Advertisement
E-Paper

‘এর থেকে ভাল ইদি আর কী-ই বা হতে পারে জীবনে!’

বৃদ্ধের সেই বিশেষ প্রার্থনায় মিশে গেল সব করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার কামনা।

প্রার্থনা: হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে বসেই নমাজ পড়ছেন সামসুল। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

প্রার্থনা: হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে বসেই নমাজ পড়ছেন সামসুল। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

সুমন বল্লভ ও আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৬:৫৯
Share
Save

বৃদ্ধ মির্জা সামসুল হোদা করোনায় আক্রান্ত। প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরার পরে আদতে বাঁকুড়ার ওই বাসিন্দা শুক্রবার হাসপাতালের শয্যায় বসেই পড়লেন ইদের নমাজ। তাঁকে দেখে হাজার কাজের ফাঁকেও খানিক উৎসাহী হয়ে নমাজ পড়লেন মির্জার চিকিৎসক আসিফ ইকবাল। বৃদ্ধের সেই বিশেষ প্রার্থনায় মিশে গেল সব করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার কামনা। আর আসিফের প্রার্থনায় ধরা রইল, মানুষের শুভবুদ্ধি আর সংক্রমণ নিয়ে সচেতনতা উদয়ের কামনা।

মানিকতলা এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সামসুল। গত ২৯ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ হয়ে শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকেই অবশ্য মূলত আসিফের দায়িত্বে ছিলেন এই রোগী। আসিফ জানান, ৬৭ বছরের ওই রোগীকে বাঁকুড়া থেকে অক্সিজেন দেওয়া অবস্থায় আইসিইউ ভ্যানে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বৃদ্ধের শরীরে অক্সিজেন তখন ছিল ৭০-এর আশপাশে! জানতে পারেন, ওঁর পেসমেকার রয়েছে। কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সামসুলকে দ্রুত ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হয়। ৭২ ঘণ্টা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। আসিফ বলেন, “ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে রোগী সাড়া দিতে থাকেন। বেশ কয়েক দিন পরে সাপোর্ট থেকে বার করে আনা হয় তাঁকে। আর সাধারণ শয্যায় দেওয়া হয় মাত্র দিন দুয়েক আগে। এখন অবশ্য শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক। শুক্রবারই সামসুলকে ছুটি দেওয়া হল।”

“এর থেকে ভাল ইদি (ইদের উপহার) আর কী-ই বা হতে পারে জীবনে!” ছলছল চোখে বলে উঠলেন মির্জা সামসুল। তাই ছুটি পেলেও বাড়ি যাওয়ার আগে ইদের নমাজ হাসপাতালে বসেই পড়ার ইচ্ছে জানিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা সেই অনুমতি মঞ্জুরও করেন। যে ঘরে তিনি ছিলেন, সেখানেই নমাজ পড়েন।

ছেলে মির্জা ইমরান হোদার সঙ্গে ঘরে ফেরার পথে বৃদ্ধ বলেন, “করুণাময় ঈশ্বর আর ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মিলেমিশে আমাকে নতুন জীবন দিলেন। আমার মতো সব করোনা রোগীই যেন সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে পারেন, এই ছিল আজকের বিশেষ প্রার্থনা। এমন সম্প্রীতির উৎসবে পরিবার, বন্ধু, স্বজনের কাছে ফিরতে পারলাম চিকিৎসক থেকে নার্স— সকলের চেষ্টায়।”

এই নিয়ে দ্বিতীয় ইদ কেটে গেল অতিমারির মধ্যে। সামসুলের চিকিৎসক আসিফের কথায়, “হাসপাতালে সারাদিন ধরে এত করোনা রোগীর ভিড়। গুরুতর অসুস্থ, অসহায় মুখগুলো দেখে আর বাড়ি যেতে মন চায় না। মনে হয়, ওঁদের সেবা করাটাই ইদের দিনের পবিত্র কর্তব্য।” এরই মধ্যে ছুটি পাওয়া রোগী সামসুলকে দেখে তাঁরও মনে হয়েছিল নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, গোটা মানবজাতির জন্য আজ বিশেষ প্রার্থনার উপযুক্ত মুহূর্ত। তাই কাজের ফাঁকে তিনিও নিজের ঘরে নমাজ পড়ে ফেলেন।

অন্যান্য বার ইদের দিন বাঁকুড়ার গ্রামের বাড়িতে মসজিদ অথবা খোলা জায়গায় ইদের নমাজ পড়েন সামসুল। তাঁর কথায়, “ধর্মে তো বলাই আছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে ঘরেও নমাজ পড়া যায়। এই হাসপাতাল আমায় জীবন দিল। নমাজের প্রার্থনার জন্য হাসপাতালের থেকে পবিত্র জায়গা আমার কাছে আর কী হতে পারে?”

COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy