সুদেষ্ণা দত্তগুপ্ত। ফাইল চিত্র
গোল চশমার ও’পারে উদ্ভাসিত দু’টি চোখ সঙ্কল্পে স্থির। বিজেপি কর্মীদের নিশানা হয়েও দৃষ্টি অচঞ্চল। সামনে রথারূঢ় দিলীপ ঘোষ। যিনি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-বিরোধী তথাকথিত ‘দেশদ্রোহী’দের গুলি করার হুমকি দিয়ে থাকেন। তাতেও আনখশির নিরুদ্বেগ! পাটুলিতে বৃহস্পতিবার বিজেপির হাতে হেনস্থা হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও তেমনই অকুতোভয় গলার স্বর।
দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে শুক্রবার পাটুলি থানায় এফআইআর করার পরে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের ছাত্রী সুদেষ্ণা দত্তগুপ্ত বলছেন, ‘‘অনেকেই জানতে চাইছেন, একা প্রতিবাদ করতে এবং তার পরে থানায় অভিযোগ করতে ভয় করল না? আমি বলছি, না! ভয়ের কী আছে? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিএএ, এনআরসি, এনপিআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। অন্যায় তো করিনি!’’
পাটুলির বাসিন্দা ২৩ বছরের সুদেষ্ণা বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ খবর পান, মিনিট কুড়ির মধ্যে দিলীপবাবু তাঁর পাড়ায় আসছেন সিএএ-র সমর্থনে মিছিল করতে। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের খবর দেন বিক্ষোভ দেখাতে আসার জন্য। কিন্তু অত দ্রুত কোনও বন্ধুর পক্ষে পাটুলি পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। অগত্যা একাই বেরিয়ে পডেন পোস্টারে প্রতিবাদ লিখে। বিজেপির মিছিল যেখানে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকায়, তার পাশে ফুটপাথে একাই দাঁড়ান সুদেষ্ণা। এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হাতে হেনস্থা হতে হয় তাঁকে।
আরও পড়ুন: কৈলাসের কাছে নিভৃতেও ‘ক্ষোভ’ এ বার ধনখড়ের
অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা)-এর প্রাক্তন সদস্য সুদেষ্ণা এখন নিজেকে ‘ব্যক্তি বামপন্থী’ বলেন। এখন তিনি কোনও সংগঠনে যুক্ত নন। তবে তাঁর বন্ধুদের মধ্যে বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন এবং টিএমসিপি-র কর্মীরাও আছেন। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে সুদেষ্ণা উদ্বিগ্ন না হলেও তাঁরা কিঞ্চিৎ চিন্তিত। সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘বন্ধুরা বলছে, একদম ঠিক করেছিস! তবে সাবধানে থাকিস। ওরা আবার পরে ঝামেলা না করে।’’ বন্ধুদের আশ্বস্ত করে সুদেষ্ণা বলছেন, ‘‘পাটুলিতে যে বিজেপি সমর্থকরা আছেন, তাঁরা গুন্ডামি করার মানুষ নন। বৃহস্পতিবারের ঘটনার সময় তাঁরা ছিলেন না। বিজেপি ওই দিন বাইরে থেকে লোক এনেছিল।’’
আরও পড়ুন: দলের বুথের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা
আর বাবা-মা? তাঁরা কী বলছেন? গুয়াহাটিতে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুদেষ্ণার বাবা চয়ন দত্তগুপ্ত বিজেপির সমর্থক। কিন্তু তিনিও মেয়ের এই কাণ্ডে বিচলিত হয়ে পড়েননি। সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘বাবা শুধু বলেছেন, ঠিকই আছে। কিন্তু একা গেলি কেন?’’ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত অসমে পড়াশোনা করে একাদশ শ্রেণিতে কলকাতার স্কুলে ভর্তি হন সুদেষ্ণা। তখন থেকে মা-র সঙ্গে পাটুলিতে থাকেন। সুদেষ্ণার বক্তব্য, ‘‘মা-ও বারণ করেননি প্রতিবাদ করতে। শুধু বলেছেন, সাবধানে পা ফেলতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy