Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
health

নিয়ন্ত্রণে গ্যাস-অম্বল-ডায়াবিটিস-রক্তচাপ, কেন রোজ দই খেতে হবে? কতটা?

পেটের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের একটা উপায় আছে নিজেদের নাগালের মধ্যেই, বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার।

রোজের ডায়েটে থাক পরিমিত টক দই। ছবি: শাটারস্টক

রোজের ডায়েটে থাক পরিমিত টক দই। ছবি: শাটারস্টক

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৪৫
Share: Save:

অনেক বাঙালিরই জন্মগত সমস্যা বোধহয় অ্যাসিডিটি। তাই বেশিরভাগ বাড়ির মাসকাবারি বাজারেও নাকি থাকে অ্যান্টাসিড আর লিভারের সমস্যার ওষুধ। কিন্তু মুড়ি-মুড়কির মত ওষুধ যে কোনও কাজেই লাগে না সেই নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে কজন!

এখনকার করোনা কালে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় অ্যান্টাসিড খেলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু তাতেও হুঁশ ফেরে না। পেটের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের একটা উপায় আছে নিজেদের নাগালের মধ্যেই, বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার।

নিয়ম করে দই খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যার পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে ভাল থাকা যায়। প্রো-বায়োটিক খাবারের প্রসঙ্গে প্রথমেই আসে দই এর প্রসঙ্গ। দইয়ে থাকে বেশ কিছু উপকারি জীবাণু যারা আমাদের নানান অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থ থাকতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় বললেন দীপঙ্কর বাবু। উপকারি জীবাণুদের মধ্যে আছে ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস, ল্যাকটোকক্কাস ল্যাকটিস, ল্যাকটোকক্কাস কেমোরিস ইত্যাদিরা।

আরও পড়ুন: কানের ময়লা পরিষ্কারে অযথা খোঁচাখুঁচি? কতটা বিপজ্জনক জানেন

ইয়োগার্টে আছে স্ট্রেপটোকক্কাস থার্মোফিলাস ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারিকাস নামক জীবাণু। এরা সকলেই আমাদের নানা অসুখের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। অর্থাৎ শরীরে কোনও ক্ষতিকর জীবাণু অনুপ্রবেশ করে আক্রমণ করে দইয়ে থাকা সৈনিক জীবাণুরা যুদ্ধ শুরু করে দেয়। আর বেশিরভাগ সময়েই তারা জিতে যায় বলে আমরা ভাল থাকি। এই কারণেই রোজকার খাবারের তালিকায় দই রাখার পরামর্শ চিকিৎসক তথা পুষ্টিবিদদের। টক দইয়ে আছে বেশ কিছু ভিটামিন মিনারেলস যা আমাদের ভাল থাকতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: করোনা ভ্যাকসিন এলেও তা বিতরণের পরিকল্পনা প্রয়োজন, বললেন অভিজিৎ​

পুষ্টিবিদ ইন্দ্রাণী ঘোষ জানালেন যে ভিটামিন বি_২, ভিটামিন বি_১২, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকায় দইয়ের পুষ্টি মূল্য এত বেশি। উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে দই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় বলে জানালেন ইন্দ্রাণী। দইয়ে থাকা পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়াম শোষণের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। সোডিয়াম ব্লাড প্রেশার বাড়ায়।এই উপাদান কম থাকলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিমন্ত্রণ বাড়িতে খাবার পর শেষ পাতে দই খাবার প্রচলন ছিল। খাবার হজম করতে দইয়ের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা জেনেই এই প্রচলন। তবে হ্যাঁ, রং দেওয়া বা প্রচুর চিনি দেওয়া দই নয়, শরীর সুস্থ রাখতে বাড়িতে পাতা টক দই ভাল। দইয়ের উপাদান রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে ভাল বা বন্ধু কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে পারে দই।

আরও পড়ুন: একাধিক রোগ থাকবে দূরে, কোন মাছ সপ্তাহে ক’দিন খাবেন, কতটা?

রোজকার ডায়েটে দই রাখলে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়। ফাইল ছবি।

একই সঙ্গে দইয়ের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ককে আচমকা রক্ত বন্ধ হয়ে স্ট্রোক ও রক্তক্ষরণ থেকে বাঁচায়। কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে রোজ ৫০-১০০ গ্রাম করে বাড়িতে পাতা টক দই খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন ইন্দ্রাণী ঘোষ। এর ফলে মেটাবলিক সিনড্রোম অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ওজন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত দই খেলে অগ্ন্যাশয় বা প্যাংক্রিয়াসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। ফলে ইনসুলিন নিঃসরণ স্বাভাবিক হয়, একথা সকলের জানা যে ইনসুলিনই আমাদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং রোজকার ডায়েটে দই রাখলে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যায় বলে জানালেন ইন্দ্রাণী।

দইয়ে থাকা ল্যাকটোব্যাসিলাস জাতীয় বন্ধু জীবাণুরা আমাদের পাকস্থলীতে পৌঁছে খাবার চট করে হজম করতে সাহায্য করে। যাঁরা অ্যাসিডিটি, হজমের অসুবিধা বা অন্যান্য পেটের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য দই অত্যন্ত উপকারি। কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়ারিয়ার পাশাপাশি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের সমস্যা দূর করতে কার্যকর এই ম্যাজিক ফুড। যাঁদের চট করে ঠান্ডা লেগে সর্দি জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সমস্যা হয় তাঁদের জন্যেও দই অত্যন্ত উপকারী, বললেন ইন্দ্রাণী।

আরও পড়ুন: করোনাকালে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে খেতে হবে এই সব​

দাঁত ও হাড় মজবুত করতেও দই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। অন্ত্র পরিষ্কার করে শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখে টক দই। ফলে ত্বক ও চুল হয় ঝকঝকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। এমনকি ওজন স্বাভাবিক রাখতেও বাড়িতে পাতা দই অত্যন্ত দরকারি। দইয়ের ঘোল বা রায়তা কিংবা স্যালাডে দই মিশিয়ে খেতে পারেন অনায়াসে। যে কোনও ভাবেই এক কাপ দই রাখুন রোজকার খাবারের তালিকায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE