Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতায় পিছিয়ে ৫০ কাউন্সিলর, মমতার বাড়ির ওয়ার্ডেও পদ্মে ঢাকল ঘাসফুল

পদ্মঝড়ে কেঁপে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরও। এমনকি তাঁর বাড়ি যেখানে, সেই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০৩:২৬
Share: Save:

লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, কোনও কাউন্সিলর ‘লিড’ দিতে না-পারলে আগামী পুরভোটে তাঁকে প্রার্থীই করা হবে না। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই ফরমান মানতে গেলে কার্যত ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার অবস্থা হতে পারে শাসক দলে। কারণ, লোকসভা ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট, প্রাথমিক ভাবে কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তত পঞ্চাশ জন কাউন্সিলর নিজেদের ওয়ার্ডে পিছিয়ে আছেন!

ফলাফল দেখে মেয়র ফিরহাদ হাকিমও হতবাক। ‘‘গত জানুয়ারিতে পুরভোটে আমি জিতেছিলাম ১৪ হাজার ভোটে। সেটা কমে এ বার হয়েছে ১১০০! আসলে ধর্মীয় মেরুকরণের সুড়সুড়ি দিয়েই এ বার ভোট হল। এই প্রবণতা বাংলায় বেশি দিন টিকবে না,’’ বলেন ফিরহাদ।

পদ্মঝড়ে কেঁপে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরও। এমনকি তাঁর বাড়ি যেখানে, সেই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। তাতে হতবাক হয়ে গিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রতন মালাকার। পিছিয়ে থাকার প্রবণতা শুধু তাঁর ওয়ার্ডে নয়, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আটটি ওয়ার্ডের মধ্যে ছ’টিতেই (৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩ এবং ৭৪) এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তার মধ্যে রয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নিজস্ব এলাকার ওয়ার্ডও। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুরের গড় তৃণমূলের দখলেই রয়েছে। সেটা সম্ভব হয়েছে ফিরহাদের ওয়ার্ড ৮২ নম্বর (লিড ১১০০) এবং ৮২ নম্বর (লিড ১৭,০০০) ওয়ার্ডের সৌজন্যে।

বিজেপি জোর ধাক্কা দিয়েছে রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রেও। সেখানে পিছিয়ে পড়ার তালিকায় আছেন ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র-পারিষদ দেবাশিস কুমার, ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেয়র-পারিষদ রতন দে-রা। কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের বেহালা এলাকায় পিছিয়ে পড়েছেন মেয়র-পারিষদ, ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারক সিংহ। এর পরেও বালিগঞ্জ, কসবা ও বন্দরের সংখ্যালঘু এলাকার ভোট পেয়ে ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় দেড় লক্ষাধিক ভোটে জিতেছেন। কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের অধীন বালিগঞ্জ বিধানসভা আসনের ৬০ এবং ৬১ ওয়ার্ডে তৃণমূল ‘লিড’ দিয়েছে যথাক্রমে ১৬ হাজার এবং ৯৫০০ হাজার ভোটের। আর কসবার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের লিড পেয়েছেন মালাদেবী।

দক্ষিণের মতো বিজেপির চোরা স্রোত এ বার ভাসিয়ে দিয়েছে উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের গোটা কুড়ি ওয়ার্ডকেও। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল দলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়া লক্ষের বেশি ভোটে জিতলেও সেখানকার শ্যামপুকুর ও জোড়াসাঁকো বিধানসভা এলাকায় এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে মাত্র ৮৬০ ভোটে ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। এবং ওই লোকসভা কেন্দ্রেও জয়ের পিছনে রয়েছে এন্টালি, বেলেঘাটা, চৌরঙ্গি বিধানসভা এলাকার সংখ্যালঘু ওয়ার্ড। সংখ্যালঘু ওয়ার্ড বলে পরিচিত ৫৪ নম্বরে ১৯ হাজার, ৬২ নম্বরে বিজেপির থেকে ১৫ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছে শাসক দল।

ভোটের ফলাফল বলছে, গোটা বড়বাজার এলাকা গেরুয়া শিবিরের পক্ষে। উত্তর কলকাতার ৬০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬, ১৩, ১৮, ২০, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩১, ৩৮, ৪০, ৪১ ৪২, ৪৪, ৪৭, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৫ এবং ৫৮ নম্বরে পিছিয়ে তৃণমূল। পুরসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে ওই সব ওয়ার্ডে তারা জিতেছিল ১০০০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত ভোটে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, জোড়াসাঁকোর বিধায়ক স্মিতা বক্সী এ বার নিজের ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছেন চার হাজারের বেশি ভোটে। ৫৮ নম্বরে ৫০০ ভোটে পিছিয়ে পড়েছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র-পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। কী এমন ঘটল যে, লোকসভা ভোটে শাসক দলের এই বিপরীত ফল হল?

দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহার কথায়, ‘‘অবিশ্বাস্য! ভোট পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে ওঁদের কোনও মিটিং-মিছিল চোখে পড়ল না। ভোটের দিন এজেন্ট নেই। ছোটাছুটিও নেই। অথচ ফলাফলে দেখলাম, আমাদের ভোট অনেক কমে গিয়েছে। কোথাও কোথাও পিছিয়ে পড়েছি।’’ বিজেপির এই চোরা হাওয়া তাঁরা ধরতে পারেননি, মানছেন সাধনবাবু।

আর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর, বড়বাজারের বিজয় ওঝার কথায়, ‘‘এ বার আমাদের লক্ষ্য কলকাতা পুরসভা। যে-ধাক্কা দিয়েছি, তা জারি থাকবে পুরসভার ভোটেও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE