Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Jammu And Kashmir

হাঁড়ি চড়ল না বাহালনগরে, পূর্ব পরিকল্পিত খুন বলে কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপালেন মমতা

বৃহস্পতিবার ভোরেই স্থানীয় পাঁচ বাসিন্দার কফিনবন্দি দেহ পৌঁছয় মুর্শিদাবাদের বাহালনগরে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই পাঁচ জনকে জঙ্গিরা গুলি করে খুন করে কাশ্মীরের কুলগামের কাতরাসুতে।

শেষকৃত্যের আগে নিহত পাঁচ শ্রমিকের দেহ শায়িত বাহালনগরের মাঠে। — নিজস্ব চিত্র

শেষকৃত্যের আগে নিহত পাঁচ শ্রমিকের দেহ শায়িত বাহালনগরের মাঠে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৩১
Share: Save:

কাশ্মীরে পাঁচ বাঙালি শ্রমিক খুনের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা ঘটনার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেমুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, এটা পূর্ব পরিকল্পিত।

বৃহস্পতিবার ভোরেই স্থানীয় পাঁচ বাসিন্দার কফিনবন্দি দেহ পৌঁছয় মুর্শিদাবাদের বাহালনগরে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই পাঁচ জনকে জঙ্গিরা গুলি করে খুন করে কাশ্মীরের কুলগামের কাতরাসুতে। ওই শ্রমিকরা আপেলবাগানে কাজের জন্য গিয়েছিলেন উপত্যকায়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা পূর্ব পরিকল্পিত। নৃশংস ভাবে ওই শ্রমিকদের খুন করা হয়েছে। ওখানে এই মুহূর্তে কোনও রাজনৈতিক দল নেই। সব কিছুই কেন্দ্রের অধীনে। লজ্জাজনক।’’ মমতার মতে, জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের সবটাই এখন কেন্দ্র এবং নিরাপত্তা বাহিনীর আওতায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এই অবস্থায় কী ভাবে ওই শ্রমিকদের অপহরণ করতে এল জঙ্গিরা?’’ এর পরে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘‘আমি স্তম্ভিত। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত।’’

নিহত পাঁচ শ্রমিকের দেহ নিয়ে এ দিন বাহালনগরপৌঁছন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার পর একে একে সেখানে পৌঁছন শুভেন্দু অধিকারী, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র-সহ মুর্শিদাবাদের একাধিক তৃণমূল নেতা। মমতার মতো রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীওকাশ্মীরের হত্যাকাণ্ডেরপূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন।শুভেন্দু এ দিন মৃত পাঁচ শ্রমিকের বাড়িতেও যান। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্য সরকারের তরফে ওই পরিবার প্রতিসাহায্যের জন্য ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।আহত জহিরুদ্দিনের বাড়িতেও এ দিন যানশুভেন্দু। তাঁর স্ত্রীকে মন্ত্রী আশ্বাস দেন যে, রাজ্য সরকার জহিরুদ্দিনের চিকিৎসার সমস্ত ব্যায়ভার বহন করবে। পাশাপাশি জহিরুদ্দিনের স্ত্রীর জন্য চুক্তিভিত্তিক কাজের বন্দোবস্তও করারও আশ্বাস দেন শুভেন্দু। পরে তিনি বলেন, ‘‘সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি নিহত এবং আহত পরিবারের হাতে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সব জনপ্রতিনিধি তাঁদের এক মাসের বেতন তুলে দেবেন।’’

আরও পড়ুন- কাশ্মীর ছেড়ে আজই ওঁদের রওনা দেওয়ার কথা ছিল, সাগরদিঘির গ্রামে হাহাকারে মিশে আক্ষেপ

আরও পড়ুন- হত্যালীলা: কাশ্মীরে জঙ্গি গুলিতে হত ৫ বাঙালি শ্রমিক

গোটা গ্রাম হাজির হয়েছিল নিহতদের শেষ বারের মত দেখতে। —নিজস্ব চিত্র

শ্রমিকদের দেহ গ্রামে পৌঁছনো মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতদের আত্মীয়-পরিজনেরা। গোটা গ্রাম হাজির হয় নিহতদের শেষ বারের মতো দেখতে। প্রথমে দেহগুলি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গ্রামের একটি মাঠে কফিনবন্দি দেহগুলি রাখা হয়। গোটা গ্রামে এ দিন কারও বাড়িতেই রান্না হয়নি। গ্রামের মসজিদ কমিটির উদ্যোগে সিকন্দর শেখের বাড়িতে সকলের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। সে জন্য গ্রাম থেকে বাড়ি প্রতি সংগ্রহ করা হয়েছে এক কিলো চাল এবং ১০০ টাকা।বৃহস্পতিবার বিকেলেই শেষকৃত্য হবে সবার। গোটা গ্রাম এবং আশে পাশের কয়েক হাজার মানুষ ওই শেষযাত্রায় যোগ দিয়েছেন।

দেখে নিন নিহতদের শেষযাত্রার ভিডিয়ো

ওই দিনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জহিরুদ্দিন এখনও চিকিৎসাধীন। তাঁর দেহ থেকে চারটি গুলি বার করেছেন চিকিৎসকরা। কাতরাসুরওই বাড়িতে নিহতের সঙ্গে বসিরুল সরকারও থাকতেন।তিনি অক্ষত থাকলেও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁকে বুধবারইকলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের ১১ তলায় ট্রমা কেয়ার সেন্টারে তিনি চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বসিরুল এখনও প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। গোটা ঘটনা দুঃস্বপ্নের মতো তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ঘুমের মধ্যেও তিনি গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। তিনি চিকিৎসকদের বার বার জানিয়েছেন যে,আর কখনও কাশ্মীর যাবেন না। চিকিৎসকদের সন্দেহ বাই-পোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছেন বসিরুল। তাঁর বেশ কয়েক দিন চিকিৎসার প্রয়োজন।

আশে পাশের গ্রামেরও কয়েক হাজার মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছিলেন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE