Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
diabetes

ডায়াবিটিস? সুস্থ থাকতে এই সব ব্যায়াম করতেই হবে

অসুখ হিসেবে যেমন চিকিৎসা ভিন্ন, তেমনই বিভিন্ন রোগের সমাধানে ব্যায়ামের ধরন এবং সময়ও আলাদাঅসুখ হিসেবে যেমন চিকিৎসা ভিন্ন, তেমনই বিভিন্ন রোগের সমাধানে ব্যায়ামের ধরন এবং সময়ও আলাদা

কিছু খেয়ে ব্যায়াম শুরু করুন, খালি পেটে নয়।

কিছু খেয়ে ব্যায়াম শুরু করুন, খালি পেটে নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ০২:০৩
Share: Save:

বছর চল্লিশের অর্ণব প্রত্যেক দিন সকালে দৌড়তে যান। একে তাঁর ডায়াবিটিস, তার উপরে চেহারাও ভারী। কিন্তু দিনকয়েক দৌড়াদৌড়ি করার পরে একদিন তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন বাড়ি ফেরার পথে...

অর্ণবের যেটা হয়েছে, তা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। সেটা বোঝার জন্য আগে কারণটা বুঝতে হবে। ডায়াবিটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েট ও ওষুধের সঙ্গে সমান জরুরি নিয়মিত ব্যায়াম। কিন্তু যে কোনও সময়ে নয়। তার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে।

‘ডায়াবিটিস’কে বুঝতে হবে

জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে ইনসুলিনের কাজ ব্যাহত হয়। তখন রক্তে শর্করার পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তাই চর্বি ঝরানোর জন্য কার্ডিয়োভাস্কুলার এক্সারসাইজ় করতে হবে। আর কখন ব্যায়াম করছেন, সেটাও জরুরি। অনেকেই ঘুম থেকে উঠে দৌড়তে চলে যান। এতে হিতে বিপরীত হয়। ডায়াবেটিক রোগীদের মর্নিং ওয়াক বা খালিপেটে দৌড়তে বারণ করা হয়। ব্লাড সুগার পরীক্ষায় সব সময়ে ফাস্টিংয়ের চেয়ে পিপি-র রিপোর্টে সুগার লেভেল বেশি আসে। কারণ খাবার খাওয়ার পরে তার শর্করা শরীর কত তাড়াতাড়ি ভাঙতে পারছে এবং রক্তে পৌঁছচ্ছে, তার উপরেই শরীরের সুস্থতা নির্ভরশীল।’’ তাই কিছু খেয়ে ব্যায়াম শুরু করুন, খালি পেটে নয়। বিকেলে হাঁটতে পারেন। ব্রেকফাস্টের কিছুক্ষণ পরে শুরু করা যায় ব্যায়াম।

কার্ডিয়ো ব্যায়াম জরুরি

এমন ব্যায়াম করতে হবে যাতে ঘাম ঝরবে। তবেই কিন্তু লাভ হবে। সাধারণত সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করার কথা বলা হয়। সপ্তাহে সাত দিনে ভাগ করলে প্রত্যেক দিন ২০-২৫ মিনিট। তবে ডায়াবিটিসের ধরন ও ব্লাড সুগারের মাত্রার উপরে এই সময়ের ওঠানামা করে।

আরও পড়ুন: চনমনে থাকতে চান? চেয়ারে বসেই অভ্যাস করুন এই ব্যায়াম​

যে সব ব্যায়ামে লাভ পাবেন, তা হল—

• লাইট জগিং: বাড়ির ছাদে বা সামনে মাঠ থাকলে সেখানে কম গতিতে বেশিক্ষণ ধরে লাইট জগ করতে পারেন।

• সাঁতার: এর কোনও জুড়ি নেই। যদিও এখন বেশির ভাগ সুইমিং পুলই বন্ধ। তবুও বাড়িতে সাঁতারের ব্যবস্থা থাকলে দিনে আধ ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারেন।

• দৌড়: খোলা ছাদে মিনিট কুড়ি দৌড়লেও ভাল কাজ হয়।

• স্পট জগিং: বাড়ি থেকে বেরোনোর উপায় না থাকলে বাড়ির মধ্যে স্পট জগ করে নিতে পারেন।

• খেলার মাধ্যমে: ব্যায়াম করতে ভাল না লাগলে টেনিস বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলা বেছে নিতে পারেন। এতেও কিন্তু ভালই ঘাম ঝরবে।

• নাচ: ভাল মিউজ়িক চালিয়ে আধ ঘণ্টা নেচে নিতে পারেন। এতে মনও ভাল থাকবে। শরীরের পক্ষেও তা কার্যকর।

আরও পড়ুন: বাইরে সংক্রমণের ভয়, ছাদে হাঁটলে কতটা কাজ হবে?​

যোগব্যায়ামও উপকারী

ডায়াবিটিসের জন্য শরীরের স্ট্রেস হরমোনও সমান দায়ী। তাই হতাশা, ক্লান্তি কাটাতে মন শান্ত রাখা প্রয়োজন। ঘুম থেকে উঠে বরং যোগব্যায়াম করতে পারেন। প্রাণায়াম, কপালভাতির মাধ্যমে অনেকটাই স্ট্রেস কেটে যায়। মেডিটেশন ও সূর্যপ্রণাম করলেও উপকার পাবেন।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও হাইপারগ্লাইসেমিয়া

ডায়াবিটিসকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় বলা হয় হাইপারগ্লাইসেমিয়া। হালকা খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। কিন্তু ব্যায়ামের ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি যেন না হয়! ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘ধরুন কোনও ডায়াবেটিক রোগীর ইনসুলিন বা ওষুধ চলছে। ফলে রক্তে তার গ্লুকোজ় লেভেল স্বাভাবিকের কাছাকাছিই রয়েছে। রোগী সেটা বুঝতে পারছেন না। তিনি খালি পেটে খুব ভারী ব্যায়াম করতে গেলেন। এতে কিন্তু হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অর্থাৎ ব্লাড সুগার লেভেল হুট করে অনেকটা নেমে গিয়ে রোগীর শরীরে ক্ষতি করতে পারে।’’

আরও পড়ুন: ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সঙ্গী ঘাড়-কোমর ব্যথা, কী করবে‌ন কী করবেন না

তাই ইনসুলিন বা নিয়মিত ওষুধ চললে আরও সচেতন হন। ব্যায়ামের আগে অবশ্যই হালকা কিছু খেয়ে নিতে হবে। নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করাও জরুরি।

ষাটোর্ধ্ব ও হাঁটুর সমস্যায়

বয়সের কাঁটা পঞ্চাশের দিকে এগোলেই খাবারে রাশ টানা ও ব্যায়ামের রশি ধরার সময় শুরু। একটা বয়সের পরে হাঁটুর সমস্যা শুরু হয়। তার সঙ্গেই বয়সজনিত কারণে অনেকেরই গতিবিধি ক্রমশ শ্লথ হয়ে আসে। এ দিকে শারীরিক অক্ষমতার কারণে, হাঁটুর ব্যথার জন্য অনেকেই দৌড়নো, জগিং, নাচ ইত্যাদি ভারী কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ় করতে পারেন না। তখন কিন্তু খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আর ভরসা রাখতে হবে ওষুধে। তবে হাঁটাচলা ও যোগব্যায়াম জারি রাখুন। মন শান্ত থাকলে স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রিত থাকে। তাই কম বয়স থেকে এই ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাবধান হতে হবে।

আরও পড়ুন:

এখন অনেকেই সেডেন্টারি জীবনযাপনে অভ্যস্ত, ফলে খুব সহজেই থাবা বসাচ্ছে ডায়াবিটিস। শরীর সুস্থ রাখতে সময় থাকতেই জীবনযাপনে বদল আনুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE