Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে বিধাননগর ও দক্ষিণ দমদমে

প্রায় একই রকম অবস্থা বিধাননগর পুর এলাকাতেও। সেখানকার বাগুইআটি ও কেষ্টপুরে বাড়ছে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। খোঁজ মিলেছে ডেঙ্গি রোগীরও। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুজোর পরে এলাকায় মশা বেড়েছে।

লেক টাউনের এক আবাসনের সামনে জমা জল ও আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

লেক টাউনের এক আবাসনের সামনে জমা জল ও আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

কাজল গুপ্ত ও সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

বর্ষা ও শরৎ কেটে গিয়ে ভরা হেমন্তে এখন ডেঙ্গির দাপট শুরু হয়েছে দক্ষিণ দমদমের লেক টাউন, দক্ষিণদাঁড়ি, শ্রীভূমি ও বাঙুর এলাকায়।

ওই সমস্ত এলাকার বেশ কিছু আবাসনে ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। অন্য দিকে, লাগাতার প্রচার এবং সচেতনতার কারণে এ বছরের গোটা মরসুমই বস্তি এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আবাসন ও বিভিন্ন বাড়িতে ডেঙ্গি ছড়ানোর পিছনে মানুষের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন স্থানীয় পুরসভার কর্তারা। আবার বাসিন্দাদের পাল্টা অভিযোগ, পুজোর সময়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার গা-ছাড়া মনোভাবের কারণেই এখন এত ভুগতে হচ্ছে।

প্রায় একই রকম অবস্থা বিধাননগর পুর এলাকাতেও। সেখানকার বাগুইআটি ও কেষ্টপুরে বাড়ছে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। খোঁজ মিলেছে ডেঙ্গি রোগীরও। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুজোর পরে এলাকায় মশা বেড়েছে।

গত বছর দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার মধুগড়, প্রমোদনগর ও জ’পুরের বস্তি এলাকায় ব্যাপক হারে ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল। বস্তিবাসীদের পাশাপাশি সেই রোগ ভুগিয়ে ছেড়েছিল পুর প্রশাসনকেও। পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ভোগান্তির মূল কারণ ছিল সাধারণ মানুষের অসাবধানতা। এলাকার বিভিন্ন এলাকায় জল জমে থাকত। এমনকি, বাড়ির আনাচ-কানাচে বিভিন্ন ভাঙা বাসনপত্রেও জল জমে ডেঙ্গির মশা জন্মানোর আদর্শ ব্যবস্থা তৈরি হয়ে ছিল। পুরসভা অবশ্য লাগাতার প্রচার করে বুঝিয়েছিল, জল জমিয়ে রাখলে পরিণাম কী মারাত্মক হতে পারে।

দক্ষিণ দমদমের এক পুর কর্তা বললেন, ‘‘বস্তির বাসিন্দারা ভুগে শিখেছেন। কারণ, গত বছর যাঁরা ডেঙ্গিতে ভুগেছিলেন, তাঁরাই এ বার এলাকা সাফসুতরো রাখতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। পুরসভা এ বার প্রচারে তাঁদের ব্যবহার করেছে।’’ গত বছর ডেঙ্গিতে ভুগে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন দমদম পার্কের ভিআইপি রোড লাগোয়া বস্তি এলাকার বাসিন্দা শ্রীকৃষ্ণ হালদার। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর কষ্টটা টের পেয়েছি। শুধু কষ্টই তো নয়, খরচও হয়েছে বিস্তর। সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে অনেক সময় লেগেছে। এ বার তাই এলাকা পরিষ্কার রেখেছি। কোথাও জল জমতে দিইনি।’’

লেক টাউন, বাঙুর-সহ বিভিন্ন এলাকার আবাসনগুলিতে ডেঙ্গির দাপট শুরু হয়েছে পুজোর পর থেকে। সেই সময়ে বৃষ্টির জল জমেছে আবাসনের আনাচ-কানাচে। পুজোর সময়ে বিভিন্ন আবাসনে ভোগ বা অন্য খাওয়াদাওয়ায় থার্মোকলের থালা-বাটি, প্লাস্টিকের গ্লাস ব্যবহার হয়েছিল। তার কিছু এখনও এ দিকে-ও দিকে ছড়িয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এক চামচ জলেও ডিম পাড়তে পারে ডেঙ্গির মশা।

অন্য দিকে, বাগুইআটির জর্দাবাগান, বাগুইপাড়া, রবীন্দ্রপল্লি, নারায়ণতলা পূর্ব ও জ্যাংড়ায় একাধিক বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। বিধাননগর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি আবাসনে চার জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁদের মধ্যে এক জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ওই আবাসনে ৬০টি পরিবার থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীরকুমার সান্যাল জানান, তিনিও সম্প্রতি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এলাকার আর এক বাসিন্দা তথা কংগ্রেস নেতা সোমেশ্বর বাগুইয়ের অভিযোগ, এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে পুরসভার তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

বিধাননগর পুরসভার গোপালপুরের পাশাপাশি ২৫ থেকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডেও জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বাসিন্দারা। সোমবার চার নম্বর ওয়ার্ডের পার্থনগরী এলাকা ও দু’নম্বর ওয়ার্ডে মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছে পুরসভা। বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ প্রণয় রায় জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা নিয়ন্ত্রণে পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সেই অনুসারে কাজও হচ্ছে। তার পরেও যদি অভিযোগ আসে, তা হলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE