Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনার কিট ও ভেন্টিলেটর ক্রয়ে অস্বচ্ছতা

কেনাকাটা নিয়ে যেখানেই এমন খটকা রয়েছে, সবই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪১
Share: Save:

কখনও জরুরি ভিত্তিতে কেনাকাটা হয়েছে দরপত্র ছাড়াই। দরপত্র ডেকেও করোনার চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দামের ফারাক অনেক। এই কেনাকাটায় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ইতিমধ্যে বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের নেতৃত্বে। নথিপত্র দেখে কেনাকাটায় বেশ কিছু অস্পষ্টতার জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে।

যেমন, দরপত্র ছাড়াই ১৮ জুন কলকাতার একটি সংস্থা থেকে প্রায় ছ’লক্ষ ভাইরাল মিডিয়া ট্রান্সপোর্ট কিট (তিন মিলিলিটার) কেনে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। লালারসের নমুনা সংগ্রহের ওই কিট কেনা হয় প্রতিটি ৮৬ টাকা দরে। তাতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়।

সেই একই কিট কিনতে অগস্টে দরপত্র ডাকার পরে দেখা যায়, নির্বাচিত সংস্থা এক-একটি কিটের দাম দিয়েছে মাত্র ২৪ টাকা! তার থেকেও অদ্ভুত হল, যে-সংস্থার কাছ থেকে জুনে ৮৬ টাকা দরে কিট কেনা হয়েছিল, তারাই অগস্টের দরপত্রে দাম দিয়েছে ২৬ টাকা! প্রশ্ন উঠছে, ২৪ টাকায় যে-কিট পাওয়া যায়, দেড় মাস আগে সেটা ৮৬ টাকায় কেনা হয়েছিল কেন? যে-সংস্থা তার ২৬ টাকা দাম দেয়, তারা কেন মাত্র দেড় মাস আগে সেই জিনিস ৮৬ টাকায় বিক্রি করল?

করোনা চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে মার্চে দু’টি ‘পিবি-৮৪০’ আইসিইউ ভেন্টিলেটর দরপত্র ছাড়া কেনে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন’। প্রতিটির দাম ১০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। অথচ তার মাত্র দু’মাস পরে ২০টি একই ভেন্টিলেটর কেনা হয় ১৩ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা দরে। অর্থাৎ ভেন্টিলেটর-পিছু প্রায় তিন লক্ষ টাকা বেশি দেওয়া হয়।

মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, করোনার জন্য মে-জুনে জিনিসপত্রের উৎপাদন ভীষণ ভাবে কমে যায়। বিদেশ থেকে জিনিস আমদানি করা যাচ্ছিল না। সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউটর জার্মানির তৈরি ওই ভেন্টিলেটর দিতে না-পারায় বাধ্য হয়ে অন্য ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে বেশি দামে তা কিনতে হয়। ‘‘তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক। আমাদের আর প্রয়োজনও নেই। তাই ২৩১টি ভেন্টিলেটরের বরাত বাতিল করেছি,’’ বলেন ওই কর্পোরেশন-কর্তা।

ওই কর্তা যা-ই বলুন, কেনাকাটা নিয়ে যেখানেই এমন খটকা রয়েছে, সবই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলা যাবে না বলে জানান স্বাস্থ্যসচিব নিগম। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোভিডের শুরুতে আচমকাই অনেক কিছু কিনতে হয়েছিল। চাপ ছিল। তখন কিছু ‘লোকাল পারচেজ়’ (স্থানীয় ভাবে কেনা) হয়েছে। তাতে কিছু সমস্যা হয়। কিন্তু এখন সমস্ত দরপত্র প্রক্রিয়া অত্যন্ত খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে এবং অত্যন্ত কঠোর নজরদারিতে হচ্ছে।’’

তবে অভিযোগ এখনও রয়েছে। যেমন, উত্তর ২৪ পরগনায় সরকারি তালিকাভুক্ত সংস্থার কাছ থেকে বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট ব্যাগ না-কিনে বাইরের একটি সংস্থা থেকে একই দামে প্রায় ন’লক্ষ নিম্ন মানের ব্যাগ কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্যের অনেক জায়গায় আবার এমন নিম্ন মানের গ্লাভস স্থানীয় ভাবে কেনা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে জল ঢুকছে।

অভিযোগ, এফএফপি-২ মাস্ক ও এন-৯৫ মাস্ক কেনার দু’টি দরপত্র খোলার দিন ছিল ২৫ অগস্ট। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর এ-পর্যন্ত এই বিষয়ে নীরব। ৮ সেপ্টেম্বর শুধু টেকনিক্যাল বিড খুলেছে, কিন্তু কবে ফিনান্সিয়াল বিড খুলে মাস্কের বরাত দেওয়া হবে, কেউ জানে না। দরপত্র প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়া বিভিন্ন সংস্থার অভিযোগ, বিনা দরপত্রে আগে একটি সংস্থা থেকে ৪২ টাকা মূল্যে ওই মাস্ক কেনা হয়েছে। দরপত্র চূড়ান্ত হয়ে গেলে সেই সংস্থা আর মাস্ক দিতে পারবে না। কারণ, অন্য সংস্থা অনেক কম দাম দিয়েছে। তাই ইচ্ছা করে ওই দরপত্র চূড়ান্ত করতে দেরি করছেন কিছু কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE