Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
খুদে প্রতিভাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে সিনেমা
Football

দানিকে ফ্রি-কিক ‘মাস্টার’ বানানোর ভাবনা বিজয়নের

আর এই এক গোলেই গত ৭২ ঘণ্টায় বদলে গিয়েছে কালিকটের চিত্র সাংবাদিক আবু হাশিমের পরিবারের ছবিটা।

তারা: পুরস্কারের সঙ্গে বিস্ময় প্রতিভা দানিশ পি কে। নিজস্ব চিত্র

তারা: পুরস্কারের সঙ্গে বিস্ময় প্রতিভা দানিশ পি কে। নিজস্ব চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩০
Share: Save:

কর্নার সার্কলে বল বসিয়ে ডান পায়ে লাল রঙের জার্সিধারী খুদে ফুটবলারের ইনসুইঙ্গার শট। ৮০ নম্বর জার্সির পিঠে লেখা দানি। মুহূর্তের মধ্যে সেই বল দ্বিতীয় পোস্টের সামান্য আগে ধনুকের মতো বেঁকে সরাসরি জড়িয়ে গেল জালে। শূন্য ডিগ্রি কোণ থেকে এই বিস্ময় গোলের পরেই দু’হাত তুলে ছুটতে থাকে ওই খুদে ফুটবলার।

রবিবার কেরলের আন্তঃপঞ্চায়েত অনূর্ধ্ব-১০ ফুটবল প্রতিযোগিতায় এই অবিশ্বাস্য গোল করে ভারতীয় ফুটবল মহলে আপাতত নায়কের মর্যাদা পাচ্ছে কেরল ফুটবল ট্রেনিং সেন্টারের দানিশ (ডাক নাম দানি) পি কে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রের এই গোল ইতিমধ্যেই ভাইরাল। যা দেখে মুগ্ধ আই এম বিজয়ন থেকে গোকুলম কোচ সান্তিয়াগো ভায়েরাও।

আর এই এক গোলেই গত ৭২ ঘণ্টায় বদলে গিয়েছে কালিকটের চিত্র সাংবাদিক আবু হাশিমের পরিবারের ছবিটা। বুধবার সকালে যখন ফোনে ধরা হল, তখন তিনি এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। দশ মিনিট পরে নিজেই ফোন করে বললেন, ‘‘এত দিন খবরের পিছনে ছুটতাম। রবিবার ছেলের ওই অবিশ্বাস্য গোলটা কেরলের সব সাংবাদিককে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘একটু আগেই কেরলের ক্রীড়ামন্ত্রী ফোন করে খোঁজ নিলেন। গোকুলম এফসির আর্জেন্টিনীয় কোচ সান্তিয়াগো ভায়েরাও কোথা থেকে নম্বর জোগাড় করে সকালে ছেলের প্রশংসা করে এক দিন দেখা করতে চাইলেন। আর আই এম বিজয়ন তো ওই গোলের ভিডিয়ো প্রথম পোস্ট করেছেন।’’

কী হয়েছিল রবিবারের ওই ম্যাচে? হাশিম বলেন, ‘‘কেরল আন্তঃপঞ্চায়েত অনূর্ধ্ব-১০ ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল ছিল রবিবার। কেরল ফুটবল ট্রেনিং সেন্টারের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ওয়েনাড-এর মিনাঙ্গাড়ি এফসি। হ্যাটট্রিক করে দলকে জেতায় দানিশ। তৃতীয় গোলটি হয়েছে ওই শূন্য ডিগ্রি কোণ থেকে। প্রতিযোগিতায় ১৩ গোল করে সেরা ফুটবলার দানিশই।’’

যাকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই, সেই দানিশ কিন্তু নির্লিপ্ত। তার কথায়, ‘‘ও রকম গোল অনুশীলনেও বেশ কয়েক বার করেছি। রোজ দিনে একশোটা করে সেট পিস অনুশীলন করি। সে দিন মনে হল ইনসুইঙ্গার রাখব। ব্যস! গোল হয়ে গেল।’’ সুনীল ছেত্রী ও লিয়োনেল মেসির ভক্ত এ বার শোনায় আসল কথাটা। বলে, ‘‘বিজয়ন আঙ্কল বলেছেন আরও ভাল ফ্রি-কিক মারা শিখিয়ে দেবেন। তা দ্রুত শিখে নিতে হবে। আমাকে ভারতের পাশাপাশি ইউরোপের ক্লাবে এক দিন খেলতেই হবে।’’

মজার ব্যাপার এটাই যে, দানি ওরফে দানিশের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবলের কালো হরিণ বিজয়নের পরিচয় খেলার মাঠে নয়। সিনেমার সেটে। ত্রিশূরের বাড়ি থেকে বিজয়ন বলেন, ‘‘ওই বাচ্চা ছেলেটি দুর্দান্ত প্রতিভা। ঠিক ভাবে ঘষেমেজে গড়তে পারলে ভারতীয় ফুটবলের লাভ। মনে রাখবেন, ও কিন্তু বাঁ-পায়ের ফুটবলার। কর্নারটা নিয়েছে ডান পায়ে। তা হলেই বুঝুন ফুটবলে ওর দখল কতটা!’’ যোগ করেন, ‘‘দানিশের ফুটবলপ্রেম নিয়েই একটি মালয়ালি সিনেমা তৈরি হচ্ছে। যার বিষয়বস্তু একটি বাচ্চার বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। সেখানে আমি ফুটবল কোচ হিসেবে অভিনয় করছি। ওখানেই দানিশের সঙ্গে প্রথম আলাপ। প্রথম দিন ওর বাঁক খাওয়ানো ফ্রি-কিক দেখে তো চমকেই গিয়েছিলাম। বড়রাও অনেকে ও রকম বাঁক খাওয়াতে পারে না। রবিবারে গোলটার পরে ফোন করে বলেছি, তোকে ফ্রি-কিকের মাস্টার বানাব।’’

দানিশের মা নোভিয়া আশরফ পেশায় ‘বিশেষ প্রশিক্ষক’। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘তিন বছর বয়স থেকেই ফুটবল ওর সঙ্গী। সাত বছর বয়সে ভর্তি করে দিয়েছিলাম কেরল ফুটবল ট্রেনিং সেন্টারে। এখন তো অনূর্ধ্ব-১৪ দলের সঙ্গে ওকে খেলানো হয়। সেখানেও ওকে আটকানো কঠিন হয়। চাই ছেলে একদিন বিদেশে ফুটবল খেলুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football IM Vijayan Dani P.K Kerala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE