Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বরাবর বিতর্কে এই তৃণমূল কাউন্সিলর, এ বার পুলিশকর্মীকে প্রকাশ্যে খুনের হুমকি গুসকরার মল্লিকার!

কাঁকসার কাছে সোঁয়াই গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ির মেয়ে মল্লিকাদেবী।

মল্লিকা চোংদার।

মল্লিকা চোংদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুসকরা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share: Save:

দলের লোক থেকে বিরোধীদের কাছে তিনি পরিচিত ‘ফুলন দেবী’ নামে। তাঁর রোষানলে পড়েছেন দলের বহু নেতা। সম্প্রতি ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এক পুলিশকর্মীকেও প্রকাশ্যে রাস্তায় খুনের হুমকি দিচ্ছেন গুসকরা পুরসভার বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর মল্লিকা চোংদার। যদিও আনন্দবাজার ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।

জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের হুমকিতে পুলিশকর্মীদের মধ্যে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

কাঁকসার কাছে সোঁয়াই গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ির মেয়ে মল্লিকাদেবী। বর্ধমানের রাজ পরিবার শহরের মিঠাপুকুর এলাকায় এক সময় তিনটে বাড়ি দান করেছিল এই পরিবারকে। মল্লিকাদেবীর বাবা সুধীর মুখোপাধ্যায় (‌গোপাল) ছিলেন মঙ্গলকোট-গুসকরা এলাকার সিপিএমের ডাকসাইটের নেতা। পরে গুসকরা জমিদার বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পরে তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়ান মল্লিকাদেবী। তারপর থেকে টানা জিতে চলেছেন। যত দিন গিয়েছে ‘বিতর্ক’ও জড়িয়েছেন তত।

মল্লিকা-নামা

কাঁকসার সোঁয়াই গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ির মেয়ে। বাবা সুধীর মুখোপাধ্যায় (‌গোপাল) মঙ্গলকোট-গুসকরা এলাকার সিপিএমের এক সময়ের ডাকসাইটে নেতা। ১৯৯৮ থেকে টানা চারবারের গুসকরা পুরসভার কাউন্সিলর। ২০০৮ সালে উপপুরপ্রধান। বহু বিতর্কে নাম জড়িয়েছে। পুরসভার সামনে বোমাবাজি, পুরসভার মধ্যে চুলোচুলি, দলের একাধিক নেতার সঙ্গে মতবিরোধ। সম্প্রতি একটি ভিডিয়োয় পুলিশকে ‘হুমকি’ দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

এলাকায় দলেরই এক নেতার দাবি, “ফুলন দেবীর মতো মল্লিকাদেবীর ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী রয়েছে। সেই বাহিনী দিয়েই অনাস্থা ভোটের দিন আর এক কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে শায়েস্তা করেছিলেন মল্লিকাদেবী। তাঁর জন্যই বুর্ধেন্দু রায় টানা পাঁচ বছর গুসকরার চেয়ারম্যান রয়ে গেলেন।’’ ওই ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ২৯ মে। সে দিন পুরসভার বাইরে বোমাবাজিরও অভিযোগ ওঠে মল্লিকাদেবীর বাহিনীর বিরুদ্ধে।

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর পুরপ্রধান নির্বাচনের দিন দলের তরফে একটি নাম ঠিক করে ওকটি খাম পাঠানো হয়। সেই নাম পছন্দ হয়নি মল্লিকাদেবীর। রাজ্য নেতাদের সামনেই দলবল নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তিনি। ভেস্তে যায় ভোট। পরে ৫ নভেম্বর তৎকালীন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে বুর্ধেন্দু রায় পুরপ্রধান হন।

এর আগে ২০০৮ সাল থেকে পুরসভার উপপুরপ্রধান ছিলেন মল্লিকাদেবী। তখনও তৎকালীন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইয়ের (এখন বিজেপিতে) সঙ্গে বারবার অশান্তিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন এক সময়। পরে দু’পক্ষের ঠোকাঠুকিতে ‘লাটে ওঠে’ পুরসভা। গত পুরবোর্ডে আবার আর এক প্রবীণ কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক অশান্তিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ ওই দুই নেতা-নেত্রীর মধ্যে ‘চুলোচুলি’র ঘটনা ঘটে পুরসভার অন্দরেই। গত বছরের ২৭ জুলাই নিত্যানন্দবাবুর বাড়ির সামনে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ ওঠে তাঁর নামে। সেই ভিডিয়োও ‘ভাইরাল’ হয়। এ ছাড়া, পুরসভার একাধিক কাজ নিয়ে মতবিরোধ, দলের উপরতলার কাছে নালিশ ছিলই। তাতে সাম্প্রতিক সংযোজন গুসকরা ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব ইনস্পেক্টর স্নেহময় চক্রবর্তীকে ‘হুমকি’।

যদিও এ সব নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি নিত্যানন্দবাবু। গুসকরা শহর সভাপতি কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, “দলের সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগ নেই। পুলিশকর্মীকে এই ভাষা বললে অন্যরা কী শিখবে? আমরা খুবই বিব্রত ও লজ্জিত।’’ আর মল্লিকাদেবীর কথায়, “আমি তৃণমূলেই আছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। তার জন্য গ্রেফতার হলে হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Viral Video Mallika Chongdar Guskara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE