Advertisement
০৬ মে ২০২৪
ধোনি ‘বাদ’ নন, আবার আগ্রহ নেই দলে

আপাতত খেলবেন না, ধোনি নাকি বলে রেখেছেন বোর্ডকে

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ধোনির সঙ্গে কথা বলেই আপাতত তাঁকে বাইরে রাখা হচ্ছে।

বিভ্রান্তি: ধোনিকে ঘিরে সেই ধাঁধাই। ফাইল চিত্র

বিভ্রান্তি: ধোনিকে ঘিরে সেই ধাঁধাই। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৫৭
Share: Save:

যিনি নিজে অবসর নেননি। আবার তাঁকে ‘বাদ’-ও দেওয়া হচ্ছে না। তা হলে কি তাঁর চোট? নাহ্‌, সে রকম কিছুও বলা যাচ্ছে না!মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে এমনই সব ধাঁধা অব্যাহত। বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচকেরা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল নির্বাচন করেন। তাতে প্রত্যাশা মতোই ছিল না ধোনির নাম। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জল্পনা যে, তা হলে কি এমএসডি-কে বাদ দেওয়া হল?

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ধোনির সঙ্গে কথা বলেই আপাতত তাঁকে বাইরে রাখা হচ্ছে। তাঁকে দলে না রাখার মধ্যে তাই কিংবদন্তিকে অপমান করা হল জাতীয় আবেগ ফুঁসে ওঠার কোনও জায়গাই নেই। বিশ্বকাপের পরেই জাতীয় নির্বাচকেরা ঠিক করেন, ঋষভ পন্থকে যথাসম্ভব সুযোগ দেবেন। ২০২০ এবং ২০২১ সালে পর-পর দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রয়েছে। তার জন্য যাতে তরুণ প্রতিভা ঋষভকে তৈরি করা যায়, সেই কারণেই এই সুযোগ দেওয়া। ধোনি নির্বাচকদের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং নিজেই বোর্ডকে বলে রেখেছেন, আপাতত তিনি ভারতীয় দলের হয়ে খেলবেন না।

‘আপাতত’ বলতে কত দিন চলবে এই স্বেচ্ছা অজ্ঞাতবাস, ধোনি তা খোলসা করে জানাননি। বোর্ড এবং নির্বাচকমণ্ডলীর সঙ্গে কথা হওয়ার পরেই কাশ্মীরে টেরিটোরিয়াল আর্মিতে যোগ দিতে চলে যান তিনি। ফিরে এসে নতুন কোনও বার্তা দেননি। বোর্ড বা নির্বাচকেরাও আর নতুন করে তাঁকে বাজিয়ে দেখেননি, খেলবেন কি না। পরিস্থিতি যা, যত দিন না তিনি জানাচ্ছেন, ফের খেলতে ইচ্ছুক, দলের বাইরেই রাখা হবে। বলা যেতে পারে, ধোনি, ভারতীয় বোর্ড এবং নির্বাচকমণ্ডলী— তিন পক্ষই এ ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছেছে। ধরা যাক, পরের নির্বাচনী বৈঠকেও ধোনি সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন বলে কিছু জানালেন না। নির্বাচকেরাও ফোন করলেন না। ধোনিও তা হলে দলের বাইরেই থাকবেন।

নির্বাচকদের জন্য সত্যিকারের ধাঁধা তৈরি হবে, যদি ধোনি কয়েক দিন পরে তাঁদের বলেন, এ বার খেলতে চান। তখন কি ঋষভকে বসিয়ে ফেরানো হবে কিংবদন্তিকে? শুক্রবার পর্যন্ত ধোনির দিকে ঘাড় নাড়া ব্যক্তির সংখ্যা কম। তবে কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, ঋষভের প্রতি এত তাড়াতাড়ি বেশি আস্থা দেখানো ঠিক হচ্ছে না। তাঁর উইকেটকিপিং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ব্যাট হাতেও ধারাবাহিকতা নেই। বাজে স্ট্রোকে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছেন।

তবু এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ঋষভের জায়গা হারানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁকে উইকেটকিপার ধরে নিয়েই এগোতে চাইছে ভারতীয় দল। পঞ্চাশ ওভারের খেলাতেও সামনের দিকে তাকিয়ে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হবে তাঁকে। অপ্রত্যাশিত ভাবে যদি তিনি টানা ব্যর্থ হতে থাকেন, নির্বাচকদের উপর চাপ বাড়তে পারে অন্য কাউকে আনার। সেই ‘অন্য’দের তালিকাতেও অনেক তরুণ ক্রিকেটার আছেন। ধোনির ঝাড়খণ্ডের ঈষাণ কিসান, রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ঝড় তোলা সঞ্জু স্যামসন। তবে স্যামসনের ব্যাটিং নিয়ে অনেকে উচ্ছ্বসিত হলেও তাঁর উইকেটকিপিং পন্থের চেয়েও খারাপ।

তুলনায় ঋদ্ধিমানের সম্ভাবনা ভাল কারণ দেশের মাঠে স্পিনিং উইকেট হলে ভাল উইকেটকিপার দরকার পড়বেই। সেক্ষেত্রে যদি ঋষভ অ্যান্টিগার পরে জামাইকাতেও ব্যর্থ হন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে আসন্ন টেস্ট সিরিজে ঋদ্ধির দাবি জোরালো হয়ে উঠবে। যদিও মাথায় রাখা দরকার, হোম সিরিজে এক জনই উইকেটকিপার রাখা হবে এবং ঋদ্ধিকে নিতে গেলে ঋষভকে বাইরে বসাতে হবে। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সেঞ্চুরি করে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা-ভোট অর্জন করে বসে আছেন দিল্লির তরুণ প্রতিভা। দু’টো টেস্টে ব্যর্থতার ভিত্তিতে তাঁকে বাদ দিতে চাইবেন কি না কোহালিরা, সেই প্রশ্ন থাকছে।

আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি? তাঁর ভবিষ্যৎ রূপরেখা কী? প্রাক্তন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের ঘনিষ্ঠ মহলের অনুমান, যে-হেতু নিন্দুকেরা তাঁর অবসরের দাবি তুলেছে, তিনি সেই পথে এখনই পা বাড়াবেন না। নিজের পছন্দের সময়ে চলে যাবেন। ‘‘এমনিতেও তো ধুমধাম করে প্যান্ডেল সাজিয়ে কখনওই বিদায় নেওয়ায় বিশ্বাসী নয় এম এস। তাই তাড়াহুড়ো করে ঘোষণা করারও তো দরকার নেই,’’ বলছেন এঁরা। কারও কারও আবার মনে পড়ে যাচ্ছে, ধোনির খেলাটাই তো ছিল অপেক্ষার। শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ নিয়ে গিয়ে নক-আউট পাঞ্চ মারো। কে জানে, অবসর নিয়েও হয়তো সে রকমই অপেক্ষার খেলা খেলছেন! হয়তো দেখতে চাইছেন, আগামী কয়েক মাসে ভারতীয় ক্রিকেটের স্রোত কোন দিকে যায়। উত্তরসূরি ঋষভ পন্থ কেমন খেলেন। এর পর বছর শেষ হওয়ার আগে ভারতীয় বোর্ডে নির্বাচন হবে। মসনদে ওলটপালটে অনেক হিসাবনিকাশ পাল্টে দিতেই পারে। দেশের নীল জার্সিতে যদি এর মধ্যে না-ও খেলেন, আগামী বছর আইপিএলে নিজেকে ফের প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। ঠিক তার পরেই অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ধোনি তখন ৩৯ বছর বয়সি হয়ে যাবেন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket MS Dhoni T-20 World Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE