কফিনবন্দি: বাড়িতে ফিরল নিহত জওয়ান প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের দেহ। শনিবার তেহট্টে। নিজস্ব চিত্র
শেষ বারের মতো বাবার স্পর্শ পেল এক মাসের ফুটফুটে ছেলে। তবে এ বার বাবা ফিরেছে কফিনবন্দি হয়ে। তাই চুল্লিতে ঢোকার আগে বাবার গায়ে সন্তানকে ছুঁইয়ে আদর করিয়ে নেন শ্মশানে আসা জওয়ানের স্ত্রী।
শনিবার সকালে কাশ্মীরে মৃত বিএসএফ জওয়ান প্রসেনজিতের দেহ হোগলবেড়িয়ার বাড়িতে এসে পৌঁছোয়। দেহ আসার খবর শুনে তাঁর বাড়িতে হাজির হয়েছিল এলাকার প্রায় হাজার খানেক মানুষ। শুধু পরিবার আর আত্মীয়-স্বজনই নন, দেশের জন্য শহিদ হওয়ার মানুষটির মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকার মানুষও।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জম্মু ও কাশ্মীরে সুন্দরবনি সেক্টরে পাক সেনার গুলিতে মৃত্যু হয় বিএসএফ জওয়ান প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের (২৭)। সে দিন সন্ধেয় তাঁর মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছোয় নদিয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের হোগলবেড়িয়ার বালিয়াশিশা গ্রামে।
প্রসেনজিতের ছেলে প্রীতম।
বছরখানেক আগে বিয়ে হয় ওই জওয়ানের। তাঁদের এক মাসের একটি সন্তান রয়েছে। গত মাসেই দুধের শিশুকে দেখে ফিরে গিয়েছিলেন কর্মস্থলে। তাঁর স্ত্রী সুমনা স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব দশা পরিবারের বাকিদেরও। শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছোয় গ্রামের বাড়িতে।
আরও পড়ুন: বিরল রোগাক্রান্ত শিশুর ওষুধের খরচ দেয় না রাজ্য, পুজোয় ক্লাবগুলো পায় ২৮ কোটি টাকা!
এ দিন প্রসেনজিতের দেহ বাড়িতে এসে পৌঁছলে কাঁদতে কাঁদতে বার বার জ্ঞান হারান মা নন্দরানি। মৃতদেহের সঙ্গে আসা বিএসএফ জওয়ানেরা প্রসেনজিতের এক মাসের শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। মরদেহ ঘণ্টা দুয়েক বাড়িতে থাকার পর পাট্টাবুকা শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে দাহ করা হয়। দাহকার্যের আগে বিএসএফের পক্ষ থেকে নিহত জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় গান স্যালুট দিয়ে।
আরও পড়ুন: তানজানিয়া থেকে ফিরেও স্বস্তি মিলছে কই!
এ দিন গ্রামের শ্মশানে শহিদ জওয়ানকে এক বার চোখের দেখা দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিলেন। চোখের জলে তাঁরা বিদায় জানান প্রসেনজিৎকে। বিকেল ৩টে নাগাদ দাহ সম্পন্ন হয়।
শ্মশানে এসেছিলেন পাড়ার রবি বিশ্বাস, তপন রায়, সুমন মণ্ডলেরা। তাঁরা জানান, প্রসেনজিৎ খুব ভাল মানুষ ছিল। খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করে বিএসএফ-এ চাকরিতে ঢুকেছিলেন। প্রসেনজিৎ ছুটিতে বাড়ি এলেই পাড়ার সব বাড়ি ঘুরে ঘুরে সকলের খোঁজ নিতেন, সকলের সঙ্গে কথা বলতেন।
তপন বলেন, ‘‘এই ভাবে ওকে গুলি খেয়ে মরতে হবে, ভাবতে পারিনি! এক বছর আগেই বিয়ে করল। এর মধ্যেই সব শেষ হয়ে গেল!’’
সে সময় হোগলবেড়িয়ার বাড়িতে বাবার-মায়ের বিয়ের ছবির সামনে হাত-পা ছুড়ে খেলে চলেছে এক মাসের শিশুটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy