Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

গৌরাঙ্গকে মার, অভিযুক্ত তৃণমূল

সিপিএমের অভিযোগ, প্রচার শেষে গাড়িতে চাপতে যাওয়ার মুহূর্তে দু’টি মোটরবাইকে চড়ে চার জন গৌরাঙ্গবাবুর গাড়ি আটকায়। অভিযোগ, কোনও কথা না বলেই প্রার্থীর উপরে হামলা চালানো হয়।

জখম গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বারাবনিতে। নিজস্ব চিত্র

জখম গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বারাবনিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

প্রচার শেষে গাড়িতে ওঠার মুখে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলায় জখম হয়েছেন আসানসোলের সিপিএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়, অভিযোগ সিপিএমের। মঙ্গলবার দুপুরে বারাবনি থানার মদনপুরের ঘটনা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। সন্ধ্যায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে গিয়ে সিপিএম প্রার্থীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার খোঁজখবর করেন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়।

সিপিএম জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বারাবনিতে সদলবলে প্রচারে নামেন গৌরাঙ্গবাবু। গৌরান্ডি ও পানুড়িয়ায় প্রচার সেরে প্রার্থীর চারটি গাড়ির কনভয় সওয়া ১১টা নাগাদ মদনপুর ঢোকে। মদনপুরে ঢোকার মুখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রায় ২৫ জন সিপিএম সদস্য, সমর্থককে সঙ্গে করে গ্রামে প্রচার সারেন গৌরাঙ্গবাবু। সিপিএমের অভিযোগ, প্রচার শেষে গাড়িতে চাপতে যাওয়ার মুহূর্তে দু’টি মোটরবাইকে চড়ে চার জন গৌরাঙ্গবাবুর গাড়ি আটকায়। অভিযোগ, কোনও কথা না বলেই প্রার্থীর উপরে হামলা চালানো হয়। বাম কর্মী, সমর্থকেরা বাধা দিলে মুহূর্তের মধ্যে আরও কয়েক জন ঘটনাস্থলে এসে প্রার্থী-সহ বাম কর্মী, সমর্থকদের ব্যাপক মারধর করা হয় সিপিএমের অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় প্রার্থীর সঙ্গে থাকা গাড়িতেও।

এই ঘটনায় সিপিএম তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। গৌরাঙ্গবাবুর প্রচারে যোগ দেওয়া সিপিএমের যুব নেতা স্বপন দাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আমাদের মারধর করা হয়। মহিলা কর্মীদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি।’’ সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘শান্তিপূর্ণ প্রচারে পরিকল্পনা করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের কথায়, ‘‘দলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত নন। সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই মিথ্যা প্রচার করে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে সিপিএম।’’ রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের দাবি, ‘‘গত ৩৪ বছরে ওঁরা মানুষের উপরে অসীম অত্যাচার চালিয়েছেন। এখন তারই ফল ভোগ করছেন।’’ তৃণমূলের আরও দাবি, এই ঘটনা সিপিএমের গোষ্ঠী কোন্দলের ফল। যদিও তা অস্বীকার করেছে সিপিএম।

ঘটনার পরে আহত গৌরাঙ্গবাবুকে নিয়েই সিপিএম সমর্থকেরা বারাবনি থানায় বিক্ষোভ দেখান। বেশ কিছুক্ষণ দোমহানি রোড অবরোধ করা হয়। পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ, অবরোধ ওঠে। এর পরে প্রার্থীকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে’ ভর্তি গৌরাঙ্গবাবুর মাথা, বুক ও কোমরে গুরুতর চোট লেগেছে। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।

এই ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তারও অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপালবাবুর কথায়, ‘‘বারাবনি থানার আধিকারিকের অপসারণ চাইছি। হামলার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি।’’ সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় জানান, আজ, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শহর জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল হবে। পরে জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। মঙ্গলবার বিকেলই জেলার নানা প্রান্তে প্রতিবাদ মিছিল করেছে সিপিএম। অতিরিক্ত জেলাশাসক (নির্বাচন) অরিন্দম রায় বলেন, ‘‘এখনও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ জেলার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) শশাঙ্ক শেঠি বলেন, ‘‘আমাদের সূত্র মারফত বিষয়টি জানতে পেরেছি। বারাবনি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমরা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ দিন সন্ধ্যায় বাবুল হাসপাতালে যান গৌরাঙ্গবাবুর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ‘ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে’ একাই ঢোকেন বাবুল। কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সদের কাছে গৌরাঙ্গবাবুর স্বাস্থ্যের বিস্তারিত খোঁজখবর করেন বাবুল। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভোটে লড়ছি। তাই সৌজন্যের কারণেই তাঁকে দেখতে এলাম। তৃণমূল আতঙ্কিত, তাই এমন আক্রমণ। আজ উনি প্রহৃত হয়েছেন। আগামিকাল আমিও প্রহৃত হতে পারি।’’ দলীয় প্রার্থীকে দেখতে বাবুল আসায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বংশগোপালবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE