মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী তখন খুব কাছেই নেতাজি ইন্ডোরে কলকাতা বন্দরের ১৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
কলকাতায় সিএএ-বিরোধী সমাবেশে, মিছিলে বারবারই উড়েছে ভগত সিংহ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছবি দেওয়া পতাকা। ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে রবিবার সকালে তা দ্বিগুণ উৎসাহে ওড়ালেন প্রতিবাদীরা। কারণ, শনিবার শহরে এসে বিপ্লবীদের কথাই তো বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই ‘গো-ব্যাক মোদী’ বিক্ষোভে পাল্টা ‘অস্ত্র’ প্রীতিলতারাও।
সারা রাত তো নিদ্রাহীন, ক্লান্ত লাগছে না? কয়েক জন আন্দোলনকারী সমস্বরে জানালেন, যত ক্ষণ শহরে নরেন্দ্র মোদী থাকবেন, আন্দোলন চলবে। মোদীর শহর ছাড়ার কথা জেনে দুপুর দেড়টা নাগাদ অবস্থান-বিক্ষোভ স্থগিত হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতিবাদের সেই অফুরান শক্তি নজরে পড়ছিল ওয়াই চ্যানেলে।
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা। সারা রাত জাগার পরেও আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ হাতে মাইক ধরে তখনও স্লোগান দিচ্ছেন। কেউ আবার ছোট মালবাহী গাড়ির উপরে উঠে বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। চার দিকে উড়ছে পতাকা। ভগত সিংহ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছাড়া হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মঘাতী দলিত গবেষক রোহিত ভেমুলার ছবিও ছিল এ দিনের পতাকায়। ‘গো ব্যাক নরেন্দ্র মোদী’ লেখা বেলুন বিলি করছিলেন কয়েক জন আন্দোলনকারী। রাস্তার উপরেই স্প্রে রং ছিটিয়ে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান লেখা চলছিল। আবার বিক্ষোভকারীদের সীমাবদ্ধ রাখার জন্য পুলিশের যে-গার্ডরেল ছিল, তাতেই ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল পোস্টার— রাস্তা বন্ধ, দেশ মেরামতের কাজ চলছে। যে ছবি নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২০১৮-র জুলাইয়ে ঢাকায় পথদুর্ঘটনায় দুই কলেজছাত্রের মৃত্যুর পরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে যুব-বিক্ষোভ গর্জে উঠেছিল, তাতেও দেখা গিয়েছিল ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ পোস্টার।
ওঠো, জাগো, লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগে থেমো না— স্বামী বিবেকানন্দ
অনড়: ধর্মতলায় রবিবার সকালেও চলল মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ অবস্থান। ছবি: রণজিৎ নন্দী
পড়াশোনার সূত্রে এ শহরেই থাকেন কাশ্মীরের বাসিন্দা মজিদ লোন। মৌলানা আজাদ কলেজের স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষের ওই পড়ুয়া সারা রাত ওয়াই চ্যানেলে ছিলেন। বলছিলেন, ‘‘কেন্দ্র একের পর এক ভুল নীতি আনছে। যার জেরে বোধহয় সব থেকে বেশি ভুগছেন কাশ্মীরের মানুষ। ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। স্কুল-কলেজ বন্ধ। এ বার আবার নতুন নাগরিকত্ব আইন এনে সারা দেশে বিভাজন করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে যত দিন পথে থাকতে হয়, থাকব।’’ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর মনীষা শর্মা অসমের বাসিন্দা। এখন তিনি যাদবপুরে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। মনীষা বলেন, ‘‘দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে। ছাত্র সমাজের উপরে হামলাই প্রমাণ করছে দেশ চালানোয় এই সরকার অদক্ষতা।’’
আরও পড়ুন:
রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করলেন, এই প্রশ্নও ঘুরছিল জমায়েতে। বেশির ভাগেরই মত, সিএএ বিরোধিতার আন্দোলনে ভুল বার্তা দিল এটি। সকালেই সাইকেলে ওয়াই চ্যানেলে চলে এসেছিলেন বেলেঘাটার বাসিন্দা সব্যসাচী চৌধুরী। ক্ষুব্ধ সব্যসাচীর কথায়, ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে!’’
কলকাতায় বেড়াতে এসে ওয়াই চ্যানেলের বিক্ষোভ দেখে অবাক এক ফরাসি দম্পতি। তাঁদের কথায়, ‘‘ভাষা না বুঝলেও এ টুকু বুঝেছি সরকারের বিরুদ্ধে কোনও জোরাল দাবি রয়েছে নাগরিকদের। এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ মন ছুঁয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy