ভারতের নিজের তৈরি ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর (চিপ) ‘বিক্রম ৩২০১’ প্রকাশ্যে আনল কেন্দ্র। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ আগেই হয়ে গিয়েছে। তাতে সাফল্যও এসেছে। মঙ্গলবার দিল্লিতে ‘সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫’-র সম্মেলনে সেই মাইক্রোপ্রসেসর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
‘বিট’ বা ‘বাইনারি ডিজিট’ হল কম্পিউটার ডেটার ক্ষুদ্রতম একক। ৮ বিটের সমান এক বাইট। চণ্ডীগড়ে অবস্থিত সেমিকন্ডাক্টর ল্যাবরেটরির সহযোগিতায় ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো তৈরি করেছে এই ‘বিক্রম ৩২০১’ চিপ। আমাদের মোবাইলে বা ল্যাপটপে যে মাইক্রোচিপ থাকে, এ-ও ঠিক তেমনই। তবে এটি বিশেষ ভাবে তৈরি হয়েছে রকেট এবং কৃত্রিম উপগ্রহে ব্যবহারের জন্য।
এত দিন পর্যন্ত ভারতের নিজের তৈরি কোনও ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর ছিল না। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে বিদেশি প্রসেসরের উপর নির্ভর করে থাকতে হত ভারতকে। ২০০৯ সাল থেকে ইসরোর বিভিন্ন রকেটে ১৬-বিটের মাইক্রোচিপ ‘বিক্রম ১৬০১’ ব্যবহার হয়ে আসছিল। পরে ২০১৬ সালে সম্পূর্ণ ভাবে ভারতে তৈরি ‘বিক্রম ১৬০১’-এর ব্যবহার শুরু হয় ইসরোর রকেটগুলি। এ বার মহাকাশচর্চায় মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহারের দিকে আরও এক ধাপ এগোল ভারত। প্রকাশ্যে এল ভারতের নিজের তৈরি ৩২-বিট মাইক্রোচিপ ‘বিক্রম ৩২০১’। সরকারি আধিকারিকদের কথায়, এই পদক্ষেপ সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে ভারতকে স্বনির্ভর করার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল।
আগের মাইক্রোচিপগুলির তুলনায় নতুন চিপগুলির ফারাক হল, এগুলি আরও বেশি পরিমাণে ডেটা ধারণের ক্ষমতা রাখে। অন্য প্রযুক্তিগত সুবিধাও বেশি মিলবে এই চিপে। মহাকাশ অভিযানের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন চরম পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করা হয়েছে এই চিপটিকে। খুব শীতল বা ভীষণ উষ্ণ পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এটি। ৫৫ ডিগ্রি থেকে ১২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে ইসরোর তৈরি এই মাইক্রোচিপের। দশমিকের হিসাবও সহজেই সেরে ফেলতে পারে। পাশাপাশি কম্পন এবং বিকিরণ সহ্যের ক্ষমতাও আছে।
ইতিমধ্যে মহাকাশ অভিযানেও সফল ভাবে পরীক্ষা হয়েছে ‘বিক্রম ৩২০১’-এর। চলতি বছরের মার্চেই এই চিপের প্রথম দফার উৎপাদন ইসরোর হাতে তুলে দেয় বৈদ্যুতিন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। ওই সময়ই স্পেডেক্স অভিযানে পিএসএলভি-সি৬০ রকেটে এই ৩২-বিটের চিপটি বসানো হয়েছিল। তাতে সাফল্যের পরে ‘বিক্রম ৩২০১’ চিপটি আরও ব্যাপক পরিসরে ব্যবহারের কথা ভাবছে ইসরো।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই চিপ তুলে দিয়ে অশ্বিনী বলেন, “সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দূরদর্শিতার জন্য। মাত্র কয়েক বছর আগে, আমরা ‘ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন’ শুরু করেছি। সাড়ে তিন বছরের এই অল্প সময়ের মধ্যেই এক আত্মবিশ্বাসী ভারতকে দেখছে বিশ্ব। আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাতে প্রথম ‘মেড-ইন-ইন্ডিয়া’ চিপ তুলে দিচ্ছি।”
সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে ভারত আগামী দিনে গোটা বিশ্বকে পথ দেখাবে বলে আশাবাদী মোদী। দিল্লির ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত শতাব্দীতে কার হাতে কত ক্ষমতা থাকবে, তা স্থির করেছে খনিজ তেল। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে সেই ক্ষমতা ছোট একটি চিপের মধ্যে এসে গিয়েছে। গোটা বিশ্বের উন্নয়নে গতি আনার ক্ষমতা রয়েছে এই চিপের। মোদী বলেন, “ভারতের তৈরি ছোট একটি চিপ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বদল ঘটাবে, সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নেই। সেই দিন আর বেশি দেরি নেই, যখন বিশ্ব বলবে, ভারতের পরিকল্পনায় ভারতে বানানো জিনিসে গোটা পৃথিবীর ভরসা রয়েছে।”