Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিদেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর আটকে বার্তা হাসিনার

প্রশ্ন উঠেছে, যে-সব অনুষ্ঠানের কারণ দেখিয়ে বিদেশমন্ত্রীর সফর বাতিল করা হল, সেগুলি বহু বছর ধরে ওই দিনেই হয়!

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।—ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।—ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায় 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৩
Share: Save:

নয়াদিল্লির বিমানে ওঠার কয়েক ঘণ্টা আগে আজ সফর বাতিল করলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ভারত ওশিয়ান সংলাপে যোগ দিতে তিন দিনের এই সফর বাতিলের কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস (১৩ ডিসেম্বর) সামনেই। সেই অনুষ্ঠানগুলিতে উপস্থিত থাকতে হবে তাঁকে। একই সময়ে ওশিয়ান সংলাপের তারিখ পড়ায় তাঁর আসা হল না। শুক্রবার মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার আমন্ত্রণে শিলংয়ে যাওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের। রাতে তাঁর মন্ত্রক জানিয়েছে, পরে ‘উপযুক্ত সময়ে’ মন্ত্রী এই সফরে যাবেন।

প্রশ্ন উঠেছে, যে-সব অনুষ্ঠানের কারণ দেখিয়ে বিদেশমন্ত্রীর সফর বাতিল করা হল, সেগুলি বহু বছর ধরে ওই দিনেই হয়! ওশিয়ান সংলাপের দিনও স্থির হয়েছে মাসখানেক আগে। তা হলে সম্মতি দিয়েও শেষ মুহূর্তে কেন বিমানে উঠলেন না মোমেন? কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত সে-দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বুধবার রাতে মোমেন হাসিনার বাসভবনে দেখা করতে গিয়েই এই নির্দেশ নিয়ে ফিরেছেন। সম্প্রতি সংসদে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি যে ঢাকার রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে গভীর অসন্তোষ তৈরি করেছে তা, এই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হয়ে গেল। মোদী সরকারকে এতটা কড়া বার্তা দিতে সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

আজ অবশ্য সাংবাদিক বৈঠক করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বিশদ ভাবে বুঝিয়েছেন, কেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর সফর বাতিল করা এবং সিএবি পাশের বিষয়টিকে পৃথক ভাবে দেখা উচিত। সংসদের দুই কক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতা উদ্ধৃত করে রবীশ আজ তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, অমিত শাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারত সরকার মনে করে সামরিক শাসন এবং খালেদা জিয়ার সময়েই সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসাই করেছেন শাহ।

কিন্তু ঘটনার গতি থেকে স্পষ্ট যে বাংলাদেশের অসন্তোষ গভীরে। গত কাল রাতে সিএবি পাশ হওয়ার পর এই মোমেনই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ভারতের নিজের দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। ওরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করুক, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। বন্ধু দেশ হিসাবে আমরা আশা করছি ভারত এমন কিছু করবে না, যাতে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের মতো খুব কম দেশই রয়েছে যেখানে এত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে। উনি (অমিত শাহ) আমাদের দেশে কয়েক মাস থাকলেই দেখতে পাবেন, এখানকার সম্প্রীতি নজির হতে পারে।’’ বাংলাদেশ সূত্রের বক্তব্য, বিল পাশের সময় যে ভাবে বার বার পাকিস্তানের সঙ্গে একই বন্ধনীতে বাংলাদেশকে রেখে সংখ্যালঘু নিপীড়নের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে, তা হাসিনা সরকারের জন্য বিড়ম্বনার।

বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আজ সফর বাতিল করার পরে সাংবাদিক বৈঠকে রবীশ বলেছেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং মজবুত। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর সফর বাতিল এবং নাগরিকত্ব বিল পাশ হওয়া, দু’টি আলাদা ঘটনা। নয়াদিল্লি না আসতে পারার কারণ হিসাবে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেটিকেই মানা উচিত।’’ পাশাপাশি রবীশ বাংলাদেশকে বার্তা দিতে চেয়ে বলেছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, কিছু বিভ্রান্তি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে সাফ ব্যাখ্যা করেছেন যে সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মীয় উৎপীড়ন বর্তমান সরকারের সময় হয়নি। সে দেশে পূর্ববর্তী সরকার এবং সামরিক শাসনের সময় এটা হয়েছে। বরং বর্তমান হাসিনা সরকার সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন।’’

ঢাকা সূত্রের বক্তব্য, বঙ্গবন্ধু ও হাসিনার প্রশংসা করার পাশাপাশি অমিত শাহ এ কথাও বলেছেন, ‘‘একাত্তরের পরেও সে-দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।’’ ঢাকা মনে করে, কার সময়ে কী ঘটেছে সেই কাদা বার বার ছোঁড়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সার্বিক ভাবে একটি বার্তা গিয়েছে। আওয়ামি লিগের কট্টর ইসলামি অংশকে ভারত-বিরোধিতার জিগির তোলায় উদ্বুদ্ধ করার পক্ষে তা যথেষ্ট। ভারত-বিদ্বেষী প্রচারের ইন্ধন জোগাতে শুরু করেছে বিএনপি-ও। গত

অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যে কূটনৈতিক কর্তারা ভারতে এসেছিলেন, তাঁদের মতে— অসম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুসলিমদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জনমানসে। ঘরোয়া রাজনীতিতে তা হাসিনার পক্ষে অনুকূল নয়। আওয়ামি লিগের ইসলামপন্থী অংশ ভারত-বিরোধী প্রচার শুরু করলে ভারত-বাংলাদেশ কৌশলগত ও বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বাধার মুখে পড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। মাঝখান থেকে চিনের প্রতি নির্ভরতা বাড়বে ঢাকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE