ধুলো, ধোঁয়া, দূষণ যত বাড়ছে, ততই চুল নিয়ে সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। চুল ঝরা, খুশকি, রুক্ষ কেশ— এক এক জনের এক একরকম সমস্যা। কারও আবার অভিযোগ, চুল পড়া বন্ধ হলেও, নতুন চুল গজাচ্ছে না। মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে মাথায় তেল মাসাজ করতে বলেন কেশচর্চা শিল্পীরা। কিন্তু শুধু তেল মেখে তো সব সময় কাজ হয় না! দরকার হয় বাড়তি পুষ্টি এবং যত্নের। চুলের সমস্যা বুঝে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন কয়েকটি উপকরণ। তাতেই চুল হবে ঘন, সুন্দর।
পেঁয়াজের রস: চুল গজাতে সাহায্য করে পেঁয়াজের রস। চুলে পেঁয়াজের রস মাখার চল বহু দিনের। এতে থাকা সালফার চুলের জন্য জরুরি কেরাটিন প্রোটিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নারকেল তেলে থাকে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। ফলে দুই উপকরণের মিশেল চুল ঝরা রোধ করতে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। নারকেল তেল চুল মসৃণও রাখে।
ব্যবহার বিধি: ২ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে নিন। তার পর মাথার ত্বকে ভাল করে মেখে হালকা হাতে মাসাজ করুন। মিনিট ২০ রেখে মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এই ভাবে চুলে তেল মালিশ করুন। কয়েক মাসেই চুল হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
ক্যাস্টর অয়েল: নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ক্যাস্টর অয়েলও। এতে থাকে রাইসিনোলিয়েক অ্যাসিড। এতে থাকা প্রদাহনাশক এবং অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। চুলের ফলিকলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় ক্যাস্টর অয়েল মাসাজ করলে। এতে চুলের গোড়া মজবুত হলে যেমন চুল ঝরা বন্ধ হবে, তেমনই মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে নতুন চুল গজাবে।
আরও পড়ুন:
ব্যবহার বিধি: ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে ২ চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। সরাসরি তা আগুনে না দিয়ে একটি বাটিতে তেল নিয়ে ফুটন্ত জলের উপর বসিয়ে গরম করে নিতে পারেন। তার পর সেটি মাথায় মাসাজ করুন। সপ্তাহে এক বা দু’দিন তা ব্যবহার করলে নতুন চুল গজাবে। ফল বুঝতে কয়েক মাস সময় লাগবে।
মেথি দানা: মেথিতে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন, নিকোটিনিক অ্যাসিড। চুল নরম করতে, খুশকি দূর করতে, চুলের বাড়-বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এটি।
ব্যবহার বিধি: মেথির দানা গুঁড়ো করে নারকেল তেলে মিশিয়ে মাখা যায়। আবার মেথির দানা জলে ভিজিয়ে বেটে নিয়ে তার সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে প্যাক হিসাবেও চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
কারিপাতা: কারিপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, বিটা-ক্যারোটিন, প্রোটিন, যা নতুন চুল গজাতে সহায়ক। এ ছাড়া, রুক্ষ চুল, ডগা ফাটার সমস্যাও দূর হয় নারকেল তেলে কারিপাতা ফুটিয়ে মাখলে।
ব্যবহার বিধি: একমুঠো কারিপাতা বেটে নিন। ৪-৫ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে তা গরম করে নিন। তবে আঁচ কমিয়ে তেল এবং কারিপাতা বাটা মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি একটু ঠান্ডা হলে ছেঁকে নিন। কারিপাতা মেশানো তেলটি পরিষ্কার শিশিতে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। সপ্তাহে ২-৩ দিন তেল মালিশ করে শ্যাম্পু করে নিন। মাস দু’য়েকেই ফলাফল বোঝা যাবে।
অ্যালো ভেরা জেল: চুলের ক্ষতিগ্রস্ত ফলিকল ঠিক করতে সাহায্য করে অ্যালো ভেরায় থাকা প্রোটিওলাইটিক এনজ়াইম। চুল নরম করতে, ডগা ফাটা কমাতে সাহায্য করে এটি।
ব্যবহার বিধি: ২ টেবিল চামচ অ্যালো ভেরা জেলের সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে মাখুন।এতে চুল ঝরা রোধ হবে, জেল্লা ফিরবে চুলে।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্য লেখা। হরমোনের ভারসাম্যের অভাব হলে বা অসুস্থতার জন্যেও চুল ঝরতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভাল। তবে দূষণ বা অযত্নের জন্য চুল পড়তে থাকলে কাজে আসতে পারে ঘরোয়া টোটকা।