কী ভাবে করবেন হনুমানাসন? চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
আগে মাটিতে বসেই খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। কিন্তু এখন সে সব পাট উঠে গিয়েছে। কোমর, হাঁটু নিয়ে নড়তে পারেন না। তাই টেবিল-চেয়ারই ভরসা। কিন্তু প্রয়োজনে এক-আধ বার হলেও তো মাটিতে বসতে হয়। তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা এক বার মাটিতে বসলে সহজে উঠে দাঁড়াতে পারেন না। কোনও অবলম্বন পেলে সুবিধা হয়। আবার এমনও অনেকে রয়েছেন, যাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে ততটা কষ্ট হয় না। হাঁটু, কোমর ভাঁজ করে মাটিতে বসতে গেলে প্রাণ একেবারে ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত যোগাসন অভ্যাস করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষকেরা বলছেন, নিয়ম করে হনুমানাসন অভ্যাস করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে এই আসন কিন্তু আনকোরাদের জন্য নয়। যাঁরা কোনও কালে শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তাঁরা শুরুতেই হনুমানাসন করতে পারবেন না।
‘রামায়ণ’ অনুযায়ী, এ দেশ থেকে প্রায় এক লাফে লঙ্কা অর্থাৎ রাবণ-রাজ্যে পদার্পণ করেছিলেন হনুমান। সেই সূত্র ধরেই এই আসনের নামকরণ করা হয়েছে বলে মনে করেন প্রশিক্ষকেরা। হনুমানাসন বা ‘মাঙ্কি পোজ়’কে অনেকেই ‘স্প্লিট পোজ়’ নামে চেনেন।
কী ভাবে করবেন?
· শরীরচর্চা শুরু করার আগে যে ভাবে স্ট্রেচিং বা ওয়ার্ম আপ করেন, আগে সেটি করে নিন।
· এ বার ম্যাটের উপর হাঁটু ভাঁজ করে বজ্রাসনে বসুন। শ্বাস-প্রশ্বাস যেন স্বাভাবিক থাকে।
· ধীরে ধীরে বাঁ পা সামনের দিকে প্রসারিত করুন। ডান হাঁটু ভাঁজ করাই থাকবে। কিন্তু হাঁটুর উপর ভর দিয়ে শরীরটাকে দাঁড় করাতে হবে।
· এই অবস্থায় বেশি ক্ষণ দেহের ভারসাম্য ধরে রাখতে পারবেন না। তাই দেহের দু’পাশে রাখা দু’টি হাত দিয়ে মাটিতে গোটা শরীরের ভার রাখতে হবে। অনেকে স্পঞ্জের চৌকো ব্লকও ব্যবহার করেন। দু’পাশে দু’টি ব্লক রেখে তার সাহায্যেও ব্যালান্স ধরে রাখতে পারেন।
· বাঁ পা সামনের দিকে টান টান করে রাখতে হবে। গোড়ালি থেকে ঊরু হয়ে প্রায় পুরো পা-ই মাটির সঙ্গে সমান্তরাল অবস্থানে থাকবে। সঠিক ভঙ্গিতে রাখলে পায়ের গোছ থেকে টান অনুভব করবেন।
· ভাঁজ করা ডান পা-ও এ বার ধীরে ধীরে পিছনের দিকে ঠেলতে চেষ্টা করুন। বাঁ পায়ের তলার অংশ যেমন মাটি স্পর্শ করে থাকবে, তেমনই ডান পায়ের উপরের দিক মাটি স্পর্শ করে থাকবে। কাঁচির দু’টি প্রান্ত দু’দিকে টেনে খুলে দিলে দেখতে যেমন হয়, অনেকটা তেমনই।
· দু’টি পা দু’প্রান্তে টান টান করে রাখলেন। এ বার তলপেট থেকে দেহের উপরিভাগ সামনের দিকে সামনের দিকে ঠেলে রাখুন। কিন্তু ঝুঁকবেন না।
· এ বার দু’হাত প্রণামের ভঙ্গিতে বুকের কাছেও রাখতে পারেন। না হলে হাত দু’টি মাথার উপর তুলে প্রণামের ভঙ্গিটি করা যেতে পারে।
· তবে প্রথমেই খুব বেশি ক্ষণ এই অবস্থানে থাকতে পারবেন না। ১০ সেকেন্ড পারলেই যথেষ্ট। পরে সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন।
· এ বার দুই পা এবং দুই হাতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে মাটি থেকে গোটা দেহ তুলে আরামদায়ক অবস্থানে ফিরে যেতে হবে। কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ডান পায়ে একই ভাবে অভ্যাস করতে হবে এই আসন।
কেন করবেন?
দেহের গঠনভঙ্গি ঠিক করতে সাহায্য করে এই আসন। এতে শরীরের নিম্নাংশের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। পায়ের পেশি মজবুত হয়। স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতেও সাহায্য করে এই আসন। হনুমানাসন অভ্যাস করলে পা, হাঁটু তো বটেই, কোমর, পিঠ, মেরুদণ্ডের ব্যথা-বেদনাতেও আরাম মেলে।
সতর্কতা:
হনুমানাসন কিন্তু ‘অ্যাডভান্সড পশ্চার’-এর অন্তর্গত। যাঁরা সবেমাত্র শরীরচর্চা করতে শুরু করেছেন, তাঁদের অত্যন্ত সাবধানে এই আসন অভ্যাস করতে হবে। এই ধরনের আসন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানেই করা উচিত। হ্যামস্ট্রিংয়ে কোনও ভাবে চোট-আঘাত লেগে থাকলে এই আসন করা যাবে না। কোমরের তলার অংশে বা নিতম্বে চোট-আঘাত লেগে থাকলেও সতর্ক থাকতে হবে। হনুমানাসন করার সময়ে দু’পায়ের ব্যবধান থাকে অনেকটা। সকলের শরীর এতটা নমনীয় নয়। পা স্ট্রেচ করতে গিয়ে যেন চোট না লাগে সে দিকেও নজর রাখতে হবে। এই আসন করতে গিয়ে যদি কারও অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দনের সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy