—প্রতীকী ছবি।
বছর দেড়েক আগে স্কুলে স্কুলে অস্বাভাবিক হারে ফি বৃদ্ধি নিয়ে অভিভাবকদের অসন্তোষ প্রশমনে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই উদ্যোগের কী হল? বৃহস্পতিবার দমদমে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আকাশছোঁয়া ফি বৃদ্ধির অভিযোগে অভিভাবকেরা রাস্তায় নামার পরে এই প্রশ্নটাই জোরদার হয়ে উঠেছে।
ফি বৃদ্ধি নিয়ে মঙ্গলবার অভিভাবকদের অসন্তোষের আঁচ পেয়েছিলেন দমদমের শ্যামনগর মোড়ে ওই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ১৪ হাজার টাকা থেকে এক ধাক্কায় সেশন ফি পাঁচ গুণ করতে চাইছেন। বোঝাপড়ার অভাবের কথা বলে সে-দিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, দু’দিনের মধ্যে এই নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হবে। পুলিশি সূত্রের খবর, এ দিন সেই ব্যাপারে সদুত্তর না-পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অভিভাবকেরা যশোর রোড অবরোধ করেন। হাতে ধরা পোস্টারে লেখা, ‘সেশন ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল করতে হবে’। দিনের ব্যস্ত সময়ে যশোর রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমদম থানার পুলিশ। আধ ঘণ্টা পরে অবরোধ উঠলেও ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন অভিভাবকেরা।
তার পরে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় স্কুলের প্রশাসনিক ভবন চত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। আগামী বছর কোনও রকম সেশন ফি বৃদ্ধি হচ্ছে না, এই মর্মে দু’দফায় নোটিস টাঙিয়েও বরফ গলেনি। তৃণমূল কাউন্সিলর অমিত পোদ্দারের আগমন, পুলিশের অনুরোধ— কিছুই কাজে আসেনি। মাইক্রোফোন হাতে অভিভাবকদের বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেখানে প্রশ্ন, সেখানে কাউন্সিলর বা পুলিশের হস্তক্ষেপ মানব না!’’
অনাস্থার এই আবহেই ২০১৭ সালের মে মাসে অতিরিক্ত ফি বৃদ্ধি আটকাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে-উদ্য়োগ শুরু করেছিলেন, তার পরিণতি জানতে চেয়েছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। ওই বৈঠকে ‘সেল্ফ রেগুলেটরি কমিটি’ গড়ে তাতে স্কুলশিক্ষা সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং বাছাই করা কয়েকটি স্কুলের প্রতিনিধিদের রাখতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্কুলের ফি নির্ধারণ করতে একটি সাব-কমিটিও গড়া হয়েছিল। তারও কাজ খুব বেশি এগোয়নি বলে জানান রেগুলেটরি কমিটির এক সদস্য। গত নভেম্বরে বিধানসভায় বিল আনার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সেই উদ্যোগের অবস্থাও তথৈবচ।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কয়েকটি স্কুলের প্রস্তাব হল, বছরে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি ফি বৃদ্ধি হবে না। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, স্কুলের অবস্থান এবং পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে স্কুলের ‘র্যাঙ্কিং’ বা মান নির্ণয় এবং তার ভিত্তিতে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। বেসরকারি সংখ্যালঘু স্কুলগুলির ফি বৃদ্ধির প্রশ্নে সরকার কতটা হস্তক্ষেপ করতে পারে, সেই প্রশ্নও রয়েছে। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, বিষয়টি জটিল হলেও সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা চলছে।
দমদমে বিক্ষোভরত অভিভাবকেরা রাতে জানান, স্কুলের প্রধান অনির্বাণ আদিত্য শহরে নেই। তিনি শহরে ফিরলে ৩১ জানুয়ারি একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্কুলের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর অনির্বাণ মজুমদার বলেন, ‘‘২০১৯-’২০ সালে কোনও রকম ফি বাড়ানো হবে না, এই প্রস্তাবে শেষ পর্যন্ত অভিভাবকেরা রাজি হন। আগামী দিনে ফি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে এগোতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy