Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Donald Trump

ট্রাম্প-কোপে পদ খুইয়েও অনড় বঙ্গের নীল

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে ট্রাম্পের বিপরীত অবস্থানে থাকা বাইডেন জানিয়েছেন, ফের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অংশ হবে আমেরিকা।

নীল চট্টোপাধ্যায়।

নীল চট্টোপাধ্যায়।

স্নেহাংশু অধিকারী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৩০
Share: Save:

এক দিকে অরুণ মজুমদার, অন্য দিকে নীল চট্টোপাধ্যায়। জন্মসূত্রে দু’জনেই বাঙালি-আমেরিকান। তবে বর্তমানে দু’রকম অবস্থানে। আমেরিকার একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, প্রথম জন এ বার জো বাইডেনের ক্যাবিনেটে শক্তিসচিব হচ্ছেন। দ্বিতীয় জন সম্প্রতি আমেরিকার ফেডারেল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (ফার্ক) চেয়ারম্যানের পদ খুইয়েছেন। সংবাদমাধ্যম বলছে, ‘ক্লিন এনার্জি’-র পক্ষে সওয়াল করতে গিয়েই কোপ পড়েছে নীলের চাকরিতে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন তিনি শুধুই ‘কমিশনার’।

সবে তখন ভোট মিটেছে। তুমুল গোলমাল চলছে ভোটগণনা নিয়ে। একের পর এক প্রদেশে হারছেন, আর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ‘ভোট চুরির’ অভিযোগে সরব হচ্ছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে যে রাতারাতি ফার্ক-এর চেয়ারম্যান বদলে গেল, অনেকেই তা টের পাননি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভোট-মরসুমে ট্রাম্পের ছাঁটাই-পর্বে নীলই প্রথম নাম। প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এস্পার ও সাইবার নিরাপত্তা-প্রধান ক্রিস ক্রেবসের নাম জুড়েছে তার পরে।

রাতারাতি পদাবনতির খবর পেয়ে কি চমকে গিয়েছিলেন নীল? মুষড়ে পড়েছেন? আনন্দবাজারকে জবাবি ইমেলে নীল লিখলেন, ‘‘চমকে যাইনি। বরং এমন একটা কিছু যে হতে চলেছে, তা আন্দাজ করেছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে আমি যে বৈদ্যুতিক যান আর ছাদে-ছাদে সৌর-প্যানেল বসানোর কথা বলেছিলাম! কার্বন-প্রাইসিং নিয়ে নতুন করে ভাবার কথা বলেছিলাম! তবে চাপের মুখেও আমি নিজের অবস্থান থেকে সরিনি। এই স্বাধীনতাটা দারুণ লাগছে।’’

নীলের বাবা-মা সুনীল এবং মলয়া— দু’জনেই কলকাতার বাঙালি। ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করতে আমেরিকায় এসেছিলেন। নীল বললেন, ‘‘কলকাতায় আমাদের অনেক আত্মীয় রয়েছেন। গত জানুয়ারিতেই তো আমরা কলকাতায় ঘুরে গেলাম।’’

ট্রাম্পেরই মনোনয়নে ২০১৭-য় ফার্ক-এর চাকরিতে ঢোকেন রিপাবলিকান নীল।

তার আগে দীর্ঘদিন সেনেটের সংখ্যাগুরু নেতা মিচ ম্যাককনেলের নীতি বিষয়ক পরামর্শদাতা ছিলেন। ফার্ক-এ ঢোকার বছরেই চেয়ারম্যানের পদলাভ। ২০১৮-য় আবার। একটা সময় পর্যন্ত টানা জীবাশ্ম-জ্বালানির পক্ষে সওয়াল করে গেলেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অন্য পথে হাঁটা শুরু করেন ‘চেয়ারম্যান নীল’ (পদ খোয়ালেও টুইটার-ফেসবুকে এখনও এই পরিচয় রয়ে গেছে)। তাঁর তরফেই স্থানীয় গ্রিড অপারেটরদের কাছে প্রস্তাব যায়— সৌরশক্তি ব্যবহারকারীদের বাড়তি বিদ্যুৎ গ্রিডে জুড়ে তাঁদের আয়ের বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। আর দ্বিতীয়ত, জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে পরিবেশের ঘাড়ে কার্বনের বোঝা চাপাতেই

হলে, তার মাসুল দাও। কেমন মাসুল? ফার্ক-এর চেয়ারম্যান হিসেবে নীল চেয়েছিলেন, কার্বন ট্যাক্সের মতো এই কার্বন-মূল্যের বাজার নিয়েও নতুন করে ভাবা হোক।

এর বিরুদ্ধ মত আসতেও দেরি হয়নি। খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই যেমন জীবাশ্ম-জ্বালানির পক্ষে। গ্রিন হাউস গ্যাসের জ্বালায় যে পরিবেশ ধুঁকছে— তাঁর মতে, সেটাও ‘বাজে কথা’! পাতে পড়া মাত্রই নীলের দেওয়া জোড়া প্রস্তাবে অসম্মতি জানান গত মার্চে সংস্থার অন্যতম কমিশনার পদ পাওয়া রিপাবলিকান জেমস ড্যানলি। নীলকে সরিয়ে তাঁকেই এ বার চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছেন ট্রাম্প। হাউসের শক্তি ও বাণিজ্য বিভাগের চেয়ারম্যান ফ্রাঙ্ক প্যালন বলেছিলেন, ‘‘ক্ষমতার হাতবদলের আগে এমন একটা স্বাধীন সংস্থায় হাত দেওয়াটা অন্যায়। তা-ও কিনা এক জন অনভিজ্ঞকে করে দেওয়া হল চেয়ারম্যান!’’

ড্যানলির অধীনে কাজ করতে তাঁর অসুবিধা হবে না বলেই জানালেন নীল। টুইট-পোস্টে উত্তরসূরিকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। ২০২১-এর জুন পর্যন্ত ফার্কে কমিশনারের মেয়াদ রয়েছে তাঁর। এ বার তো বাইডেনের নেতৃত্বে নয়া প্রশাসন। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে ট্রাম্পের বিপরীত অবস্থানে থাকা বাইডেন জানিয়েছেন, ফের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অংশ হবে আমেরিকা। যদিও এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশে নারাজ নীল। মেলে লিখলেন, ‘‘আমি আমার এজেন্সি আর শক্তির ঘরোয়া বাজার নিয়েই ভাবতে চাই। বিদেশ নীতি বা বিশ্ব জলবায়ুর ব্যাপারটা না-হয় বিশেষজ্ঞরাই দেখুন!’’

আরও পড়ুন: করোনায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা ফের বাড়ল রাজ্যে, ঊর্ধ্বমুখী সুস্থতার হার

নিজের এক্তিয়ারে থেকেই নীল যা করতে চাইছেন, তাতে তো কয়লা-শিল্পে জোর ধাক্কা লাগার কথা! নীল জানালেন, ‘‘আমেরিকার কোল-বেল্ট হিসেবে পরিচিত কেনটাকিতে থাকার সূত্রে আমি এলাকার মানুষের জীবনসংগ্রাম খুব কাছ থেকে দেখেছি। তবু পরিবেশের স্বার্থে আমায় এগোতেই হত। জানি, বাধা আসবে। লোকে গালমন্দও করবেন। কিন্তু আমি চাইব, আমার মূল্যায়ন করুক আমার সন্তান-সন্ততি, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।’’

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ২ লক্ষ ছাড়াল আক্রান্ত, সংক্রমণের সব রেকর্ড ভাঙল আমেরিকা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arun Majumder Nil Chatterjee Donald Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE