অতিমারির সময়েও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে দেখা গিয়েছিল বিড়ালকে। গবেষণা বলছে, তাদের শরীরে এমন এক বিশেষ ধরনের ‘সেলুলার রিসেপ্টর’ রয়েছে, যা পাখির শরীর থেকে আসা এইচ৫এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের রূপান্তর ঘটাতে পারে। বিড়ালের শরীরে থেকে ভাইরাস ছড়ানোর ভয়ও আছে। কেবল তাই নয়, সংক্রমিত বিড়াল থেকে মানুষের মধ্যেও রোগ ছড়াতে পারে।
এমনিতেও বার্ড ফ্লু নিয়ে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পশ্চিমববঙ্গে না হলেও মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশের কয়েকটি জায়গায় বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। পড়শি রাজ্যের পোলট্রি খামারগুলিতে সতর্কতাও জারি হয়েছে। তাই এই সময় একটু সাবধান থাকাই ভাল।
বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে। আমেরিকায় এই ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে পোষ্য বিড়ালদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এইচ৫এন১ নামে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের যে প্রজাতি ছড়িয়েছে, তা এখন পাখিদের থেকে স্তন্যপায়ীদের শরীরেও বাসা বাঁধছে। ২০২২ সালে আমেরিকার ‘অ্যানিম্যাল অ্যান্ড প্ল্যান্ট হেল্থ ইন্সপেকশন সার্ভিস’-এর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এইচ৫এন১ ভাইরাস খুব দ্রুত বিড়ালের শরীরে ছড়াতে পারে। কেবল তা-ই নয়, বিড়ালের শরীরে এই ভাইরাসের জিনগত বদল বা মিউটেশনও সম্ভব। ভাইরাসে আক্রান্ত বিড়াল তাদের শ্বাস প্রশ্বাস, লোম, থুতু-লালার মাধ্যমে এমনকি, মলমূত্রের মাধ্যমেও ওই ভাইরাস ছড়াতে পারে। যা থেকে তার সঙ্গে থাকা মানুষের শরীরেও ওই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হলে বিড়ালের শরীরে তার নানা লক্ষণ ফুটে ওঠবে। যেমন—
১) হাঁচি-কাশি সারবে না।
২) শ্বাস নিতে কষ্ট হবে, খিদে কমে যাবে।
৩) চোখ-নাক থেকে অনবরত জল বেরোবে, জ্বর আসবে ঘুরেফিরে।
৪) প্রচণ্ড ঝিমিয়ে পড়বে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকবে।
পশু চিকিৎসক চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী এ বিষয়ে বললেন, “এ রাজ্যে বার্ড ফ্লু নিয়ে তেমন আতঙ্ক ছড়ায়নি এখনও। তবে পড়শি রাজ্যে যে হেতু খামারগুলিতে সতর্কতা জারি হয়েছে, তাই সাবধান থাকতেই হবে। বিশেষ করে, পোষ্য বিড়ালদের চোখে চোখে রাখা ভাল। বিড়াল বাইরে গিয়ে মৃত পাখির দেহাবশেষ বা কাঁচা মাংস খাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে। সাধারণত বার্ড ফ্লু ভাইরাস আক্রান্ত মুরগি বা কোনও পাখির থেকেই রোগ ছড়াতে পারে।”
সাবধান হবেন কী ভাবে?
১) বিড়ালকে কাঁচা মাংস খাওয়াবেন না। বিড়াল শিকার করে খেতে পছন্দ করে। যদি বিড়াল পোষেন বা তার বাড়িতে আসা যাওয়া থাকে, তা হলে খেয়াল রাখতে হবে সে কী খাচ্ছে।
২) ভাইরাসে আক্রান্ত বিড়াল তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে এমনকি, মলমূত্রের মাধ্যমেও ওই ভাইরাস ছড়াতে পারে। যা থেকে তার সঙ্গে থাকা মানুষের শরীরে ওই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে এবং আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সাবধান থাকতেই হবে।
৩) পোলট্রি বা খামারের আশপাশে যাতে বিড়াল না যায়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
৪) পোষ্যকে অ্যান্টি র্যাবিস-সহ অন্যান্য টিকা দিয়ে রাখতেই হবে। সময়ান্তরে পশু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেকআপ করিয়ে নেওয়া জরুরি।