Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Majid Biskar

‘মজিদের একটা দৌড়, কেটে গেল মোহনবাগানের তিন-চার জন ডিফেন্ডার’

ভিসার জন্য আবেদন করেছেন ‘বাদশা’। পুরনো শহরে ১১ অগস্ট অতিথি হিসেবে পা রাখতে পারেন তিনি। ১৪ অগস্ট শহর ছেড়ে চলে যাবেন মজিদ।

বলকে যখন কথা বলাচ্ছেন বাদশা মজিদ। — ফাইল চিত্র।

বলকে যখন কথা বলাচ্ছেন বাদশা মজিদ। — ফাইল চিত্র।

কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ১৭:০৫
Share: Save:

তিনি না থাকলে মজিদ বাসকরের হয়তো কলকাতায় আসাই হত না। ‘ফুটবলের মক্কা’ও দেখতে পেত না ‘বাদশা’র জাদু। ইরানি-তারকাকে শহর কলকাতায় আনার ভগীরথ ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক সত্যজিৎ মিত্র। ৩৯ বছর আগের প্রায় সব ঘটনাই তাঁর মনে রয়েছে। আনন্দবাজার-এর সামনে ডায়রির ছেঁড়া পাতা উল্টোতে বসে লাল-হলুদ-এর প্রাক্তন লেফট ব্যাক জানালেন মজিদ-আবিষ্কারের পুরনো গল্প। ইস্টবেঙ্গলে মজিদ-জামশেদের প্রথম অধিনায়ক যে তিনিই।

শতবর্ষ উদযাপনের দিন ক্ষণ জানিয়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। কাল, রবিবার মশাল র‌্যালি দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। শতবর্ষে লাল-হলুদের সেরা বিদেশি মজিদকেও আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভিসার জন্য আবেদন করেছেন ‘বাদশা’। পুরনো শহরে ১১ অগস্ট অতিথি হিসেবে পা রাখতে পারেন তিনি। ১৪ অগস্ট শহর ছেড়ে চলে যাবেন মজিদ। ১৩ তারিখের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সুদূর খোরামশায়ার থেকে মজিদ বলেন, “১৩ তারিখ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনুষ্ঠান হবে। আমার জার্সির নম্বর তো ছিল ১২।’’

মিল খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি। শতবর্ষ অনুষ্ঠানে মজিদের সঙ্গে দেখা হলে কি চিনতে পারবেন সত্যজিতবাবু? তিনি বলেন, ‘‘আমি ঠিক চিনতে পারব ওকে।’’ মজিদের কি মনে রয়েছে ইস্টবেঙ্গলে তাঁর প্রথম অধিনায়ককে? বয়স যে এখন থাবা বসিয়েছে দু’জনের চেহারাতেই। সব ঠিকঠাক থাকলে ১৩ তারিখই পুনর্মিলন হবে দু’জনের। পুরনো দিনের গল্পে হয়ত মেতে উঠবেন দু’জনে। আলাপচারিতায় উঠে আসতেও পারে মজিদের আলিগড় থেকে কলকাতায় পা রাখার পুরনো ইতিহাসও।

মজিদ ও তাঁর প্রথম অধিনায়ক সত্যজিৎ মিত্র।

কী ভাবে ইস্টবেঙ্গলে এলেন মজিদ-জামশেদ? ইউটিউব-সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন ফুটবলার খুঁজে পাওয়া খুব সহজ। আজকের দিনে যে ভাবে বিদেশি ফুটবলার বেছে নেওয়া হয়, সেই সময়ে এ ভাবে বিদেশি নির্বাচন করা হত না। ১৯৮০ সালে কোথায় সোশ্যাল মিডিয়া আর কোথায় ফুটবলারদের এজেন্ট! তখন ভাল মানের বিদেশি ফুটবলার খুঁজে বের করা রীতিমতো কঠিন ব্যাপার ছিল। মজিদ-জামশিদ তখন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় রীতিমতো নজর কাড়েন তাঁরা। সেই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় রোভার্স কাপে খেলতে যায় আলিগড় বিশ্ববিদ্যায়লয়। সত্যজিৎ বলছিলেন, ‘‘আমরা (ইস্টবেঙ্গল) সে বার রোভার্সে খেলতে গিয়েছিলাম। সে দিন আমাদের খেলা ছিল না। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেগুলো দারুণ খেলছিল। সব চেয়ে ভাল লেগেছিল ওদের এক স্টপারের খেলা। সেই স্টপারের নাম এখন আর মনে নেই। ওদের খেলা আমার চোখে লেগেছিল। ১৯৮০ সালে আমি যখন ইস্টবেঙ্গলের ক্যাপ্টেন হলাম, তখন ওদের কথা বলি আমাদের কর্তা অরুণ ভট্টাচার্যকে।’’

আরও পড়ুন: ‘ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলে ইস্টবেঙ্গলকে আশিয়ান কাপ দিয়েছিলাম, ক্লাবের শতবর্ষে ডাকই পেলাম না’

আরও পড়ুন:সেনার নির্দেশে বন্ধ ইস্টবেঙ্গল শতবর্ষে সৌন্দর্যায়নের কাজ

১৯৮০ সালে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে মহমেডানে চলে যান অনেক নামী তারকা। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সত্যজিৎবাবুরা লাল-হলুদেই থেকে যান। নতুন করে দল তৈরি করা হচ্ছিল। পাঁচ বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলা সত্যজিৎবাবু বলেন, “মহমেডান স্পোর্টিংয়ে মাসুদ বলে এক জন ছিলেন। ওঁর সঙ্গে মজিদ-জামশিদদের যোগাযোগ ছিল। মাসুদকে আমরা জিজ্ঞাসা করি মজিদদের পাওয়া যাবে কিনা। তার পরে অরুণদা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরের দিনই অরুণদা ফোন করে আমাকে বলেন, ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, স্টপারকে পাওয়া যাবে না। তবে মজিদ-জামশিদকে পাওয়া যাবে।’’ এ ভাবেই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মজিদ-জামশিদ পা রাখেন কলকাতায়। নতুন শহরে লেখেন রূপকথা।

ফেলে আসা দিন। ট্রফি জেতার পরে ইস্টবেঙ্গল।

যে স্টপারের নাম সত্যজিতবাবু ভুলে গিয়েছিলেন, তাঁর নাম আলি খোদাই। এখন তিনি ইরানে থাকেন। জামশেদ নাসিরি তাঁদের পুরনো বন্ধু আলি খোদাই সম্পর্কে বলছিলেন, ‘‘আলি এখন সরকারি কর্মী। এর বেশি কিছু জানি না ওর সম্পর্কে। অনেক দিন দেখা সাক্ষাতও হয়নি। ইস্টবেঙ্গলের খুব পছন্দ হয়েছিল আলিকে। ও আর আসতে পারেনি। আমরা এসেছিলাম।’’

প্রথম বার খেলতে এসেই ফুল ফুটিয়েছিলেন মজিদ। ইস্টবেঙ্গলও সে বার দাপটের সঙ্গে খেলেছিল। সত্যজিৎবাবু বলছেন, ‘‘১৯৮০ সালে আমরা দারুণ পারফর্ম করেছিলাম। কোনও ভারতীয় ক্লাব আমাদের হারাতে পারেনি। ফেডারেশন কাপ, রোভার্স কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।’’ মজিদের ফুটবল প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘‘১৯৮০ সালের ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচের একটা মুহূর্ত এখনও আমার চোখে ভাসে। লেফট ব্যাকে খেলছিলাম আমি। একটা বল সুইং করে ফেলেছিলাম মজিদের জন্য। ওই আমাকে হাত তুলে ইশারা করছিল। বলটা পেয়েই মজিদ এমন একটা দৌড় শুরু করল, তাতেই তিন-চার জন প্লেয়ার কেটে যায়। মোহনবাগানের গোলের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।’’ এই রকমই কত অবিস্মরণীয় মুহূর্ত যে মজিদ উপহার দিয়েছিলেন কলকাতার ফুটবল-ভক্তদের, তার ইয়ত্তা নেই।

ইস্টবেঙ্গলকে সাফল্য দিয়ে পরের বছরই মোহনবাগানে চলে যান সত্যজিৎবাবু। সেখান থেকে মহমেডানে। সাদা-কালো শিবিরে ফের দেখা হয় মজিদের সঙ্গে। তার পরে কী ভাবে যে কলকাতা ছেড়ে ইরানে চলে গেলেন মজিদ, তা রহস্যের। ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষে আবার পুরনো শহরেই ফিরছেন ‘বাদশা’। তাঁর সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেবেন প্রাক্তন অধিনায়ক। গল্পে গল্পে ফিরে যাবেন ফেলে আসা দিনে। আপাতত সেই দিনের প্রতীক্ষাতেই সত্যজিৎ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Majid Biskar East Bengal Satyajit Mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE