Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্টেশনে পড়ে দগ্ধ যুবক, উদ্ধার

শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “ঘটনাটি আমার জানা নেই। সে দিন ঠিক কী হয়েছিল তা খোঁজ করে দেখছি।”

 সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই যুবক। নিজস্ব চিত্র

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই যুবক। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৩:৪১
Share: Save:

এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরের চত্বরে গামছা জড়ানো অবস্থায় দগদগে শরীরে পড়ে ছিলেন এক যুবক। দিন কয়েক আগে দুপুরে সোদপুর স্টেশন চত্বরের বাচ্চাদের খাওয়াতে গিয়ে এমনটাই দেখেন এইচবি টাউনের বাসিন্দা তরুণ। স্থানীয় থানা ও জিআরপি-কে জানান। অভিযোগ, দু’জায়গা থেকেই ন্যূনতম সাহায্য পাননি। অগত্যা নিজেই অগ্নিদগ্ধকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানেই চিকিৎসাধীন ওই যুবক।

অগ্নিদগ্ধ যুবক শুধু নিজের মোবাইল নম্বরটুকু বলতে পেরেছিলেন উদ্ধারকারী অরুণাংশু চট্টোপাধ্যায়কে। তার সূত্র ধরে জানা যায়, বছর তেইশের যুবকটির নাম আলি হুসেন। হোটেলে রান্নার কাজের সূত্রে কেরলের থিরুভেল্লায় থাকতেন। সেখানেই তাঁর ফেলে আসা মোবাইলটি রয়েছে এক সহকর্মীর কাছে। তিনিই আলির প্রতিবেশীর ফোন নম্বর দেন অরুণাংশুকে। সেই নম্বরে যোগাযোগ করে উত্তর দিনাজপুরের বাড়িতে আলির খবর যায়। দাদা সৈয়দ জানান, তাঁদের হাতে কলকাতায় যাওয়ার টাকা নেই। তাই আপাতত আলির চিকিৎসার ভার তাঁরা অরুণাংশুর উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। পরিজনের মতোই নিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে তিনি দেখভাল করছেন আলিকে।

শনিবার অরুণাংশু জানান, খড়দহ থানার পুলিশকে খবর দিলে তাঁকে জিআরপি-কে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, স্টেশন মাস্টার এবং জিআরপি-কে জানানো হলে তাঁরাও সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। চাদরে মুড়িয়ে রিকশায় চাপিয়ে আলিকে হাসপাতালে নিয়ে যান একা অরুণাংশু‌। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পলাশ দাশ বলেন, “আলির শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধ অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ ধুলোয় পড়ে থাকায় শরীরে সংক্রমণ ছড়াতেও শুরু করেছে। চিকিৎসকেরা তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।”

আলির নম্বরে ফোন করলে তাঁর সহকর্মী সরাফউদ্দিন আলি জানান, লকডাউন শুরুর সপ্তাহ দুয়েক আগেই ওই যুবক মালিকের থেকে কাজের টাকা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে ছিল সাড়ে চার হাজার টাকা ও কালো হাতব্যাগ। এর পরে আর তাঁর সঙ্গে আলির যোগাযোগ হয়নি বলে জানাচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন: এনআরএস হাসপাতালে একসঙ্গে ৮ রোগী করোনায় সংক্রমিত

আরও পড়ুন: বেড়েই চলেছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা, দেশে মৃত্যু বেড়ে ১২২৩​

উত্তর দিনাজপুরে গোয়ালপোখরের বড় দুধঘর গ্রামের বাসিন্দা আলির বাড়িতে রয়েছেন বাবা-মা ও দুই দাদা। স্থানীয় পঞ্চায়েত জানাচ্ছে, আলিদের পরিবার গ্রামের সব থেকে দুঃস্থ। এ দিন ফোনে সৈয়দ বলেন, “আলি ওখানে কেন গেল, বুঝতে পারছি না। কী ভাবে এমন ঘটল আমরা জানতে চাই।”

শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “ঘটনাটি আমার জানা নেই। সে দিন ঠিক কী হয়েছিল তা খোঁজ করে দেখছি।”

হাসপাতালে গিয়ে আলিকে দেখাশোনা করার কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অরুণাংশুর আবাসনের কয়েকটি পরিবারের বিরুদ্ধে। যদিও যুবকের কথায়, “যে দায়িত্ব নিয়েছি, কোনও বাধার কাছেই তা থেকে পিছিয়ে আসব না। ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক, এটাই একমাত্র প্রার্থনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sodepur burnt kerala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE