ভয়ঙ্কর: রবিবারের আনাক ক্রাকাতোয়া। তার তাণ্ডবে এখন এমনই হাল ইন্দোনেশিয়ার কারিতা সৈকতের। রয়টার্স, এএফপি
অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত লাভার চাপে হঠাৎ ফেটে গেল আগ্নেয়গিরির দেওয়াল। তার জেরে সমুদ্রের তলদেশে থাকা ভূস্তরের প্লেটে নামল বিপুল ধস।
রিখটার স্কেলে ৭.৫ মাত্রার ভূকম্পের অনুরূপ শক্তি নির্গত হল। সমুদ্রের নীচে বিস্তীর্ণ এলাকার জলস্তরকে তা ঠেলে সরিয়ে দিতেই সমুদ্র উঠল ফুলেফেঁপে। প্রায় ২০ মিটার উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ল পাড়ে।
ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা প্রণালীতে শনিবার রাতে যে সুনামি হয়েছে, তাকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন ভূ-পদার্থবিদেরা। খড়্গপুর আইআইটি-র ভূ-পদার্থবিদ শঙ্কর কুমার নাথের বিশ্লেষণ, যে ভাবে সমুদ্রের জল সেখানে ঠেলে উঠেছিল, তাতে সমুদ্রের তলদেশে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের সমতুল শক্তি নির্গত হয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে। অর্থাৎ ভূ-পদার্থবিদেরা বলছেন, অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ টন টিএনটি (ট্রাই নাইট্রো টলুয়িন) বিস্ফোরক ফাটলে যে শক্তি নির্গত হয়, সেটাই তৈরি হয়েছিল ওই মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে। এ বছর ৩০ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়াতেই সমুদ্রের নীচে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প থেকে তৈরি হয়েছিল সুনামি। সেই ভূমিকম্পেও একই পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়েছিল বলে মনে করছেন ভূ-পদার্থ বিদেরা।
তবে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভোরে ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রের নীচে রিখটার স্কেলে ৯.১ ভূমিকম্পের জেরে যে সুনামি তৈরি হয়েছিল, তার তুলনায় এই সুনামি শিশু। শঙ্করবাবু বলেন, ২০০৪-এর ভূকম্পে সমুদ্রের তলদেশে একটি প্লেট আর একটি প্লেটের নীচে ঢুকে যাওয়ায় ৭০ লক্ষ টন টিএনটি (ট্রাই নাইট্রো টলুয়িন) বিস্ফোরণের শক্তি নির্গত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সতর্কবার্তা ছাড়াই ধেয়ে এল ভয়াল প্লাবন, ইন্দোনেশিয়ায় মৃত অন্তত ২২২
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সুনামি হতে পারে সমুদ্রের নীচে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি শক্তির ভূমিকম্প হলে বা আগ্নেয়গিরি ফেটে গিয়ে সমুদ্রতলের ভূস্তরে বিশাল ধস তৈরি হলে। অতিকায় উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়লেও সমুদ্রের নীচে ধস তৈরি হতে পারে।
সমুদ্রের নীচে প্লেট ধসে এতটা শক্তি বেরোলেও, কম্পন পরিমাপক যন্ত্র কিন্তু ওই কম্পনের কোনও মাত্রা জানায়নি। কেন? শঙ্কররবাবু বলেন, ভূমিকম্পের সময়ে দুই ধরনের কম্পন হয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কম্পন। দুই কম্পনের মধ্যবর্তী সময়ের বিচার করে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ধসের জন্য প্লেট বসে গেলে তা থেকে শুধু প্রাথমিক কম্পন তৈরি হয়, যেমন হয় মাটির তলায় পারমাণবিক বোমা ফাটালেও। তাই সেই কম্পনের শক্তি যন্ত্র পরিমাপ করতে পারে না।
আরও পড়ুন: প্রাণ হাতে নিয়ে জাকার্তার পথে
শঙ্করবাবুরা মনে করছেন, বিপদ এখনও যায়নি। ধস নেমে সমুদ্রের নীচের প্লেটের যে অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করবে। সেই সময় ফের সমুদ্রের নীচে প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হবে। কতটা শক্তি নির্গত হচ্ছে তার উপরেই নির্ভর করবে ফের সুনামি হতে পারে কি না।
আগ্নেয়গিরিবহুল ও ভূকম্পপ্রবণ প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশটি ‘রিং অব ফায়ার’ বলে পরিচিত, সেখানেই ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান। ফলে সেখানে বারবার বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে থাকে। তবে আগ্নেয়গিরি থেকে এই ধরনের সুনামি আগে ঘটেনি বলেই জানাচ্ছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy