানিয়েছে এই বন্দুকবাজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE