Advertisement
E-Paper

ডাক্তারদের কানে ধরা পড়ে না, হৃৎস্পন্দনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পার্থক্যও ধরে ফেলছে এআই স্টেথোস্কোপ!

বর্তমানে ডাক্তারেরা যে স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করেন, তা প্রায় ২০০ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল। গত ২০০ বছরে আর যা-ই বদলে যাক না কেন, স্টেথোস্কোপ বদলায়নি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সেই অংশেই এ বার উঁকি দিচ্ছে এআই।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:১৫
লন্ডনে এআই স্টেথোস্কোপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

লন্ডনে এআই স্টেথোস্কোপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

হৃদ্‌যন্ত্রের ভিতর দিয়ে কী ভাবে রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে? হঠাৎ কী পার্থক্য হচ্ছে হৃৎস্পন্দনে? মুহূর্তের মধ্যে সে সব ধরে ফেলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) স্টেথোস্কোপ। দুই কানে দুই নল গুঁজে তার এক দিক রোগীর বুকে ঠেকিয়ে হৃৎস্পন্দন শোনার দিন কি তবে শেষ হতে চলেছে? চিরাচরিত সেই স্টেথোস্কোপের ধারণা বদলে দিচ্ছে এআই। ইতিমধ্যে নতুন ধরনের ডিজিটাল স্টেথোস্কোপের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে লন্ডনে। ফল অত্যন্ত সন্তোষজনক। সুতরাং আগামী দিনে বিশ্বের সব প্রান্তে এর ব্যবহার দেখা যেতে পারে।

বর্তমানে ডাক্তারেরা যে স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করেন, তা প্রায় ২০০ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল। গত ২০০ বছরে আর যা-ই বদলে যাক না কেন, স্টেথোস্কোপ বদলায়নি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সেই অংশেই এ বার উঁকি দিচ্ছে এআই। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ ডিজিটাল স্টেথোস্কোপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে। তাদের সমীক্ষায় ১৫ লক্ষের বেশি রোগীর চিকিৎসাপদ্ধতি রেকর্ড করা হয়েছে। মূলত শ্বাসকষ্ট এবং ক্লান্তির সমস্যা নিয়ে লন্ডনের ২০৫টি জেনারেল ক্লিনিকে এই রোগীরা গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৯৬টি ক্লিনিকের ১২ হাজার রোগীকে ডিজিটাল স্টেথোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। বাকিরা পেয়েছেন চিরাচরিত স্টেথোস্কোপ।

লন্ডনে ব্যবহৃত এই বিশেষ স্টেথোস্কোপের নাম দেওয়া হয়েছে ইকো ডুয়ো ডিজিটাল স্টেথোস্কোপ। ক্যালিফর্নিয়ার সংস্থা ইকো হেল্‌থ এই যন্ত্র তৈরি করেছে। ছোট্ট ত্রিভুজাকার যন্ত্রটি হৃদ্‌যন্ত্রে কান পাতে এবং দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য নির্দিষ্ট অ্যালগরিদ্‌মের মাধ্যমে একটি ইসিজি করে। গবেষকদের দাবি, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে হৃদ্‌রোগ নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া, হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা, হৃৎপ্রকোষ্ঠের রোগও নির্ণয় করতে পারে ডিজিটাল স্টেথোস্কোপ। এতে বিশেষ মাইক্রোফোন ব্যবহার করা যায়। মানুষের কানে হৃৎস্পন্দনের যে অস্বাভাবিকতা সহজে ধরা পড়ে না, তা এই যন্ত্র ধরে ফেলে অনায়াসে।

দেখা গিয়েছে, লন্ডনে যে রোগীদের উপর এআই স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁদের অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন ধরা পড়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি। এই অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসক সোনিয়া বাবু-নারায়ণ বলেন, ‘‘২০০ বছর আগে আবিষ্কৃত স্টেথোস্কোপ ২১ শতকে এসে কী ভাবে উন্নত হতে পারে, এটা তার উদাহরণ। হৃদ্‌রোগ দ্রুত নির্ণয়ের জন্য এই ধরনের আবিষ্কার আরও প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে হৃদ্‌রোগ ধরা পড়ে। তখন ডাক্তারের আর কিছু করার থাকে না। আগে থেকে হৃদ্‌রোগের সম্ভাবনা জানা গেলে তার চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে মানুষ আরও বেশি দিন বাঁচতে পারবে।’’

যদিও এখনই এই স্টেথোস্কোপ সাধারণ রোগীর উপর ব্যবহারের পক্ষপাতী নন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের মতে, হৃদ্‌রোগের সমস্যা যাঁদের আছে, সেই রোগীদের ক্ষেত্রেই এই স্টোথোস্কোপ ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহার করে হৃদ্‌রোগ নির্ণয়ে সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ ১৫ সেকেন্ড।

কলকাতার হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ধীমান কাহালি লন্ডন থেকে এই বিশেষ স্টেথোস্কোপ দেখে এসেছেন। হার্টের চিকিৎসায় এর কার্যকারিতা তিনিও মানছেন। ধীমান বলেন, ‘‘এআই-এর কাছে লক্ষ লক্ষ ডেটা থাকে। সেটা কাজে লাগিয়ে রোগনির্ণয় করা হয়। ফলে এআই স্টেথোস্কোপের কিছু সুবিধা তো রয়েছেই। আমরা যাঁরা অভিজ্ঞ চিকিৎসক, তাঁরা বিভিন্ন লক্ষণ দেখে হৃদ্‌রোগের সম্ভাবনা বুঝতে পারি। যদিও এআই-তে নিশ্চিত ভাবে অনেকটা সময় বাঁচে। তবে আমি এটাও বলব, এআই-এর হাতে সব ছেড়ে দিলে চলবে না। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ডাক্তারকেই।’’

Stethoscope Artificial Intelligence Medical Science
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy