করোনা ত্রাস: পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ছবি: পিটিআই।
বাংলায় আক্রান্তের খবর এখনও নেই। কিন্তু করোনা-ত্রাসে ‘গৃহ-পর্যবেক্ষণে’ থাকা ব্যক্তির তালিকা শনৈ শনৈ বাড়ছে। শুক্রবার গৃহ-পর্যবেক্ষণে ছিলেন মাত্র ১১৮ জন। শনিবার সংখ্যাটা বেড়ে হয় ১২৬৭। রবিবার আরও ২৩৯০ জনের নাম সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টায় করোনা-কবলিত দেশ থেকে আসা ৩৬৫৭ জনকে গৃহ-পর্যবেক্ষণের তালিকায় এনেছে স্বাস্থ্য দফতর!
করোনা প্রভাবিত সাতটি দেশ (চিন, কোরিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইটালি, ইরান) থেকে আসা যাত্রীদের কোয়রান্টিনে রাখার জন্য শুক্রবার রাতে নির্দেশিকা দেওয়া হয়। সেই অনুসারে রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের (সিএনসিআই) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে এ রাজ্যে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়ার পরেই করোনা-কবলিত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের উপরে নজরদারি বাড়ে। শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিনে নতুন করে ১১৮ জনকে গৃহ-পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানানো হয়েছিল। শনিবার তাতে যুক্ত হয় ১২৬৭ জনের নাম। আর এ দিন সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। আজ, সোমবার করোনা নিয়ে নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে ভিডিও-সম্মেলনে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকেরাও থাকবেন।
হোম কোয়রান্টিন*
• পর্যাপ্ত আলো-বাতাসময় ঘর। সঙ্গে শৌচালয়। পর্যবেক্ষণাধীন ব্যক্তিকে একা ঘরে রাখা যাবে না। অন্তত এক মিটার দূরত্বে আরও এক জন থাকতে পারেন। ঘরে হাঁটাচলায় নিয়ন্ত্রণ।
• বয়স্ক মানুষ, শিশু, গর্ভবতী বা কারও ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি থাকলে দূরত্ব বজায় রাখুন।
• সামাজিক অনুষ্ঠান যাওয়া বারণ।
• পর্যবেক্ষণাধীন ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিস ছোঁবেন না।
• সব সময় মুখোশ। ৬-৮ ঘণ্টা অন্তর তা বদলে ফেলুন। ব্যবহৃত মুখোশ নির্দিষ্ট রাসায়নিকে চুবিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
• পর্যবেক্ষণাধীন ব্যক্তির যত্ন নিন পরিবারের যে-কোনও এক জন। পরিচ্ছন্ন গ্লাভস পরে কাজ করুন। কাজ শেষে ভাল করে হাত ধুতে হবে।
• পর্যবেক্ষণাধীন ব্যক্তির বিছানা, টেবিল প্রতিদিন এক শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশনে পরিষ্কার করতে হবে।
• ব্লিচিং-ফিনাইল দিয়ে রোজ শৌচালয় সাফাই।
• কোয়রান্টিনে থাকা ব্যক্তি আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যেরা চলে যাবেন হোম কোয়রান্টিনে।
*কোয়রান্টিন শব্দটা এসেছে ইটালিয়ান Quarantina থেকে। যার অর্থ, চল্লিশ দিন। ইউরোপে প্লেগের সময় জাহাজ বন্দরে এলে চল্লিশ দিন তাকে আলাদা করে রাখা হত। সেখান থেকেই শব্দটির উৎপত্তি।
এক লাফে সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ জানান, কেন্দ্রের তরফে প্রতিদিন দেশের সব বিমানবন্দরে ক’জন যাত্রী নেমেছেন, তার তালিকা পাঠানো হয়। তাতে করোনা-যোগে প্রতিদিন গড়ে সারা দেশের ১৭ হাজার যাত্রীর নাম থাকে। তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ক’জন, ঠিকানা দেখে তা বার করতে হয়। লোকবলের অভাবে নাম বাছাইয়ের কাজ শ্লথ হয়ে গিয়েছিল। শনিবার রীতিমতো দল গড়ে নাম বাছাইয়ের কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য ভবন। ইতিমধ্যে সেই তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতেও পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, কাদের গৃহ-পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, সেই সংজ্ঞা প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। তাই সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সিউড়ির যে-বাসিন্দাকে ঘিরে টানাপড়েন চলছিল, তাঁর শরীরে করোনা-লক্ষণ মেলেনি।
রাজ্যের ছবি
আইসোলেশন ওয়ার্ডে
• বেলেঘাটা আইডি: ১১
• ফালাকাটা হাসপাতাল: ২
কোয়রান্টিন কেন্দ্রে
• রাজারহাট: ১
হোম কোয়রান্টিনে
• হাওড়া: ১৩০
• পূর্ব মেদিনীপুর: ৪২
• পশ্চিম মেদিনীপুর: ১২
• বীরভূম: ১৬
• পুরুলিয়া: ২
• পূর্ব বর্ধমান: ৩৮
• পশ্চিম বর্ধমান: ৪১
নজরদারিতে
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ৭০
বিমানবন্দরে কোয়রান্টিন হেল্প ডেস্ক খুলেছে রাজ্য সরকার। তিন শিফটে আগামী সাত দিন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের পরিষেবা দিতে স্বাস্থ্য দফতরের ৪২ জন কর্মীকে যুক্ত করা হয়েছে সেখানে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, রাজারহাটের কোয়রান্টিনে (ক্যানসার হাসপাতালের পাঁচতলায়) ফ্রান্স-ফেরত ৬৪ বছরের এক বৃদ্ধ পর্যবেক্ষণে আছেন। ফ্রান্স-যোগের পাশাপাশি তাঁর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তাই তাঁকে আপাতত ১৪ দিন কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। শনিবার রাতে বৃদ্ধ সেখানে ঢোকার পরে নবনির্মিত ক্যানসার হাসপাতালের রক্ষীরা আতঙ্কে ছিলেন। স্বাস্থ্য
দফতরের উদ্যোগে এ দিন তাঁদের আতঙ্ক অনেকটা কেটেছে। শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, বৃদ্ধকে যেখানে রাখা হয়েছে, সেখানে বাগান রয়েছে। এক ঝলক দেখলে বিলাসবহুল হোটেল বলে ভ্রম হতে পারে। কোয়রান্টিনের একমাত্র বাসিন্দার নিঃসঙ্গতা কাটাতে ইন্টারনেট, টিভি-র ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এ দিন ১৩ জন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন তিন জন। তাঁরা সকলেই কলকাতার। দুবাইয়ের এক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় ২৩ বছরের এক যুবককে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সুইৎজারল্যান্ড, ইটালি ও নেপাল-যোগে যে-তিন জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, সকলেরই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। ওই তিন জনও কলকাতার বাসিন্দা। এ ছাড়া আরও যে-সাত জন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন, তাঁদের লালারসের নমুনা পাঠানোর প্রয়োজন নেই বলে জানান চিকিৎসকেরা। আজ, সোমবার তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy