Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
দুয়ারে ২১

কাটমানি ফোঁড়া, অস্বস্তির নাম লোকলজ্জা

মমতা ও শুভেন্দুর ‘পাখির চোখ’ ছিল প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী। যাবতীয় শক্তি প্রয়োগ করেও সে পাখি ‘বধ’ করতে দুই নেতানেত্রীর সম্মিলিত প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে।

শুভেন্দু অধিকারী। 

শুভেন্দু অধিকারী। 

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৬
Share: Save:

একুশের সমাবেশে প্রস্তুতির বদলে বহরমপুরের ‘কালীদাস’ ও কান্দির ‘অর্জুন’ খুঁজতেই বেশি ব্যস্ত মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমুল। দলের অন্দরের খবর, ‘কালীদাস’ ও ‘অর্জুন’ খোঁজার মাঠে তাঁদের নামিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক খোদ শুভেন্দু অধিকারী।

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে বিজেপি’র নাকানিচোবানি সত্ত্বেও মুর্শিদাবাদ জেলায় ভাল ফল করেছে। জেলার তিনটি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে দু’টি। তৃতীয়টিতে শতকরা ৩৯ ভাগ ভোট পেয়ে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে তৃণমূল। তবুও অস্বস্তিতে রয়েছেন দলেনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা ও শুভেন্দুর ‘পাখির চোখ’ ছিল প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী। যাবতীয় শক্তি প্রয়োগ করেও সে পাখি ‘বধ’ করতে দুই নেতানেত্রীর সম্মিলিত প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। ভোটের ফল প্রকাশের পর সংসদের প্রধান বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরীর নক্ষত্রখচিত মুকুটে নিত্য নতুন পালক যুক্ত হয়েছে। ফলে স্বস্তিতে নেই শুভেন্দু।

ভোট পরবর্তী সময়ে বহরমপুরকে ভুলে থাকতে চেয়েছেন শুভেন্দু। ভোটের পরে দলের জেলা নেতাদের নিয়ে গত শনিবার তিনি প্রথম মিটিং করেন বেলডাঙার একটি সিনেমা হলে। সদ্য সমাপ্ত ভোটে বহরমপুর লোকসভার অন্তর্গত বহরমপুর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলকে অধীর চৌধুরী তৃতীয় স্থানে ঠেলে দেওয়ায় গত ১৩ জুলাইয়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের বহরমপুরের নেতাকর্মীদের ‘কালীদাস’ বলে সম্বোধন করেন শুভেন্দু।

শুভেন্দুর সামনে নীরব থাকলেও আড়ালে কিন্তু দলের ক্ষুব্ধ লোকজনই বলছেন, ‘‘আমরা ‘কালীদাস’? কাটমানি তোলার ‘অর্জুন’ কী তবে নিজের দু’টি বুথে ও নিজের বিধানসভা এলাকায় পরাজিত প্রার্থী ডেভিড (অপূর্ব সরকার)? নইলে এমন পরাজয়ের পরও তাঁকেই কেন লাভজনক চারটি প্রশাসনিক পদে বসানো হয়েছে!’’

ডেভিড বলছেন, ‘‘দল যোগ্য মনে করেছেন তাই বসিয়েছেন।’’ সেই সঙ্গে তিনি আশ্বস্তও করছেন, ‘‘এ বছরও ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ পর্যাপ্ত লোক যাবে, মিলিয়ে নেবেন।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি, তথা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সাংসদ আবু তাহের খানের সঙ্গে জেলাপরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেনের ‘মধু’র সম্পর্ক আর অ-প্রকাশ্য নয়। দলের ভিতরের খবর, মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে তাহের নিজে জিতলেও গোষ্ঠী বিরোধের কারণে তাহের ও মোশারফের আদি ব্লক, নওদায় ভোটের সংখায় অধীরই এগিয়ে। তাহেরের সঙ্গে বিরোধের কথা অস্বীকার করেন মোশারফ। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘একুশের জমায়েতে জেলা থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ লোক যাবে।’’

শুনে হাসছেন তাঁর অনুগামীদের অনেকেই। তাঁরা বলেন, ‘‘গোষ্ঠী কোন্দলের গোদের উপর সদ্য উঠেছে কাটমানির বিষফোঁড়া! ফলে ধর্মতলা লোক নিয়ে যাব কোন মুখে? বিষফোঁড়া সামলাতেই নেতারা এখন জেরবার।’’

দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে ডোমকল পুরপ্রধান সৌমিক হোসেনের মাথার উপর ঝুলছে অনাস্থার খাঁড়া। সৌমিক বলেন, ‘‘এ বার জেলা নেতৃত্ব থেকে একুশের জমায়েতের বিষয়ে আমাকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তার উপরে ডামাডোলের মধ্যে আছি। তবু চেষ্টা করব লোক নিয়ে যাওয়ার।’’

তাঁর গলার স্বরই বলে দিচ্ছে একুশের প্রস্তুতি! কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে ফেলে দিয়ে তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির মাফুজা খাতুন এখন জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের উদীয়মান লক্ষত্র। তাঁর হাত ধরে বিজেপি ক্রমে রক্ত সঞ্চয় করছে। অন্য দিকে তৃণমুলের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে বিবাদের জেরে দলের মহকুমা সভাপতি বিকাশ নন্দের অনুগামীরা গত শনিবারের শুভেন্দু অধিকারীর সভাটাই এড়িয়ে গিয়েছেন। দলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘কাটমানি ও জয় শ্রীরামের আবহে ছন্নছাড়া দলের পক্ষে এ বার এ জেলার একুশের সমাবেশের সাফল্যের কথা সময়ই বলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari Extortion Bribe TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE