উপাসনাগৃহের সামনের রাস্তায় দলীয় পতাকা ওড়াচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে সেই রাজনীতিই করে দেখালেন অনুব্রত মণ্ডল!
বৃহস্পতিবার উপসনাগৃহের সামনে দিয়ে দলীয় পতাকা নিয়ে মোটরবাইক মিছিল করল তৃণমূল। মিছিল থেকে উঠল মুহুর্মুহু রাজনৈতিক স্লোগান। বড় বড় বক্স লাগিয়ে বক্তৃতাও দিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত। একই সঙ্গে সাত দিন আগে উদ্বোধন হওয়া রাস্তার সাইনবোর্ড নতুন করে এ দিন শঙ্খ ও উলুধ্বনি সহযোগে এবং নারকেল ফাটিয়ে উদ্বোধনও করলেন অনুব্রত। বলে দিলেন, ‘‘বিশ্বভারতী বিশ্বভারতীর জায়গায় থাকবে, পূর্ত দফতরের রাস্তা রাস্তার জায়গায় থাকবে।’’
এই ঘটনার পরে শাসক দলের সঙ্গে বিশ্বভারতীর সংঘাত আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, বিশ্বভারতীর বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই রাস্তা ফেরত পাওয়ার দাবিতে শনিবার ছাতিমতলায় এক ঘণ্টার প্রতীকী অবস্থানে বসতে পারেন উপাচার্য-সহ বিশ্বভারতীর কর্তারা। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশ্বভারতীর কোনও প্রতিক্রিয়া রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
গত ২১ ডিসেম্বর বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে অনুব্রত হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যদি ‘পাগলামো’ বন্ধ না-করেন, তা হলে তিনি বিশ্বভারতীর ভিতরে ঢুকে দলীয় পতাকা নিয়ে রাজনীতি করবেন। ২৮ ডিসেম্বর বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কাচমন্দির থেকে কালিসায়র মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যে রাস্তাটি ২০১৭ সালে বিশ্বভারতীর হাতে দেওয়া হয়েছিল, তা রাজ্য সরকার আবার ফিরিয়ে নিচ্ছে। ২৯ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো উপলক্ষে তৃণমূলের পতাকা লাগানো হয় কাচ মন্দিরের রেলিংয়ের গায়ে। রোড শো-এর পরে জামবুনিতে জনসভার মঞ্চ থেকে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ‘বিজেপির ছাপ মারা’ বলে অভিযোগ তোলেন তৃণমূল নেত্রী।
আর এ বার সরাসরি বিশ্বভারতীর ভিতরেই ঢুকে পড়লেন অনুব্রত। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণার চার দিন পরেই জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিক এবং আশ্রমিকদের একাংশের উপস্থিতিতে সরকারি ভাবে ওই রাস্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেয় রাজ্য পূর্ত দফতর (সড়ক)। লাগানো হয় নতুন সাইনবোর্ডও। এ দিন সেই সাইনবোর্ডটিকেই নতুন করে সাজিয়ে পুনরায় উদ্বোধন করলেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, বিশ্বভারতীর হাতে থাকাকালীন এই রাস্তার কোনও সংস্কার হয়নি। তিনি বলেন, “কাল-পরশুর ভিতরেই টেন্ডার হয়ে যাবে। রাস্তাটা অনেক চওড়া হবে, মানুষের উপকার হবে।’’
কিন্তু, এ দিন রাস্তার উদ্বোধন ঘিরে যা ঘটল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, একই রাস্তার দু’বার উদ্বোধনের কারণ কী। দ্বিতীয়ত, কাচমন্দির, রবীন্দ্রভবন, কলাভবন, সঙ্গীতভবন-সহ একাধিক সংরক্ষিত এলাকার পাশে বড় বড় বক্স লাগানোর যৌক্তিকতা কী। তৃতীয়ত, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে দলীয় পতাকা হাতে বাইক র্যালি কেন। সব শেষে, সরকারি অনুষ্ঠানে তৃণমূলের দলীয় পতাকা কেন?
এর উত্তরে বিশ্বভারতী কর্মিসভার প্রাক্তন সভাপতি তথা জেলা তৃণমূলের নেতা গগন সরকার বলেন, “বর্তমান কর্তৃপক্ষ বিশ্বভারতীকে রাজনীতির কেন্দ্রে পরিণত করছেন, তার মোকাবিলা রাজনৈতিক ভাবেই করতে হবে।’’ বক্স বাজানো প্রসঙ্গে পরে নলহাটিতে অনুব্রত বলেন, ‘‘ওই রাস্তা বিশ্বভারতীর নয়। আমাদের রাস্তা, আমরা আমাদের জায়গায় বক্স বাজিয়েছি। বিশ্বভারতীর জায়গায় রাজনীতি করিনি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘উপাচার্য বিজেপি-র নেতা। ’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy