Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

২০০-র বেশি নমুনা, সব নেগেটিভ! অধীর-গড়ে ঢুকতে ‘ভয় পেল’ করোনাও?

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং নাইসেড সূত্রের খবর, মোট ২১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ২০:৫৬
Share: Save:

অন্তত ২০ বছর ধরে গোটা জেলাটা পরিচিত তাঁর গড় হিসেবে। কারণ তাঁর উত্থানের পর থেকে তাঁর জেলায় দাঁত ফোটাতে পারেনি কোনও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ঘোর বাম জমানায় জেলার দখল নেন সিপিএম-আরএসপির সাঁড়াশি আক্রমণ ভেঙে। পরে দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূলকেও রুখেছেন অধিকাংশ নির্বাচনেই। এ বার নোভেলকরোনা ভাইরাসেরও যেন সেই একই দশা অধীররঞ্জন চৌধুরীর দুর্গে। নমুনা পরীক্ষা দ্বিশতাধিক। কোভিড-১৯ পজিটিভ এক জনও নন! জেলার লোকজন ঠাট্টার ছলে বলছেন, ‘‘এটা অধীরের জেলা, করোনাও ঢুকতে ভয় পায়।’’ তবে অধীর নিজে কিন্তু বলছেন, পরিস্থিতি যেমন দেখানো হচ্ছে, তেমন নয় জেলায়।

পরিস্থিতি কেমন মুর্শিদাবাদে? প্রশাসন বলছে, জেলা থেকে পাঠানো কোনও নমুনার টেস্টিং রিপোর্ট কোভিড-১৯ পজিটিভ আসেনি এখনও পর্যন্ত। সালারের এক বাসিন্দার টেস্টিং রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল বলে খবর। তবে তাঁর লালারসের নমুনা জেলার কোনও হাসপাতাল পরীক্ষার জন্য পাঠায়নি। তিনি ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুরপুকুর এলাকার এক হাসপাতালে। তাঁর মূল অসুস্থতার পাশাপাশি অন্য কিছু উপসর্গ দেখে সেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। তখন সেই হাসপাতালের তরফ থেকেই ওই ব্যক্তির কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা হয়। ওই ব্যক্তির বাইরে মুর্শিদাবাদ জেলার কোনও বাসিন্দারই টেস্টিং রিপোর্ট এখনও পজিটিভ আসেনি বলে জেলার স্বাস্থ্য দফতরের দাবি।

ঠিক কত জনের নমুনা এখনও পরীক্ষা করিয়েছে জেলার স্বাস্থ্য দফতর? মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং নাইসেড সূত্রের খবর, মোট ২১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত। তাঁদের কারও রিপোর্টই পজিটিভ নয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস অবশ্য নমুনা পরীক্ষার ওই সংখ্যা সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি। সংখ্যাটা আরও বেশি, নাকি কম, কোনও বিষয়েই তিনি মন্তব্য করতে চাননি। তবে কারও রিপোর্টই যে পজিটিভ নয়, সে কথা তিনিও জানিয়েছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের (সিএমওএইচ) কথায়, ‘‘আগে আমরা নমুনা শুধু নাইসেডে পাঠাচ্ছিলাম। কারণ আমাদের এখানে টেস্টিং হচ্ছিল না। পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও টেস্টিং চালু হয়েছে। ফলে এখন আর নমুনা বাইরে পাঠাতে হচ্ছে না। কিন্তু নাইসেড হোক বা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ, যত পরীক্ষা আমরা করিয়েছি, সব রিপোর্টই নেগেটিভ।’’

আরও পড়ুন: রাজ্যে ১০৫ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, তবে করোনার কারণেই মৃত ৩৩: নবান্ন

মুর্শিদাবাদ জেলার এই পরিসংখ্যানের কারণেই এক বারের জন্যও সে জেলার নাম রেড জোনে ঢোকেনি। এমনকি অরেঞ্জ জোনেও নয়। শুরু থেকেই মুর্শিদাবাজ জেলা গ্রিন জোনে, এখনও তাই। অথচ জনঘনত্ব সে জেলায় যথেষ্টই। এবং মুর্শিদাবাদ থেকে দেশের নানা প্রান্তে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাও প্রচুর হওয়ায় গোটা বছরই দেশের নানা প্রান্ত থেকে মুর্শিদাবাদে লোকজনের যাতায়াত লেগেই থাকে।

তা সত্ত্বেও কোন ম্যাজিকে এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ করোনামুক্ত! হালকা মেজাজের অরাজনৈতিক আলোচনায় কেউ বলছেন, ‘‘অধীর চৌধুরীকে করোনা-ও ভয় পায়। এ জেলায় ঢোকা অত সহজ নয়।’’ কেউ আবার হাসতে হাসতে সংযোজন করছেন, ‘‘আরে বাবা, সিপিএম-তৃণমূলই ঢুকতে পারল না দাদার (অধীরের) গড়ে, করোনা ঢুকবে কোথা থেকে!’’

আরও পড়ুন: শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স-সহ করোনা আক্রান্ত ৬, কোয়রান্টিনে ১৫

অধীর চৌধুরী নিজে কিন্তু এই চর্চাকে বেশি প্রশ্রয় দিতে নারাজ। জেলার মানুষ মজা করে কী বলছেন, সে সব শুনে প্রথমে খুব একচোট হা-হা করে হাসছেন মুর্শিদাবাদের ‘রবিনহুড’। বলছেন, ‘‘করোনাকে কে ঢুকতে দিতে চায় বলুন? আমরা চাই করোনা আমাদের করুণা করুক।’’ কিন্তু বাস্তবে নোভেল করোনাভাইরাস মুর্শিদাবাদ জেলাকে করুণা করেছে বলে অধীর মনে করছেন না। জেলা প্রশাসন যতই জানাক, সব রিপোর্ট নেগেটিভ, অধীর বলছেন, ‘‘ওই রিপোর্টের কোনও মূল্য নেই।’’

কেন মূল্য নেই? লোকসভার প্রধান বিরোধী পক্ষের নেতা তথা বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ বলছেন, ‘‘প্রথম থেকেই তো তথ্য গোপন করা হচ্ছে। যে সরকার নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছে যে, করোনা হলেও করোনা বলা যাবে না, যে সরকার নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছে যে, করোনায় কেউ মারা গেলেও ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে কোথাও করোনা লেখা যাবে না, সেই সরকারের কথায় বিশ্বাস করা যায়?’’ অধীরের কথায়, ‘‘করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনও সত্যি কথা রাজ্য সরকার বলছে না। সারা ক্ষণ তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাকে দিয়ে প্রেস ব্রিফিং করাচ্ছে। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই দেখছি, কোনও চিকিৎসক বা কোনও মহামারি বিশেষজ্ঞ নন, করোনার ব্যাপারে যা বলার, সবই বলছেন এক জন আমলা।’’

তৃণমূল অবশ্য দু’রকম তত্ত্বের কোনওটাকেই গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। ‘অধীরের গড়ে করোনা-ও ঢুকতে পারে না’ অথবা ‘সরকার তথ্য গোপন করছে’— এই দুই চর্চার কোনওটাতেই আগ্রহ নেই রাজ্যের শাসক দলের। জেলা তৃণমূলের পরিচিত মুখ তথা ডোমকলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিক হোসেন তাই বলছেন, ‘‘ও সব ফালতু কথায় কান দিয়ে লাভ নেই। কংগ্রেস-সিপিএম বা বিজেপি অনেক কথা বলবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই সঙ্কটের সময়ে ওঁদের কাউকে রাস্তায় নেমে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। যা করার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন শুরু থেকেই যে ভাবে তৎপরতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলেছে, তার ফলেই মুর্শিদাবাদ জেলা নিরাপদে রয়েছে।’’ সৌমিকের কথায়, ‘‘কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি ঘরে বসে রয়েছে তো, তাই কোনও কাজ নেই। আর কাজ নেই বলেই ভুল বকছে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE