দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে বন্দির নাগাল পেলেন জেলকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে কাটমানির অভিযোগ নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব বিরোধীরা। শনিবার সেই কাটমানি-অভিযোগ ঘিরেই হুলস্থুল বাধল হাওড়া জেলা সংশোধনাগারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘড়ির কাঁটা তখন সবে সাড়ে ১০টা পেরিয়েছে। হঠাৎ হাওড়া জেলা সংশোধনাগারের দিক থেকে ভেসে আসে তীব্র চিৎকার। সকলেরই চোখ চলে যায় সে দিকে। দেখা যায়, এক বন্দি জেলের ছাদে উঠে পড়েছেন। সেই সঙ্গে তার স্বরে চিৎকার, ‘‘কাটমানি দেব না, কাটমানি দেব না।’’ জেলের ছাদে এমন নাটকীয় দৃশ্য ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহলীদের ভিড় জমতে থাকে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ওই বন্দির চিৎকার।
বিষয়টি নজরে আসে জেল কর্তৃপক্ষেরও। ওই বন্দিকে নামানোর চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু জেলকর্মীরা তাঁকে নামানোর চেষ্টা শুরু করতেই পাল্টা আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকেন ওই বন্দি। তত ক্ষণে অবশ্য খবর দেওয়া হয়েছে দমকলকে। জেলে এসে পৌঁছেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও। পুলিশ, দমকল আর ওই বাহিনী— সম্মিলিত ভাবে ওই বন্দিকে নীচে নামানোর চেষ্টা শুরু হয়। তত ক্ষণে জেলের আশপাশে সাধারণ মানুষের ভিড় বেড়েছে অনেক। ‘জেলের ভিতরেও কাটমানি!’— এই নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন। চিৎকার করতে করতে ওই বন্দি বলছিলেন, জেলের ভিতর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া নাম করে ‘কাটমানি’ নেওয়া হয়। এমনকি সেখানে নানা ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ চলে বলেও ওই বন্দিকে বলতে শুনেছেন প্রতক্ষ্যদর্শীরা।
আরও পড়ুন: পুরভোটের নির্ঘণ্ট নিয়ে রাজ্যের মত জানতে চিঠি কমিশনের
তিন দফতরের কর্মীরা এক জোট হলেও, সহজে কাজ হাসিল হয়নি। প্রথমে ওই বন্দির নাগালই পাননি তাঁরা। যখন পেয়েছেন, তখন তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেওয়া শুরু করেছেন। জেলের ছাদের উপরে কার্যত শুরু হয়ে যায় ‘চোর-পুলিশ’ খেলা। শেষ পর্যন্ত অনেক কসরতের পর ওই বন্দিকে কব্জায় আনতে পারেন জেলকর্মীরা। তত ক্ষণে বন্দি ও জেলরক্ষী সকলেরই গলদঘর্ম অবস্থা।
ওই বন্দিকে অবশ্য সহজে মাটিতে নামানো যাযনি। লাগাতার পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টার পর, বিকেল চারটে নাগাদ তাঁকে ছাদ থেকে পাঁজাকোলা করে নামিয়ে আনা হয়। দমকলের ল্যাডারে চড়ে মাটিতে পা রাখতেই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন সকলে।
হাওড়া জেলা সংশোধনাগার সূত্রে খবর, মহম্মদ সোহেল নামে ওই বন্দি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছেন। হেস্টিংস থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। গত বছর মার্চ মাসে তাঁকে প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে হাওড়া জেলে আনা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ১৩ হাজার ২০০ ফোন পেয়েও নিষ্ক্রিয় ছিল দিল্লি পুলিশ! প্রকাশ্যে নয়া অভিযোগ
জেল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বন্দি হিসাবে সোহেলের রেকর্ড বেশ খারাপ। বার বার জেলের যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানোর আবদার করতেন সোহেল। তা না হওয়ায় মেডিক্যাল অফিসারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন তিনি। শাস্তি হিসাবে তাঁকে নির্দিষ্ট সেলে রেখেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও বদলাননি সোহেল। শেষ পর্যন্ত তাঁকে আনা হয় হাওড়া জেলা সংশোধনাগারে।
কিন্তু সোহেলের এ দিনের কীর্তিতে চোখ কপালে উঠেছে জেল কর্তৃপক্ষের। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এড়িয়ে কী ভাবে সোহেল সংশোধনাগারের ছাদে উঠে পড়লেন, সেই প্রশ্ন উঠে আসছে। এ নিয়ে তদন্তও শুরু করেছে জেল কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁরা, এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy