Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Sandip Ghosh

মৃতদেহ নিয়ে একের পর এক সভা বিজেপির, মঙ্গলবার বন্‌ধের ডাক গোটা দুর্গাপুরে

রাজ্য বিজেপির নেতারা তো বটেই, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় থেকে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়— প্রত্যেকেরই দাবি, সইফুল নামে তৃণমূল আশ্রিত এক বালি মাফিয়া এই হামলা চালিয়েছে।

বিজেপির বুথ সভাপতি সন্দীপ ঘোষের মরদেহ। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

বিজেপির বুথ সভাপতি সন্দীপ ঘোষের মরদেহ। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:৫৮
Share: Save:

অবরোধ, হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ-বিজেপি ধস্তাধস্তি, মৃতদেহ নিয়ে মিছিল, আসানসোল থেকে কাঁকসা পৌঁছনোর পথে একাধিক বিক্ষোভ সভা, সব শেষে কাঁকসা থানার সামনে ধর্না। বিজেপি কর্মীর হত্যাকাণ্ড ঘিরে সোমবার এ ভাবেই দিনভর উত্তপ্ত রইল পশ্চিম বর্ধমান জেলা। মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টার দুর্গাপুর বন্‌ধের ডাক দিল বিজেপি।

রবিবার রাতে কাঁকসা ব্লকের সরস্বতীগঞ্জে খুন হন বিজেপির বুথ সভাপতি সন্দীপ ঘোষ। তরুণ বিজেপি কর্মী সন্দীপ কলেজ পড়ুয়া ছিলেন। সরস্বতীগঞ্জে বিজেপির বুথ কমিটির সভা শেষ হওয়ার পরেই হামলা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের দাবি, অন্তত ২০ রাউন্ড গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা।

ময়না তদন্তের জন্য সন্দীপের দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আসানসোলে। দেহ নেওয়ার জন্য বিজেপি কর্মীরা হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হন। কিন্তু দীর্ঘ ক্ষণ দেহ ছাড়া হয়নি হাসপাতাল থেকে। সন্দীপের মৃতদেহ নিয়ে বিজেপির বিক্ষোভ মিছিল আটকাতেই পুলিশ দেহ না ছাড়ার কৌশল নিয়েছিল বলে বিজেপির দাবি। আসানসোলে বিজেপি অবরোধও শুরু করে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং দলের রাজ্য সম্পাদক বিজয় ওঝা পৌঁছন আাসনসোলে। হাসপাতাল চত্বরেই পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। বিকেলের দিকে অবশ্য মৃতদেহ ছেড়ে দেয় হাসপাতাল। শববাহী শকটের পিছনে গাড়ি এবং বাইকের মিছিল নিয়ে আসানসোল থেকে কাঁকসার পথে রওনা হন বিজেপি নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন: খুন হওয়া কর্মীর দেহ ছাড়াতে আসানসোলে অবরোধ বিজেপির, উত্তপ্ত পশ্চিম বর্ধমান

আরও পড়ুন: কুয়াশাতেও তীব্র গতি, প্রাণ গেল সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার-সহ দুই বন্ধুর​

আসানসোল থেকে কাঁকসা পৌঁছনোর পথে বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীরা জমায়েত করেছিলেন। দুর্গাপুরের লকগেট এবং মুচিপাড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় মিছিল থামিয়ে বিক্ষোভ সভা করেন সায়ন্তন-লকেটরা। কাঁকসা পৌঁছে স্থানীয় থানার সামনে ধর্নায় বসা হবে বলে বিজেপি নেতারা ঘোষণা করেন।

দুর্গাপুর স্টেশন। সোমবার। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

রবিবার রাতের হামলায় সন্দীপ ঘোষের কানের পাশে গুলি লেগেছিল। দুর্গাপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা সন্দীপকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে আর এক বিজেপি কর্মী গুরুতর চোট নিয়ে চিকিৎসাধীন। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, আরও অন্তত পাঁচ জন জখম হয়েছেন।

এই হামলা তথা হত্যাকাণ্ডের দায় সরাসরি তৃণমূলের উপরেই চাপাচ্ছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির নেতারা তো বটেই, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় থেকে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়— প্রত্যেকেরই দাবি, সইফুল নামে তৃণমূল আশ্রিত এক বালি মাফিয়া এই হামলা চালিয়েছে। বিকেলে নয়াদিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বাবুল সুপ্রিয় আক্রমণ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় একের পর এক রাজনৈতিক খুন হয়ে চলেছে। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কোনও ইচ্ছাই নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের।’’ খুন-জখম কমানোর জন্য যে ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ দরকার হয়, বাংলার শাসক দলের সেটাই নেই বলে বাবুল মন্তব্য করেন।

তৃণমূল খুনের ঘটনায় সংযোগের কথা সম্পূর্ণ নস্যাৎ করছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এই খুনোখুনি হয়েছে। কিন্তু বিজেপি নেতারা বার বারই সইফুলের নাম করে অভিযোগ করছেন। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি তোলা হচ্ছে। সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ায় বিজেপির বিক্ষোভ কর্মসূচির জোরও বেড়ে গিয়েছে।

মঙ্গলবার গোটা দুর্গাপুর মহকুমায় ১২ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। আজ রাতেও জেলার নানা এলাকায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে পথে নামছেন বিজেপি কর্মীরা। বিজেপির ডাকা বন্‌ধকে ঘিরে মঙ্গলবার দুর্গাপুর অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তবে দুর্গাপুর শহর-সহ গোটা মহকুমাতেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করছে পুলিশও।

(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE