Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
হবে জয়
Coronavirus in West Bengal

‘আমার প্লাজ়মায় যদি প্রাণ বাঁচে...’

রোগ নিয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। কিন্তু রোগী কেন একঘরে হবেন? এ লড়াই করোনা-ভ্রান্তি দূর করারওপ্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গবেষক-চিকিৎসকদের একাংশের মতে, ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

অরিজিৎ ঘোষ

অরিজিৎ ঘোষ

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ ০৪:২৩
Share: Save:

একদা আক্রান্তের রক্তরস প্রাণ বাঁচাতে পারে গুরুতর অসুস্থ করোনা রোগীর। এই আর্জি নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীদের কাছে গিয়েছিলেন ‘কনভালসেন্ট প্লাজ়মা থেরাপি’র গবেষকেরা। কিন্তু পরীক্ষামূলক পদ্ধতি সম্পর্কে অমূলক আশঙ্কা, সামাজিক ভীতি ও সংক্রমণের ভয় থেকে বেরোতে পারেননি অনেকেই। ব্যতিক্রমী অরিজিৎ ঘোষেরা। প্লাজ়মা থেরাপি সফল হওয়ার আশা দেখাচ্ছেন তাঁরাই।

স্বাস্থ্য দফতর ও কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের যৌথ উদ্যোগে প্লাজ়মা থেরাপির গবেষণা যে চলছে, তা অজানা ছিল না কার্ডিয়োলজিস্ট অরিজিৎ ঘোষের। তাই গবেষণার প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর তথা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় রক্তরস দানের কথা বললে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান তিনি। শুক্রবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে তাঁর প্লাজ়মা নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গবেষক-চিকিৎসকদের একাংশের মতে, ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। মূলত তিনটি কারণে এই প্রবণতা বলে জানিয়েছেন তাঁরা। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে পাড়া-প্রতিবেশী-পরিচিতদের বৃত্তে একঘরে হওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকের রয়েছে। প্লাজ়মা দানের জন্য আবার হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি পাড়ায় ঢুকলে প্রতিবেশীরা বিষয়টি কী ভাবে নেবেন, তা-ও অনেককে ভাবিয়ে তুলছে। হাসপাতালে গিয়ে প্লাজ়মা দানে সংক্রমণের ভীতিও কাজ করছে কিছু ক্ষেত্রে। ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমানের কথায়, ‘‘প্লাজ়মা দিলে দুর্বল হয়ে পড়বেন কি না, অনেকের সেই ভয়ও রয়েছে। অথচ এ রকম কিছু হওয়ারই আশঙ্কা নেই। এ পর্যন্ত যত জনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের কাছ থেকে সাড়া মিলেছে।’’

আরও পড়ুন: বাস: শহরে সুরাহা, জেলায় ভোগান্তি

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, আক্রান্তের পরে সুস্থ হওয়া অনেক চিকিৎসকও প্লাজ়মা দানের আবেদনে সাড়া দেননি। সেখানেই অরিজিতেরা ব্যতিক্রমী। অরিজিৎ বলেন, ‘‘পুরো প্রক্রিয়াটি রক্তদানের মতোই সহজসরল। উল্টে এর ভাল দিক হল, রক্তরস ছাড়া রক্তের বাকি উপাদানগুলি দাতার শরীরের মধ্যে ফিরে যায়। ফের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও নেই। প্রতিদিন রাজ্যে প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। সংখ্যাটা কম নয়। আমাদের রক্তরসে যদি কারও প্রাণ বাঁচে, এর থেকে ভাল কী হতে পারে!’’ প্লাজমা দিয়েছেন দুই জুনিয়র চিকিৎসক সায়ন্তন চক্রবর্তী এবং অরিজিৎ ভট্টাচার্যও। প্লাজ়মা দিয়েছেন রাজ্যের তৃতীয় আক্রান্ত মনামী বিশ্বাস। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পূর্ত বিভাগের (বিদ্যুৎ) কর্মী সোমনাথ দাস এবং স্টাফ নার্স সায়েরী পাইনও রয়েছেন দাতাদের তালিকায়। বছর ছাপান্নের সোমনাথ দাসের কথায়, ‘‘এতে কোনও শারীরিক অসুবিধা হয় না। আমি তো আগের মতোই পরিশ্রম করছি। কারও উপকারে আসতে পেরেছি ভেবে ভাল লাগছে।’’

আরও পড়ুন: লকডাউন: যেখানে যেমন অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নিদান?

এই ভীতির জন্য সচেতনতার অভাব একটি বড় কারণ বলে মনে করেন ক্লিনিকাল ট্রায়াল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সম্মানিত শিক্ষক জানান, কোভিড সংক্রমণের পরে এ দেশে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের নানা দিক নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হচ্ছে তা আগে হয়নি। বিদেশের তুলনায় দেশের মানুষের মধ্যে এ ধরনের গবেষণা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এ ধরনের গবেষণার জন্য এগিয়ে আসার কথা বললে সাধারণ মানুষের একাংশ নিজেদের গিনিপিগ ভাবতে শুরু করেন। রোগীর নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার জন্য দেশে এখন বেশ কড়া আইন রয়েছে। এথিক্স কমিটির অনুমোদনেও কড়াকড়ি করা হয়েছে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মাধ্যমে সমাজ কী ভাবে উপকৃত হয়, তা নিয়ে নিয়মিত প্রচার করা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE