Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
diet

সামনেই বিয়ে? এ সব ব্যায়াম আর ডায়েটে মনের মতো চেহারা পান সহজেই

‘প্রি ওয়েডিং ফিটনেস ট্রেনিং’-এর অভিনব কনসেপ্টের কথা আনন্দবাজার ডট কম-কে জানালেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ বিশ্বাস ও দিব্যা হিমাতসিংকা।

শরীরচর্চা আর ডায়েটেই লুকিয়ে চেহারার প্রাণভোমরা। ছবি: শাটারস্টক।

শরীরচর্চা আর ডায়েটেই লুকিয়ে চেহারার প্রাণভোমরা। ছবি: শাটারস্টক।

মনীষা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:৪৯
Share: Save:

সামনের বৈশাখেই বিয়ে ঠিক হয়েছে সৌমাভর। কর্পোরেট অফিস, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বান্ধবীকে সময় দেওয়া, ঘরের টুকটাক দায়িত্ব, বার্সেলোনার জন্য গলা ফাটানোর মাঝে শরীর-স্বাস্থ্যে নজর আনার তেমন ফুরসত মেলেনি। এ দিকে বান্ধবী সম্প্রতি বায়না ধরেছে ‘একটু একটু মাস্‌ল হলে ভালই তো!’ অগত্যা জিমের খোঁজ শুরু।

সৌমাভর মতো মাস্‌ল বানানোর তাড়া অবশ্য নেই ঐশিকের। শিবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এখন আইআইটি কানপুরের রিসার্চ স্কলার তিনি। শরীর-স্বাস্থ্য, জিম, ব্যায়ামাদি এ সব নিয়ে আলাদা করে মনোযোগ দেননি কখনওই। শরীরচর্চা বলতে ওই টুকটাক ফ্রি হ্যান্ড আর ছোটবেলায় মায়ের হাত ধরে সাঁতার শিখতে যাওয়া। ব্যস! দৌড় ওই অবধিই। এ দিকে বিয়ে পাকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওবেসিটিও হানা দিয়েছে শরীরে। বান্ধবী বুঝদার, কিন্তু শরীর নয়। কাজেই ফিট থাকতেই দ্বারস্থ হতে হচ্ছে শরীরচর্চার। লক্ষ্য, বিয়ের আগেই ওজন কমাবেন অন্তত দশ কেজি।

ঘটনাগুলো একা সৌমাভ বা ঐশিকের নয়। বরং আমার-আপনার সকলের চার পাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের শরীরচর্চার ইচ্ছা কোনও অসুখের হাত ধরে জন্ম নেয়, অথবা কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্যই নিজেকে গড়েপিঠে নেওয়ার ইচ্ছে থেকে। তাঁদের ইচ্ছাপূরণের পথও প্রশস্ত এ বার।

আরও পড়ুন: হাঁটু ও হিপ প্রতিস্থাপন নিয়ে দুশ্চিন্তা? ভয় কাটান সহজেই

এই শহরেই রয়েছে জিম ‘স্কাল্পট’। সেখানেই ‘প্রি ওয়েডিং ফিটনেস ট্রেনিং’-এর অভিনব কনসেপ্টের কথা আনন্দবাজার ডট কম-কে জানালেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ বিশ্বাস ও দিব্যা হিমাতসিংকা। যাঁরা জিমে যাওয়ার সময় পান না, তাঁদের জন্য ওজন-পেশির এই খেলার কিছু গোপন কৌশলও ভাগ করে নিলেন আমাদের সঙ্গে।

কী কী ব্যায়ামে নজর

ওজন কমানো হোক বা বাড়ানো— শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে মূলত যে সব ব্যায়ামের প্রতি যত্নবান হতেই হবে তার জন্য যে সব সময় জিমে আসতেই হবে এমনটা মনে করেন না ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা। বরং বাড়িতে থেকেও ঝালিয়ে নিতে পারেন এই সব ব্যায়াম।

স্কোয়াট: দিনের মধ্যে অন্তত পাঁচ মিনিট চেয়ারে বসার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকুন। এক কথায় একে বলে ‘দ’ হয়ে দাঁড়ানো। ব্যায়ামের পরিভাষায় স্কোয়াট। ভেঙে বললে, চেয়ারে বসার মতো করে হাঁটু ভাঁজ করে কোমর ও পিঠ সোজা রেখে দাঁড়ানো। নিয়ম করে মিনিট পাঁচেক স্কোয়াট হতে পারে আপনার বিপদতারণ। লাফানো, দৌড়নো, হাঁটাহাঁটিতে পায়ের পেশীর যে উপকার মেলে, স্কোয়াট তার অনেকটাই পুষিয়ে দেয়। পায়ের স্নায়ুকে আরাম দেওয়ার সঙ্গে পুরো পায়ের পেশিকে শক্তসমর্থ করে স্কোয়াট।

অ্যাবডোমিনাল ক্রাঞ্চ: পেটের পেশির জোর বাড়াতে, চর্বি ঝরাতে ক্রাঞ্চ খুব জরুরি। মেঝেতে শুয়ে পরে দুই হাত মাথার নিচে নিয়ে যান।হাঁটু ভাঁজ করে ধীরে ধীরে পেটের কাছে নিয়ে আসুন। হাঁটু ও মাথার মাঝের কোণ যাতে ৯০ ডিগ্রি হয়, এমন ভাবে রাখতে হবে পা। এ বার দম ছাড়তে ছাড়তে ডান হাঁটু বাম কাঁধের কাছে নিয়ে আসুন। এ বার আবার আগের অবস্থানে ফিরে যান এবং দম নিন। প্রতি পাশে ১৫ বার করে করুন এই ব্যায়াম।

আরও পড়ুন: ডায়াবিটিস ঠেকাতে বদলে ফেলুন এ সব অভ্যাস

পুশ আপ: উপুড় হয়ে যান প্রথমেই। এর পর মাটির উপর দুই হাত ও দু’পায়ের আঙুল ঠেকিয়ে রাখুন। হাত বুক বরাবর, বুক থেকে একটু দূরে দু’পাশে বাইরে থাকবে| হাতের তালু ও পায়ের আঙুলের উপর গোটা শরীরের ভর রাখুন। শরীর, হাঁটু সোজা রেখে কনুই ভাঁজ করে বুককে নামিয়ে আনুন মাটির কাছাকাছি। আবার ওই ভাবেই কনুই সোজা করে শরীরকে ফিরিয়ে নিয়ে যান আগের অবস্থায়। প্রতি দিন ৩ সেটে অন্তত ১০ বার করে পুশ আপ করুন। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যাও বাড়ান।

প্লাঙ্ক: এই ব্যায়ামটি আপনার পেট, কোমর, ব্যাক হিপ (নিতম্ব), কাঁধ, হ্যামস্ট্রি— সব কিছুর উপরেই কাজ করে৷ প্রথমেই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ বার আপনার হাত দুটি কাঁধ বরাবর লম্বালম্বি রেখে হাতের তালুর উপর ভর দিন৷ এবার এই অবস্থাতেই শরীরটাকে ধীরে ধীরে উপরে তুলুন। পায়ের ভর থাকবে আপনার বুড়ো আঙুলের উপর। হাত পুরো স্ট্রেচ করুন, হাঁটু আর পেটও যতটা পারেন তোলার চেষ্টা করুন।

মোটামুটি এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত অভ্যাস করলেই পেশির জোর হয় ও অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যায়। সঙ্গে অবশ্যই মেনে চলুন কিছু ডায়েট

কেমন তা? জানালেন ‘স্কাল্পট’-এর ডায়াটিশিয়ান ও পুষ্টিবিদ সলৌনি সুরানা।

ওজন ঝরাতে দিন শুরু করুন এক গ্লাস জল দিয়ে। এর পর লক্ষ্য রাখুন পাতে যেন লো ফ্যাট ও হাই প্রোটিন পড়ে। পারলে একেবারে বাদ দিন কার্বোহাইড্রেট। তাই ব্রেকফাস্টে রাখুন পোহা, ইডলি বা বাড়িতে বানানো তেল ছাড়া সেঁকা পরোটা। সঙ্গে টক দই বা ছানা। চেষ্টা করুন তিন বেলার খাবারটাকেই চার-পাঁচ বারে ভাগ করে নিন। ব্রেকফাস্টের ঘণ্টা দুয়েক পর ফল খান একটি। দুপুরে পাত থেকে বাদ দিন ভাত-রুটির প্রাচুর্য। বরং দুটে রুটি ও প্রচুর শাকসব্জি ও মাছ-মাংসে আস্থা রাখুন। তবে মাছ-মাংস-ডিম সব এক সঙ্গে খাবেন না। এ বেলা ও বেলা করে পাল্টে পাল্টে খান। সয়াবিন, মুসুর ডাল এ সবও রাখুন পাতে। সন্ধের টিফিনে ওটস বা বাদাম জাতীয় খাবার রাখুন। এতে পেটও ভরবে, আবার বাদাম থেকে শরীর তার প্রয়োজনীয় ফ্যাটও পাবে। রাতের খাবার হোক সবচেয়ে হালকা। স্যুপ বা এক বাটি চিকেন স্টুয়ে আস্থা রাখুন।

আরও পড়ুন: সিওপিডি-তে মৃত্যু প্রতি ১০ সেকেন্ডে! বাঁচব কী ভাবে?

ডায়েট-নির্ভর খাওয়াদাওয়াতেই লুকিয়ে নীরোগ থাকার চাবিকাঠি। ছবি: শাটারস্টক।

ওজন যাঁরা বাড়াতে চান, তাঁদের জন্যও রয়েছে দরকারি ডায়েট। ওজন বাড়াতে হবে মানেই কিন্তু তেল-মশলা কেয়ে শরীরে বাজে কোলেস্টেরল ডেকে এনে ওবেসিটিকে আমন্ত্রণ জানানো নয়। তাঁদেরও দিন শুরু হোক এক গ্লাস জল দিয়ে। এর পর একই ভাবে ব্রেকফাস্টে রাখুন পোহা, ইডলি বা বাড়িতে বানানো তেল ছাড়া সেঁকা পরোটা। সঙ্গে টক দই বা ছানা। ব্রেকফাস্টের ঘণ্টা দুয়েক পর আপনারাও ফল খান একটি। দুপুরে ভাত খান। সঙ্গে মাছ-মাংস-ডিম থাকুক, ডাল, সয়াবিন ও সব্জির পদও রাখুন। গরম ভাতে অল্প ঘি-ও খেতে পারেন। সন্ধ্যায় ভেজ স্যান্ডউইচ, গ্রিলড স্যান্ডউইচ এ সব খেতে পারেন স্বচ্ছন্দে। রাতে রুটি বা ভেজ পোলাওয়ের সঙ্গে মাংস, মাছ খান। বাড়িতে বানানো হলে, সেই বিরিয়ানিতেও খুব একটা দোষ নেই এঁদের ক্ষেত্রে। তবে তা রোজ না হওয়াই ভাল।

তবে ওজন বাড়াতে চান বা কমাতে, কোনও ক্ষেত্রেই পাতে রাখা চলবে না রেড মিট, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও সস।

প্রসেনজিৎ জানালেন,‘‘আজকাল সেলিব্রিটিদের বিয়ের ছবি ইনস্টাগ্রামে, ফেসবুকে দেখে আমজনতাও উৎসাহী তাঁদের মতো করে আনন্দানুষ্ঠানে যোগ দিতে। তাই তাঁরাও ইদানীং শরীর নিয়ে ওয়াকিবহাল। বিশেষ করে পুজোর আগে, বিয়ের আগে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলা বা শুষ্কংকাষ্ঠং শরীরে একটু গত্তি আনার দিকে মন দেন অনেকেই। সে সব ভেবেই এই ট্রেনিংয়ের কথা ভাবা।’’

কিন্তু এক মাসে কি আদৌ ততটা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব? প্রসেনজিতের মতে, ‘‘অন্তত এক মাস নিয়ম মেনে ও প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা ও ডায়েটে থাকলে শরীরের প্রায় চার কেজি (থাইরয়েড থাকলে দেড়-দু’ কেজি) ওজন কমেই। এর সঙ্গে পাত্র-পাত্রীর শারীরিক সুস্থতা খতিয়ে দেখে, তাদের চাহিদা অনুযায়ী পেশি বানানো বা ওজন বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া হয়।’’

বিয়ের অন্তত এক মাস আগে থেকে শুরু করতে হবে এই শরীরচর্চা। এর জন্য আলাদা করে কোনও প্যাকেজও নেই এই জিমের। এমনকি, ইচ্ছা হলে বিয়ের পরেও চালিয়ে যেতে পারবেন এই সব ওয়ার্ক আউট ও ডায়েট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fitness Tips Health Tips Diet Plan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE