প্রতীকী ছবি
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রাজ্যের একমাত্র সরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ককে কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তার পন্থা খুঁজতেই এখন ঘুম ছোটার জোগাড় স্বাস্থ্যকর্তাদের।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ৬ অগস্ট ঘোষণা করেছেন, ‘‘কোভিড রোগীদের প্লাজ়মা থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, সরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ককে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে।’’
এর পরেই তৎপরতা শুরু হয় স্বাস্থ্য দফতরে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ঘোষণাকে সাধারণত সরকারি নির্দেশের সমতুল্য বলেই ধরা হয়। ফলে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ককে কী ভাবে কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়, তা ঠিক করতে ট্রপিক্যাল কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ যায়। তখনই প্রকাশ্যে আসতে থাকে একের পর এক জটিলতা।
ট্রপিক্যালের ‘রিজেনারেটিভ মেডিসিন’ বিভাগ সূত্রের খবর, ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি ছাড়াই বেশ কয়েক বছর ট্রপিক্যাল ও বিদ্যাসাগর হাসপাতালের অনেক রোগীকে পরীক্ষামূলক ভাবে কর্ড ব্লাড থেরাপি দেওয়া হয়েছিল। বিতর্ক ও সমালোচনায় তা বন্ধ হয়ে যায়।
এর পরে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল থেকে ওই কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের যে লাইসেন্স মিলেছে, তাতে শুধু সেখানে কর্ড ব্লাড সংগ্রহ ও ‘অটোজেনাস থেরাপি’ করা যাবে। অর্থাৎ, যে শিশুর কর্ড ব্লাড সংরক্ষিত আছে, ভবিষ্যতে সেই কর্ড ব্লাড শুধু তাকেই দেওয়া যাবে। এখন প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কি তবে মানা যাবে না?
স্বাস্থ্যকর্তাদের মুখরক্ষার প্রশ্নও রয়েছে। কারণ, প্রায় ৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ওই কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য কেনা হয়েছে। প্রতি মাসে ওই ব্যাঙ্ক সচল রাখতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ‘রি-এজেন্ট’ কিনতে হয়। তার উপরে রয়েছে সেখানকার গবেষক ও কর্মীদের বেতনের বিপুল খরচ। অথচ, এই ব্যাঙ্ককে জনস্বার্থের প্রায় কোনও কাজেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে এক সময়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
এখন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও কোভিড চিকিৎসায় ওই কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ককে ব্যবহার করা না-গেলে সেই সমালোচনাতেই সিলমোহর পড়বে। সেই কারণেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে ট্রপিক্যালের উপরে চাপ দেওয়া শুরু হয় বলে খবর।
শেষে গত ১৮ অগস্ট ট্রপিক্যালের নীতি-নির্ধারক কমিটি জানায়, কোভিড মোকাবিলায় কর্ড ব্লাড থেরাপি কতটা কাজ করছে, তা জানতে ‘অবজ়ারভেশনাল স্টাডি’ করা যাতে পারে। অর্থাৎ, ট্রপিক্যাল সরাসরি কোভিড রোগীকে এই থেরাপি দেবে না। বাইরের চিকিৎসকেরা কিছু কোভিড রোগীকে তাদের অনুমতির ভিত্তিতে এই থেরাপি দেবেন। ট্রপিক্যালের বিজ্ঞানীরা তার ফলাফল নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে রিপোর্ট দেবেন। তার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
২১ অগস্ট রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে এই ‘অবজ়ারভেশনাল স্টাডি’ পরিচালনার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়া এবং আইসিএমআরের অনুমতি নিতে বলেন।
কিন্তু এমন ডাক্তারদের কোথায় পাওয়া যাবে, যাঁরা স্বেচ্ছায় ঝুঁকি নিয়ে কোভিড রোগীদের কর্ড ব্লাড থেরাপি দেবেন? তা ছাড়া, থেরাপির জন্য এক-এক জনকে অন্তত চার জনের কর্ড ব্লাড দিতে হবে। তা মিলবে কী ভাবে? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথমে ঠিক হয়েছিল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এটা করা হবে। কিন্তু পরে সেখানকার চিকিৎসকেরা বেঁকে বসেন। এখন এম আর বাঙুরে তা করার চেষ্টা চলছে।
ট্রপিক্যালের নীতি-নির্ধারক কমিটির প্রধান চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠীর কথায়, ‘‘কর্ড ব্লাডে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা কোভিড রোগীদের পক্ষে খুবই উপযোগী। কিন্তু এই থেরাপি দেওয়ার জন্য আগে কোনও চিকিৎসককে রাজি হতে হবে তো।’’
ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি আদায় করাটাও কঠিন। রিজেনারেটিভ মেডিসিন বিভাগ তথা কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান নিরঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ড্রাগ কন্ট্রোলে এই কাজ বোঝার লোক কোথায়? ওদের অনুমতি দেওয়ার যোগ্যতা কতটা? কিন্তু নিয়ম মানতেই হবে। কী ভাবে দ্রুত রক্তের ক্রস-ম্যাচিং করে এই থেরাপি চালু করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy