Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Sukumar Hansda

‘অভিমানী’ সুকুমার চলে গেলেন ক্যানসারে

মৃত্যুর পরে জানা গেল, অসুস্থতার জন্য কলকাতায় রাজ ভবনের লাগোয়া সরকারি আবাসনে থাকতেন সুকুমার। এসএসকেএমে চিকিৎসা করাতেন।

স্মৃতি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুকুমার হাঁসদা। ফাইল চিত্র

স্মৃতি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুকুমার হাঁসদা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০০:৫৯
Share: Save:

বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ও ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক যে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন, সেটা তাঁর খুব কাছের গুটিকয় লোকজন ছাড়া কেউই জানতেন না। তিনি কেন বছর দেড়েক ঝাড়গ্রামে থাকেন না তা নিয়ে বরং জল্পনা ছিল। সেই সুকুমার হাঁসদা (৬৬) বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হলেন।

মৃত্যুর পরে জানা গেল, অসুস্থতার জন্য কলকাতায় রাজ ভবনের লাগোয়া সরকারি আবাসনে থাকতেন সুকুমার। এসএসকেএমে চিকিৎসা করাতেন। মাঝে মাঝেই কেমো নিতে ভর্তি থাকতে হত। তাই ঝাড়গ্রামে বেশির ভাগ দলীয় কিংবা প্রশাসনিক কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যেত না। সুকুমার ঘনিষ্ঠ মহলে প্রায়ই বলতেন, ‘‘দশ বছরেও রাজনীতির মানুষ হয়ে উঠতে পারলাম না।’’ বলা যায়, দলের প্রতি তাঁর অভিমান ছিল। ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-নেত্রীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কও ছিল না। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘সুকুমারদা যে অসুস্থ কাউকেই বুঝতে দেননি। এ ভাবে যে চলে যাবেন ভাবিনি। খুবই খারাপ লাগছে।’’ এ দিন ঝাড়গ্রামের বাড়িতে মরদেহ আসার পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ জেলাস্তরের নেতারা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

সুকুমারের বাবা প্রয়াত সুবোধ হাঁসদা ইন্দিরা সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী ছিলেন। ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে দুবরাজপুর গ্রামে সুকুমারের আদিবাড়ি। তবে সুবোধ হাঁসদার আমল থেকেই অরণ্যশহরের বাসিন্দা ছিলেন সুকুমার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। প্রথম জীবনে বেলপাহাড়ি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ছিলেন। পরে ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক হন। সেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ২০১১ সালে ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জেতেন সুকুমার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন প্রথম তৃণমূল সরকারের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী হন সুকুমার। বিতাঁর উন্নয়ন-কাজ নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন ওঠে। জুড়েছিল বিতর্কও। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের প্রথম জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চে মমতার ছবি না রাখায় প্রশ্নের মুখে পড়েন সুকুমার। সুকুমারের যুক্তি ছিল, মঞ্চে আদিবাসী-মূলবাসী সংস্কৃতিক ছোঁয়া রাখতে তিনি মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখেননি। এর বছর দু’য়েকের মধ্যেই মমতা তাঁকে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর থেকে সরিয়ে আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী করেন।

ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসনটি সাধারণ। তবু ২০১৬-তেও দ্বিতীয় বারের জন্য আদিবাসী মুখ সুকুমারকেই প্রার্থী করেন মমতা। আর মন্ত্রী হননি। তবে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হন। সম্প্রতি তৃণমূলের সহ-সভাপতিও হয়েছিলেন। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জেলায় তৃণমূলের ভরাডুবির পরে জঙ্গলমহলে শাসকদলের রাজনীতিতে তিনি আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার হায়দার আজিজ সফির মৃত্যু হলে, দায়িত্ব পান এই জনজাতি নেতা। লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের পরে পিকে টিমের দাওয়াই মেনে জেলার অন্য বিধায়কেরা কর্মসূচি করলেও সুকুমার কার্যত দায়সারা ভাবে ‘দিদিকে বলো’ কিংবা ‘আপনার গর্ব মমতা’ কর্মসূচি করেছিলেন। সে জন্য দলের অন্দরেও বার বার সমালোচিত হয়েছিলেন। গত ৭ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকেও গরহাজির ছিলেন সুকুমার।

সুকুমারের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান ও সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী। শুভেন্দু শোকবার্তায় বলেন, ‘‘২০১১ সালে সুকুমারবাবু আমার কথায় চিকিৎসকের চাকরি ছেড়ে বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হন। নেত্রী তাঁকে তৃণমূলের প্রতীক দেন। চিকিৎসকের চাকরিতে অবসরের আড়াই বছর আগে সুকুমারবাবু এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমার অনুরোধে। সে সব স্মৃতি মনে পড়ছে।’’

বিজেপি-র জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘সুকুমারদার সঙ্গে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সুকুমারদার ছেলেমেয়েরা আমার কাছে আঁকা শিখেছে। ওঁর এই মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কের কথায়, ‘‘অমায়িক ভদ্রলোক সুকুমারদা কখনও কারও সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতেন না। সাদাসিধে মানুষটি নিজেকে আড়ালে রেখে চলে গেলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sukumar Hansda Partha Chatterjee TMC Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE