Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata

পাশে অচেনা শহরের ‘বন্ধু’, দেহ ফিরল নিজভূমে

চিনার পার্কের বাসিন্দা মোজাফ্ফর বিশ্বাসকে নিয়ে দ্রুত বিপর্যস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান শাহিনুর।

শাহিনুর রহমান (বাঁ দিকে) এবং মোজাফ্ফর বিশ্বাস।

শাহিনুর রহমান (বাঁ দিকে) এবং মোজাফ্ফর বিশ্বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৪৩
Share: Save:

কোভিড সন্দেহে এ শহরই মুখ ফেরায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথে পড়ে থেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যান কেউ। অথচ এই শহরেই আছে অন্য মুখ, যাঁরা ধর্মে নয়, কাঁটাতারে নয়, বিশ্বাস করেন মনুষ্যত্বে। যাঁদের সেই বিশ্বাসেই ভরসা করে স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে আত্মীয়হীন বিদেশ থেকে এক দিনের মধ্যে দেশে ফিরতে পারলেন এক বাংলাদেশি নাগরিক।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে রাজারহাটের এক ক্যানসার হাসপাতালে স্ত্রী করুণা চৌধুরীর (৫৭) চিকিৎসার জন্য আসছিলেন সজলকান্তি চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। অ্যাম্বুল্যান্স বদলে বদলে যখন নিউ টাউনের কাছে পৌঁছন তাঁরা, তখন সজলবাবু যোগাযোগ করেন নিউ টাউনের বালিগড়ির বাসিন্দা শাহিনুর রহমানের সঙ্গে। দীর্ঘপথের ধকলে তখন করুণাদেবীর শ্বাস ওঠানামা বুঝতে পারছিলেন না তাঁরা। কে এই শাহিনুর? ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা ক্যানসার রোগীদের জন্য বাড়ি ভাড়া দিয়ে পরিচিত নাম শাহিনুরের সন্ধান চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর বাসিন্দা সজলবাবু দেশে থাকাকালীনই পেয়েছিলেন। সেই মতো বাড়ি ভাড়ার জন্য যোগাযোগ করেন তাঁর সঙ্গে। কিন্তু পথেই বড় বিপদ ঘটে গিয়েছে আঁচ করে অনাত্মীয়ের দেশে শাহিনুরকে ফোন করেন। চিনার পার্কের বাসিন্দা মোজাফ্ফর বিশ্বাসকে নিয়ে দ্রুত বিপর্যস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান শাহিনুর।

বুধবার শাহিনুর জানান, নিউ টাউনে তাঁর একটি বাড়ি আছে। ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর পরিবারকে সেখানে ভাড়া দেন তিনি। সেই সূত্রেই সজলবাবুর ফোন পেয়ে স্থানীয় চিকিৎসককে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের কাছে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে করুণাদেবীর। এর পরেই দেহটি কলকাতায় সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়।

বাংলাদেশে মৃতদেহ ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও অনুমতির প্রয়োজন হয়। শোকগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে থেকে শাহিনুর এবং মোজাফ্ফর সেই কাজটাই সহজ করে দিয়েছিলেন।
বুধবার দেশে ফেরার পথে ফোনে সজলবাবু জানান, তাঁর স্ত্রী বাংলাদেশ নৌবাহিনীর (আঞ্চলিক অর্থ নিয়ন্ত্রক দফতর) কর্মী ছিলেন। তিনি একটি সংস্থায় কর্মরত। তাঁদের মেয়ে ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। সম্প্রতি করুণাদেবীর ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। কিন্তু লকডাউনের জন্যে এ দেশে চিকিৎসা করাতে আসতে পারছিলেন না। বিশেষ অনুমতি পেতেই রওনা দেন। বাড়ি থেকে সীমান্ত পর্যন্ত আসতেই লেগেছিল ১৪ ঘণ্টা। সেখান থেকে নিউ টাউন। দীর্ঘ পথের ধকলে অ্যাম্বুল্যান্সে অক্সিজেন নিতে পারছিলেন না করুণাদেবী। ক্লান্ত সজলবাবু বলেন, “এ দেশে কাউকে চিনি না। একে এত বড় মানসিক আঘাত। তার উপরে কী ভাবে ফিরব, মাথায় আসছিল না। শাহিনুর আর মোজাফ্ফর না থাকলে জানি না কী করতাম। ওঁরাই আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ওঁদের সাহায্যের কথা বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ যথেষ্ট নয়।”
যদিও শাহিনুরদের কাছে এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। স্থানীয়েরাই জানাচ্ছেন, ওঁরা এ ভাবে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ান। আর শাহিনুর বলছেন, “এ দেশে এসে এত বড় বিপদে পড়েছে একটি পরিবার। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোই তো কর্তব্য। সেখানে দেশ বা ধর্মের প্রশ্ন আসে না। তবে বন্ধু মোজাফ্ফর যে ভাবে সাহায্য করেছে, সেটাও কম নয়।” নীরব মোজাফ্ফর শুধু বললেন, “এমন বিপদের মুহূর্তেই তো সাহায্যের দরকার। মুখ ঘোরানোর কথা আসছে কেন?”

আরও পড়ুন: মণ্ডপ কতটা খোলামেলা হবে, সংশয়ে পুজো উদ্যোক্তারা

আরও পড়ুন: আধ ঘণ্টা পিছোতে পারে শেষ মেট্রোর সময়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE